মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর কোরবানি

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ১৮ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

পৃথিবীর ইতিহাসে কারবালা হত্যাকান্ডের মতো নির্মম ও জঘন্য হৃদয়বিদারক রক্তপাত হওয়ার নজির খুঁজে পাওয়া যায় না। কেন যায় না এবং কি জন্য যায় না, আসুন, এবার তার তত্ত¡ ও মর্ম উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। সকল অবস্থায় আল্লাহপাকই আমাদের সহায়।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, নবী করিম (সা.) হিজরি একাদশ সালের ১২ রবিউল আউয়াল ইন্তেকাল করেন। দুনিয়া হতে পর্দা করার পূর্বে তিনি মসজিদে নববীর মিম্বরে বসে ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমার ইন্তেকালের পর ‘খিলাফাতুন আলা মিনহাজিন নবুওয়াত’ অর্থাৎ নবুওয়াতের প্রশাসনিক রূপরেখা অনুসারে প্রতিনিধিত্বসুলভ শাসনব্যবস্থা ত্রিশ বছর যাবত অব্যাহত থাকবে। তারপর এই শাসনব্যবস্থা ‘আমারত’ অর্থাৎ রাজতন্ত্রের রূপ পরিগ্রহ করবে।’ এই ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতা সাধিত হয়েছিল সাইয়্যেদেনা হযরত ইমাম হাসান (রা.)-এর খলীফার পদ পরিত্যাগের মাধ্যমে। যার মূলে ছিল কুটিল ষড়যন্ত্রের এক অন্ধকার প্রতিচ্ছায়া।

এই সুবাদে হযরত মুয়াবিয়া (রা.) খলীফা পদে সমাসীন হন এবং নিজেকে ‘আমীর’ উপাধিতে বিভ‚ষিত করেন। এতেকরে ‘খিলাফাতুন আলা মিনহাজিন নবুওয়াত’-এর পরিসমাপ্তি ঘটে। এই বিষয়টি আরো প্রকট রূপ ধারণ করে হযরত মুয়াবিয়া (রা.) কর্তৃক স্বীয় পুত্র এজিদকে খলীফা বলে ঘোষণার মাধ্যমে। এতসব ষড়যন্ত্র ও দুনিয়ালোভী কার্যক্রম সাইয়্যেদেনা হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)-কে ব্যথিত ও মর্মাহত করে তুলেছিল। তিনি মনে-প্রাণে খিলাফাতুন আলা মিনহাজিন নবুওয়াতকে পুন:প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন এবং সত্য, ন্যায় ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন।

তাই তিনি অগণতান্ত্রিকভাবে ঘোষিত খলীফা এজিদের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করাকে ঘৃণাভরে বর্জন করেছিলেন। তার এই দৃঢ় প্রত্যয় সম্ভূত ন্যায় ও কল্যাণবহ আকুতি প্রকাশ পেয়েছিল স্বীয় স্বজনদের অনুরোধের উত্তরে। তিনি দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, যে খেলাফত নবুওয়াতের ক্রমধারাপুষ্ট ব্যবস্থার বিপরীত, তা আমি এবং আমরা মেনে নিতে পারি না। এর জন্য যে কোনো পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে আমরা প্রস্তুত। কেননা, আমরা আল্লাহর অনুগত বান্দাহ এবং বিশ্বনবী মোহাম্মাদ (সা.)-এর নবুওয়াত ও রিসালাতের প্রতি একান্তই বিশ্বাসী এবং শ্রদ্ধাশীল। এর ব্যতিক্রম কোনো কিছু আমরা কখনোই মেনে নেব না।

কারবালা ময়দানে যুদ্ধের পূর্বক্ষণে তিনি এজিদপক্ষীয় সৈন্য ও কুফাবাসীদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন, আমি কে তা আপনাদের অজানা নয়। আমি পরকালে জান্নাতি যুবকদের সর্দাররূপে বরিত হব। আমাকে কুফা আগমনের জন্য আপনারাই বহু আমন্ত্রণপত্র প্রেরণ করেছিলেন। কিন্তু আজ আপনারা এসব কথা বেমালুম ভুলে গেছেন কেন? এই কেন এর সদুত্তর প্রতিপক্ষের দিক থেকে উচ্চারিত হয়নি। বরং তারা তীর নিক্ষেপের মাধ্যমে সত্যোজ্জ্বল কিরণ ধারাকে নির্বাপিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, যা কালের খাতায়, ইতিহাসের পাতায় কলঙ্ক-কালিমার পঙ্কিল আবর্তে চিরকাল ঘুরপাক খেতে থাকবে।

বস্তুত সাইয়্যেদেনা হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) খিলাফাতুন আলা মিনহাজিন নবুওয়াতকে চির উন্নত ও চির প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই ধূসর কারবালার তপ্ত মরুর দাবদাহ ও ক্ষুৎপিপাসার জ্বালা সহ্য করে আল্লাহর রাস্তায় জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি জানতেন, এই পথে বুকের রক্ত অকাতরে বিলিয়ে যে দিতে পারে, সে-ই পরকালে কামিয়াবী ও সফলতা লাভে ধন্য হবে এবং আল্লাহ পাকের কুরবত ও নৈকট্যের শামিয়ানার নিচে আশ্রয় গ্রহণের সুযোগ লাভ করবে। এর কোনো অন্যথা হবে না।

আমরা এ-ও জানি যে, খিলাফাতুন আলা মিনহাজিন নবুওয়াত অবশ্যই দুনিয়াতে পুন:প্রতিষ্ঠিত হবে। এই খিলাফতের ঘোষণা পবিত্র কাবা গৃহের ছাদে দাঁড়িয়ে হযরত জিব্রাঈল (আ.) প্রদান করবেন। তিনি বলবেন, ‘হাজা খালিফাতুল্লাহিল মাহদিয়্যি, ফাআবিহু ওয়াত্তাবিয়ূহু’ অর্থাৎ তিনিই হচ্ছেন, আল্লাহর খলীফা মাহদি আ.। তোমরা তার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করো। চলতি হিজরি ১৪৪৩ সালের পৈঠায় দাঁড়িয়ে আমরা এর প্রতীক্ষার প্রহর গুনে চলেছি। জানি না, সেই মধুময় ক্ষণ আমাদের জীবনে দেখা দেবে কি না। তবুও ‘আশায় মোরা বাঁধছি বাসা মর্তবাসী ক্ষুদ্র নর।’ আল্লাহপাক আমাদের সহায় হোন। আমীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
সফিক আহমেদ ১৮ আগস্ট, ২০২১, ৩:৪৭ এএম says : 0
খাতামান্নাবীঈন হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র, চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.) ও হজরত ফাতেমা (রা.)-এর পুত্র, হজরত ইমাম হোসেন (রা.) অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে চক্রান্তকারী ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে এই পবিত্র মহররম মাসের ১০ তারিখে নির্মমভাবে কারবালার প্রান্তরে শাহাদাত বরণ করেন। সেদিন প্রকৃত ইসলাম ও সত্যের জন্য হজরত ইমাম হোসেন (রা.) ইয়াজিদ বাহিনীর কাছে মাথা নত না করে যুদ্ধ করে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। হজরত ইমাম হোসেন (রা.) সেদিন ন্যায় ও সত্যের জন্য চরম আত্মত্যাগের যে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা অনুকরণীয়।
Total Reply(0)
নাবিল আব্দুল্লাহ ১৮ আগস্ট, ২০২১, ৩:৪৮ এএম says : 0
হজরত ইমাম হোসেন (রা.)-এর কারবালা প্রান্তরে শাহাদাতবরণ ইসলামের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। সত্য, ন্যায় এবং নবুয়তের পদ্ধতিতে আল্লাহর জমিনে সত্যিকারের ইসলামী খিলাফত পুনঃপ্রবর্তনের লক্ষ্যে হজরত ইমাম হোসেন (রা.) ও তাঁর সঙ্গী-সাথিরা যে ত্যাগ ও কোরবানি স্বীকার করেছেন, কিয়ামত পর্যন্ত তা আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। সত্যের পথে এবং অসত্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের তা জোগাবে হিম্মত ও প্রেরণা। শুধু একটি দিন তাঁকে স্মরণ করার মাধ্যমে কোনো লাভ নেই। বরং তাঁর আদর্শ অনুসরণ করার বিষয়।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ১৮ আগস্ট, ২০২১, ৩:৪৯ এএম says : 0
ইমাম হোসেনের ত্যাগ, কোরবানি আমাদের জন্য অনেক শিক্ষা রেখে গেছেন। নিজের অধিকার নিজের জীবন বাজি রেখে পৃথিবীতে সত্যের প্রসার করেছেন, সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। হজরত ইমাম হোসেন (রা.) সত্য প্রচারের যে আদর্শ রেখে গেছেন তা সব সময় আমাদের আঁকড়ে ধরে রাখতে হবে।
Total Reply(0)
আবদুল মান্নান ১৮ আগস্ট, ২০২১, ৩:৫২ এএম says : 0
১০ মহররম কারবালা প্রান্তরে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এ দিনে শাহাদাৎ বরণ করেছিলেন। আর এর মাধ্যমে আমরা মিথ্যার বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও ত্যাগের মহান শিক্ষা পাই
Total Reply(0)
সাঈদ আহমাদ ১৮ আগস্ট, ২০২১, ৬:২০ পিএম says : 0
সত্য দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্যে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাতি আমাদের প্রাণপ্রিয় হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এই মুহাররম মাসের ১০ তারিখে পবিত্র আশুরার দিনে জালিম শাসক ইয়াজীদের অবৈধ সরকারী কর্মকান্ড ও ফাসেকীর প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে কারবালার ময়দানে ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করে মুসলিম জাহানকে চোখের জলে ভাসিয়ে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন। উনার ছোট্ট ছেলে হযরত আলী আজগর (রা.)-কেও সামান্য পানির জন্যে শত্রুদের হাতে শাহাদাত বরণ করতে হয়। এরকম নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতা ইতিহাসে বিরল। হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে নিজের প্রাণ উৎসর্গ করে যুগ যুগ ধরে মুসলিম উম্মাহর জন্যে এক অবিস্মরণীয় ও অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন।
Total Reply(0)
Md. Mamunur Rashid ২০ আগস্ট, ২০২১, ৪:৩৬ এএম says : 0
মহান আল্লাহতাআলা ইমাম হোসেন রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুর সাথে আমাদের কেও যেন কবুল করে নেন।আমিন!
Total Reply(0)
Md. Mamunur Rashid ২০ আগস্ট, ২০২১, ৪:৩৭ এএম says : 0
মহান আল্লাহতাআলা ইমাম হোসেন রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুর সাথে আমাদের কেও যেন কবুল করে নেন।আমিন!
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন