শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সবুরে মেওয়া ফলে

তানভীর সাকী ভূঁইয়া | প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

তাফসীরে বায়জাবিতে সবরের তিনটি প্রকারের কথা উল্লেখ রয়েছে। যথা- ১) ‘সবর আনিল মাসিয়াত’, অর্থাৎ অন্যায়-অপরাধ হতে বিরত থাকা। ২) ‘সবর আলাত তআত’, অর্থাৎ ইবাদত আল্লাহর আনুগত্য ও সৎকর্মে কষ্ট স্বীকার করা। ৩) ‘সবর আলাল মুসিবাত’, অর্থাৎ বিপদে অধৈর্য না হওয়া। মহান আল্লাহ পরীক্ষার নেওয়ার পাশাপাশি পরীক্ষায় পাসের সাজেশনও পবিত্র কোরআনে বলে দিয়েছেন।

বলেন, ‘হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।’ (সূরা বাকারা, আয়াত: ১৫৩)। তাই তো আমরা বিপদাপদে আপতিত হলে নামাজ ও সবরের দারস্থ হই ও এই দুয়া পড়ি, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ (নিশ্চয় আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে আমরা তাঁর নিকটেই প্রত্যাবর্তনকারী)। ধৈর্যশীলদের পুরস্কার সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘ধৈর্যশীলদেরকে তো অপরিমিত পুরস্কার দেওয়া হবে।’ (সূরা যুমার, আয়াত:১০)।

অন্য এক আয়াতে মহান আল্লাহ ধৈর্যশীলদের জান্নাত উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে ইরশাদ করেন, ‘যারা তাদের রবের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ধৈর্য ধারণ করে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদের যে রিজিক প্রদান করেছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং ভালো কাজের মাধ্যমে মন্দকে দূর করে, তাদের জন্যই রয়েছে আখেরাতের শুভ পরিণাম। স্থায়ী জান্নাতগুলো, যাতে তারা এবং তাদের পিতৃপুরুষরা, তাদের স্ত্রীরা ও তাদের সন্তানদের মধ্যে যারা সৎ ছিল তারা প্রবেশ করবে। আর ফেরেশতারা প্রতিটি দরজা দিয়ে তাদের কাছে প্রবেশ করবে। (আর বলবে) শান্তি তোমাদের ওপর, কারণ তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছ, আর আখিরাতের এ পরিণাম কতই না উত্তম।’ (সূরা রাদ, আয়াত : ২২-২৪)।

ধৈর্যশীলতা মুমিন বান্দার ভ‚ষণ, কল্যাণকর একটি গুণ। সফলতার চাবিকাঠি। যাদের আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা আছে, তারা কখনো কোনো পরিস্থিতিতে বিচলিত হন না। বরং আল্লাহর ওপর ভরসা করে পরিস্থিতি বুঝে তা মোকাবিলা করেন। হযরত আলী রা. একদা এক মল্লো যুদ্ধে এক ইহুদিকে পরাস্ত করে তার ওপর উঠে বসলেন ঘায়েল করার জন্য। ঠিক তখনই সেই চতুর ইহুদি হযরত আলী রা.-এর মুখে থুথু নিক্ষেপ করে তাঁকে আরো উত্তেজিত করে তোলে।

কিন্তু আশয়ারে মুবাশশারাদের অন্যতম, শের-এ খোদা হযরত আলী (রা.) তৎক্ষণাৎ ওই ইহুদিকে ছেড়ে দেন। এবং তাঁর ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করেন। জিজ্ঞাসিত হলে হযরত আলী (রা.) বলেন, এতক্ষণ আমার যুদ্ধ ছিলো আল্লাহর জন্য, ইকামাতে দ্বীনের জন্য। কিন্তু এখন এই ক্রোধ, এই আক্রোশ আমার নিজের জন্য। তাই ক্রোধান্বিত হয়ে যদি তোমাকে এখন মেরে ফেলি তবে সেটা হবে হারাম। তাই নিজেকে সংবরণ করলাম। আর এটাই হলো ইসলামের সৌন্দর্য, প্রিয় নবীজীর তালীম। হাদিসে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লোককে কুস্তিতে হারিয়ে দেয় সে বাহাদুর নয়। বরং প্রকৃতপক্ষে বাহাদুর সেই ব্যক্তি যে রাগের মুহূর্তে নিজেকে সামলাতে পারে।’ (বুখারী, মুসলিম)।

আজ আমরা শর্টকাটের মোহে বুঁদ হয়ে আছি। সব কাজেই আমাদের অস্থিরতা আর হায়-হুতাশ। পরিশ্রম আর অধ্যাবসায় শব্দ-দু’খান এখন কেবল বক্তৃতা আর বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ। বাস্তব জীবনে এর দেখা মেলা ভার। বাংলা ভাষায় প্রচলিত একটি মশহুর বাগধারা আছে, ‘সবুরে মেওয়া ফলে’ যার অর্থ- অপেক্ষার ফল সুমিষ্ট হয় বা ধৈর্যের মাধ্যমে যা অর্জিত, তা খুবই সুখের। ইতিহাসের সফল ব্যক্তিদের জীবন পর্যালোচনা করলেও এটা স্পষ্ট হয় যে, তাদের বিজয়ের পেছনে ‘ধৈর্য শক্তি’ সবচেয়ে নিয়ামক ভূমিকা রেখেছে।

যাদের ধৈর্য শক্তি নেই, তারা সামান্য বিপদেও ভেঙে পড়েন। কিন্তু ধৈর্যশীলরা ‘একবারে না হলে আরেকবার চেষ্টা কর’ নীতিতে বিশ্বাস করেন। মার্কিন বিজ্ঞানী টমাস এডিসন ‘বৈদ্যুতিক বাতি’ তৈরির জন্য ধৈর্যের সঙ্গে বারংবার চেষ্টা চালিয়ে সফল হন। রাশিয়ান লেখক লিও টলস্টয় বলেন, ‘ধৈর্য হলো জগতের সবচেয়ে শক্তিমান যোদ্ধা’।
ইতিহাসের বলে, প্রবল বাতাসের মুখে এক মাকড়সার শত বার চেষ্টা করার পর জাল বোনা দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৩১৪ সালে রবার্ট ব্রুস ‘বানুকবার্নের যুদ্ধ’ বিজয় করেন। তাই, সফল হতে হলে অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই।

সুতরাং, প্রকৃত আশরাফুল মাখলুকাত হওয়ার জন্য আমাদের প্রধান কর্তব্য হলো- ধৈর্যশীলতার এই মহৎ গুণ অর্জনে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া। আল্লাহ তা›আলা আমাদের বিপদাপদে কেবল তাঁরই ওপর আস্থা রেখে ধৈর্য ধারণ করার তাওফিক দান করুন। আমীন।।
‘ক্ষমা করো, ধৈর্য ধরো,
হউক সুন্দরতর
বিদায়ের ক্ষণ।
মৃত্যু নয়, ধ্বংস নয়,
নহে বিচ্ছেদের ভয়
শুধু সমাপন’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
মনিরুল ইসলাম ৮ আগস্ট, ২০২১, ১:০০ এএম says : 0
মানব চরিত্রের উত্তম গুণাবলির অন্যতম হলো ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা। পবিত্র কোরআনে স্থানে স্থানে মহান আল্লাহ নিজেকে ধৈর্যশীল ও পরম সহিষ্ণু হিসেবে পরিচয় প্রদান করেছেন।
Total Reply(0)
হাদী উজ্জামান ৮ আগস্ট, ২০২১, ১:০০ এএম says : 0
ধৈর্য ধারণকারীর সাফল্য সুনিশ্চিত, কারণ আল্লাহ তাআলা ধৈর্য ধারণকারীর সঙ্গে থাকেন; আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যার সঙ্গে থাকবেন, তার সফলতা অবধারিত।
Total Reply(0)
হাফেজ মাওলানা নূরুল হক ৮ আগস্ট, ২০২১, ১:০১ এএম says : 0
আমরা সাধারণত বিপদ-আপদ ও বালা-মুসিবতে বিচলিত না হওয়াকেই ধৈর্য বলে মনে করি। মূলত ধৈর্য অনেক ব্যাপক অর্থ ধারণ করে। ধৈর্য তিন প্রকার। যথা: ‘ছবর আনিল মাছিয়াত’ অর্থাৎ অন্যায়–অপরাধ হতে বিরত থাকা। ‘ছবর আলাত তআত’, অর্থাৎ ইবাদত আল্লাহর আনুগত্য ও সৎকর্মে কষ্ট স্বীকার করা। ‘ছবর আলাল মুছিবাত’, অর্থাৎ বিপদে অধীর না হওয়া। (তাফসিরে বায়জাবি)।
Total Reply(0)
নুর নাহার আক্তার নিহার ৮ আগস্ট, ২০২১, ১:০২ এএম says : 0
ধৈর্য মুমিনের ভূষণ। উত্তম চরিত্রের বিশেষ গুণ। সফলতার চাবিকাঠি।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ৮ আগস্ট, ২০২১, ১:০২ এএম says : 0
যাঁদের আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা আছে, তাঁরা কোনো পরিস্থিতিতে বিচলিত হন না। বরং আল্লাহর ওপর ভরসা করে পরিস্থিতি বুঝে তা মোকাবেলা করেন।
Total Reply(0)
সাইফ আহমেদ ৮ আগস্ট, ২০২১, ১:০২ এএম says : 0
দুনিয়ায় কোনো কিছু না পেলে বা কোনো বিপদে পড়লে ধৈর্যহারা না হয়ে মহান আল্লাহর সাহায্য চাওয়া উচিত।
Total Reply(0)
Al Helal ৮ আগস্ট, ২০২১, ৭:৩৫ এএম says : 0
ধৈর্য্য ধরলে ফল হয় মিষ্টি, ধৈর্য্য হারালে ফল হয় টক।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ আব্দুছ ছালাম ভূঁইয়া ৮ আগস্ট, ২০২১, ১১:৩২ এএম says : 0
মাশাআল্লাহ,বারাকাল্লাহ
Total Reply(0)
সাহাবউদ্দিন চৌধুরী ৮ আগস্ট, ২০২১, ৩:৫১ পিএম says : 0
মানব চরিত্রের সবচেয়ে ভালো গুন হলো ধৈর্য ধারণ করা। আল্লাহ আমাদের সকল কে ধৈর্য ধারণ করার তৌফিক দান করুন।
Total Reply(0)
MD.SABBIR HOSSAIN ৮ আগস্ট, ২০২১, ৮:২০ পিএম says : 0
প্রকৃত আশরাফুল মাখলুকাত হওয়ার জন্য আমাদের প্রধান কর্তব্য হলো- ধৈর্যশীলতার এই মহৎ গুণ অর্জনে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া। আল্লাহ তা›আলা আমাদের বিপদাপদে কেবল তাঁরই ওপর আস্থা রেখে ধৈর্য ধারণ করার তাওফিক দান করুন। আমীন।।
Total Reply(0)
Ruman ১ জানুয়ারি, ২০২২, ৯:১০ পিএম says : 0
আলোচনাটি অনেক সুন্দর লাগলো। ধৈর্য কি জিনিস তা বুঝতে পারলাম। ধন্যবাদ আলোচনাটি শেয়ার করার জন্য।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন