একদা হযরত ঈসা (আ.) সফরে বের হলেন। সঙ্গে আহারের জন্য নিলেন তিনখানা রুটি। একটি লোভী লোক অনুমতি নিয়ে তার সফরসঙ্গী হলো। ক্ষানিকটা পথ চলার পর ক্ষুধা পেলে তিনি রুটিগুলোর পোটলাটি লোকটির কাছে দিয়ে অজু করতে গেলেন। ফিরে এসে পোটলাটি চাইলেন। খুলে দেখলেন রুটি আছে ২ খানা।
তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, রুটি তো তিনখানা ছিল, তুমি কি একখানা খেয়েছ? লোকটি বলল, না হুজুর আমি খাইনি। খাবার শেষে তারা আবার পথ চললেন। বনের মধ্যে হরিণ পাল চলতে দেখে হযরত ঈসা (আ.) একটি হরিণ শাবককে ডাকলেন। সেটি এলে তাকে জবেহ করলেন, তার গোশত ভূনা করলেন এবং লোকটিকে নিয়ে খেলেন আর বললেন, হাড় চিবুবে না, জমা করে রাখবে। খাবার শেষে হাড়ে ‘কুম-বি-ইজনিল্লাহ’ বলে ফুঁ দিলেন। হরিণ শাবকটি জিন্দা হয়ে খুশিতে বনে চলে গেল।
ঈসা (আ.) বললেন, যে আল্লাহ উচ্ছিষ্ট হাড়কে আবার জিন্দা হরিণে রূপান্তরিত করলেন। তাঁর কসম- তুমি ঐ রুটিখানা খেয়েছ কি না? লোকটি কসম কেটে বলল, না হুজুর ! আমি তো মাত্র একখানা রুটি খেয়েছি। আরো কিছু পথ অগ্রসর হয়ে একটি খরস্রোতা নদীর পাড়ে পৌঁছলেন এবং পানিতে নেমে লোকটির হাত ধরে পানির উপর দিয়ে অপর পাড়ে গিয়ে বললেন, যে আল্লাহ আমাদের পানির উপর দিয়ে হেঁটে এ পাড়ে নিয়ে এলেন তাঁর কসম দিয়ে বলছি, তুমি কি রুটিখানা খেয়েছ? লোকটি কসম কেটে বলল, না হুজুর! আমি খাইনি।
এরপর চলতে চলতে এক বনভূমিতে পৌঁছলেন এবং লোকটিকে একটি বালুর স্ত‚পের দিকে ইশারা করে বললেন, ওখান থেকে কিছু বালু নিয়ে এসো। সে বালু নিয়ে এলে ঈসা আ. তা তিনটি ভাগে ভাগ করে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ফুঁ দিলেন, সঙ্গে সঙ্গে বালুগুলো তিনটি স্বর্ণের ইটে পরিণত হলো। হযরত ঈসা (আ.) বললেন, যে যতখানা রুটি খেয়েছে সে ততখানা ইট পাবে। লোকটি এবার বলল, হুজুর মাফ করবেন, আমিই সে রুটিখানা খেয়েছি। আমি খেয়েছি দুইখানা রুটি। সুতরাং আমি পাব দু’খানা ইট। ঈসা (আ.) মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, আমার ইটখানাও তোমাকে দিলাম। তিনখানাই তোমার। নিয়ে যাও তবে মনে রেখ লোভ করবে না। লোভের পরিণতি খারাপ! ঈসা (আ.) এই বলে সামনে চললেন।
কিন্তু লোকটি আর তাঁর সাথে গেল না। স্বর্ণের ইট নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলো। ইত্যবসরে দু’জন ডাকাত এসে তার কাছ থেকে ইট নিয়ে নিতে চেষ্টা করল। ধস্তাধস্তি শুরু হলে ডাকাতরা রণে ভঙ্গ দিয়ে বলল, লড়াইতে কাজ নেই, তিনখানা ইট আমরা তিনজনে একখানা একখানা করে নেব। তবে তুমিও ক্ষুধার্ত আমরাও ক্ষুধার্ত। আমাদের একজন গিয়ে বাজার থেকে কিছু খাবার নিয়ে আসুক। খেয়ে দেয়ে তারপর যার যার ইট নিয়ে চলে যাই। সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডাকাতদের একজন বাজারে গিয়ে খাবার কিনে খেল।
আর কিছু খাবারে বিষ মিশিয়ে নিয়ে চলল, যাতে ঐ খাবার খেয়ে বাকি দু’জন মারা যায় আর তিনখানা ইট সে নিয়ে যেতে পারে। এ দিকে বাকি দু’জন পরামর্শ করল যে, খাবার নিয়ে আসা মাত্র অকস্মাৎ আক্রমণ করে ঐ লোকটিকে হত্যা করবে আর ইট ভাগাভাগি করে তারা নিয়ে নিবে। যেই কথা সেই কাজ। ঐ লোকটি খাবার নিয়ে আসামাত্রই তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং হত্যা করে ফেলল তারপর তার আনীত বিষমিশ্রিত খাদ্য দু’জনে খেয়ে ফেলল এবং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। তিনখানা স্বর্ণের ইটের পাশে পড়ে রইল ৩টি লাশ। ক’দিন বাদে হযরত ঈসা (আ.) ওই পথ দিয়ে ফিরছিলেন। তিনি এ অবস্থা দেখে আফসোস করলেন। হায়, লোভ! যে লোভে পড়ে, তার ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী।
লোভ-লালসার মুখ্য দাওয়া হলো খালেস ঈমান ও তাকওয়া বা খোদাভীতি, যার মাঝে ঈমানের আলো নেই, তাকওয়া নেই, সে যেকোনো অপকর্মে লিপ্ত হতে পারে। আর যার মাঝে পাপকাজ থেকে বেঁচে থাকার মূলমন্ত্র-খোদাভীতি আছে, সে কখনও বেশোকর, বেসবর হতে পারে না, পরহেজ থাকে হেন পাপকর্ম হতে। আল্লাহ তায়া’লা বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার রবের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং নিজেকে কুপ্রবৃত্তি থেকে ফিরিয়ে রাখে, নিশ্চয়ই জান্নাত হবে তার আবাসস্থল।’ (সূরা নাযিআত: ৪০, ৪১)।
তাই, মানুষের উচিত অহঙ্কার, লোভ-লালসা, লিপ্সা, হিংসা-বিদ্বেষ, কৃপণতা, অন্যের প্রতি বদ ধারণা পোষণ করা, কুপ্রবৃত্তির অনুসরণসহ তামাম পাপকাজ থেকে নিজেকে হামেশা পরহেজ রাখা। মনে রাখতে হবে ‘আর রিযকু মাকসুমুন’ রিজিক আল্লাহ কর্তৃক সুনির্ধারিত। তাই তকদিরের পের দৃঢ় বিশ্বাস রেখে, যা আছে তাতে তুষ্ট থেকে, তৃপ্ত থেকে, কষ্টে, অভাবেও আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে ধৈর্য অবলম্বন করা এবং তাকওয়ার অনুশীলন করা। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিত, ঠিক তেমন ভয় করতে থাকো এবং অবশ্যই মুসলমান (আল্লাহতে পূর্ণ সমর্পিত প্রাণ) না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’ (সূরা ইমরান-১০১)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন