মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

দুঃখ-বেদনা ও শোকতাপে মুমিনের করণীয়-১

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

দুনিয়ার জীবনে কোনো মানুষই বিপদ-আপদ, দুঃখ-বেদনা, ব্যর্থতা, লোকসান ও দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনা থেকে বিমুক্ত এবং নিরাপদ থাকতে পারে না। তাই বলে, ঈমানদার ব্যক্তি জটিল থেকে জটিলতর বিপদের সম্মুখীন হয়েও হিম্মত হারায় না ও ধৈর্যের বাঁধনকে অটুট রেখে গগনচুম্বী গিরি শিখরের মতো অচল-অটল থাকে। ফলে, দুর্যোগ ও দুর্ভাবনার আঘাতজনিত কষ্ট তার নিকট মধুর হতে মধুরতর হয়ে যায় এবং আল্লাহ পাকের নির্ধারিত তাকদিরের প্রতি অবিচল বিশ্বাস অটুট রাখার কারণে প্রতিটি মুশকিল ও দুর্ভাবনা তার কাছে সহজতর হয়ে উঠে।

এতদপ্রসঙ্গে আল কুরআনে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। যথা- (ক) ‘আমি তোমাদের ভয়-ভীতি, ক্ষুধা, ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-মূলের ক্ষয়ক্ষতির দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দান করো। আর ধৈর্যশীল তো তারাই যারা তাদের নিজের ওপর বিপদ-আপদ পতিত হলে বলে, আমরা তো আল্লাহর জন্যই এবং অবশ্যই আমরা তাঁরই সমীপে প্রত্যাবর্তনকারী। এ সকল লোক তাঁরাই যাদের ওপর তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে করুণা ও আশীস বর্ষিত হয়। আর তারাই হেদায়েতপ্রাপ্ত। (সূরা বাকারাহ, আয়াত ১৫৫-১৫৭)।

এই আয়াতে কারিমায় ধৈর্য অবলম্বনকারীদের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে। তাঁরা এমন লোক যারা বিপদের সম্মুখীন হলে বলে- ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’। এর দ্বারা মূলত এই শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, যদি কেউ বিপদে পড়ে, তাহলে সে যেন এই দোয়াটি পাঠ করে। কেননা, এই দোয়া পাঠ করলে একাধারে যেমন অগণিত সওয়াব পাওয়া যায়, ঠিক তেমনি যদি এর অর্থের প্রতি যথাযথ লক্ষ রেখে পাঠ করা হয়, তবে বিপদের সময় আন্তরিক শান্তি লাভ হয় এবং তা থেকে উত্তরণও সহজতর হয়ে যায়। (খ) ইরশাদ হয়েছে: ‘পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমার ওপর যে বিপর্যয় নেমে আসে, আমি তা সংঘটিত করার পূর্বেই একটি কিতাবে লিপিবদ্ধ করে রেখেছি। নিশ্চয়ই আল্লাহর পক্ষে এটা খুবই সহজ। এ জন্য তোমরা যা হারিয়েছ তাতে তোমরা যেন বিমর্ষ না হও’। (সূরা- হাদীদ: আয়াত ২২-২৩)।

এই আয়াতের অর্থ ও মর্মের প্রতি লক্ষ করলে সহজেই বোঝা যায় যে, এই বিশ্ব চরাচরে যা কিছু হচ্ছে বা হবে, তা আল্লাহর নির্ধারিত ভাগ্যলিপি অনুসারেই হচ্ছে। আর আল্লাহর কোনো নির্দেশই কল্যাণ ও হিকমত থেকে খালি নয়। এ বিশ্বাস ঈমানদার ব্যক্তির জন্য আত্মিক প্রশান্তি ও স্থিরতা অর্জনের সহায়ক হয়। ফলে দুর্ভাবনার আঘাতজনিত কষ্ট ও বেদনা তার নিকট মধুর হয়ে যায়।

পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এ ব্যাপারে যে পথনির্দেশ করেছেন, তা মুুুমিনদের জন্য শ্রেষ্ঠ নেয়ামত স্বরূপ। তিনি বলেছেন: ‘যখন কোনো ব্যক্তি মুসিবতে পতিত হয়ে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পাঠ করে, আল্লাহ পাক তাকে সে বিপদ হতে উদ্ধার করেন, তাকে উত্তম পুরস্কারে বিভূষিত করেন এবং তার চাহিদা মাফিক বস্তু তার হাতের নাগালে এনে দেন’।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Shariful Islam Mamun ২৪ আগস্ট, ২০২১, ৬:২৪ এএম says : 0
পৃথিবীতে কত রকম মানুষের বাস। কেউ সাদা, কেউ কালো। কেউ ধনী, কেউ গরিব। কেউ লম্বা, কেউ খাটো। কেউ শাসক, কেউ শাসিত। এই বৈচিত্র্যের মাঝেও ঐক্যের সুর সুখ-দুঃখ মিলিয়েই মানুষের জীবন।
Total Reply(0)
Naib Al Emran ২৪ আগস্ট, ২০২১, ৬:২৪ এএম says : 0
ঘরবাড়ি নেই বলে রাস্তার পাশে ফুটপাতে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজতে হয় যাকে তার জীবনেও যেমন সুখের পরশ থাকে, তেমনি সুবিশাল অট্টালিকায় যাদের বসবাস, কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ-সম্পদের অধিকারী যারা, তারাও দুঃখ-বেদনায় বিষাদক্লিষ্ট হন।
Total Reply(0)
Kamrul Hassan ২৪ আগস্ট, ২০২১, ৬:২৫ এএম says : 0
দুঃখ-বেদনা বিপদ আর কষ্টের ধরনও অনেক। দেহ-মন, অর্থসম্পদ ও সম্মান-আভিজাত্য ইত্যাদি কত দিক থেকে মানুষ বিপদের মুখে পড়ে। কেউ হয়তো শারীরিকভাবে অসুস্থ, কেউ পারিবারিক কারণে গভীর দুশ্চিন্তার শিকার। আবার কারও দীর্ঘদিনের অর্জন সামাজিক সম্মানটুকু কখনো মুহূর্তে ধুলোয় মিশে যায়। এ সবই মানুষের বিপদ।
Total Reply(0)
Imam Hossain ২৪ আগস্ট, ২০২১, ৬:২৫ এএম says : 0
জীবনে বিপদ আসবেই। আল্লাহতায়ালার দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব (কখনো) ভয়-ভীতি, (কখনো) ক্ষুধা দিয়ে এবং (কখনো) জানমাল ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দিয়ে, আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫)
Total Reply(0)
Ibrahim Ctg Khalil ২৪ আগস্ট, ২০২১, ৬:২৫ এএম says : 0
ছোট-বড় সব সংকটে মুমিনের মুখ থেকে তাই উচ্চারিত হয় ‘ইন্নালিল্লাহ!’ রাসুল (সা.)-এর শিক্ষাও কত বিস্তৃত দেখুন। তিনি বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কারও জুতার ফিতা ছিঁড়ে যায়, তখনো তোমরা ‘ইন্নালিল্লাহ’ পড়ো। কেননা এটাও একটা বিপদ।’ (শুআবুল ঈমান, বায়হাকি, হাদিস: ৯২৪৪; মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস: ৩৪৭৫)
Total Reply(0)
Billal Hossain ২৪ আগস্ট, ২০২১, ৬:২৬ এএম says : 0
যেকোনো ধরনের বিপদে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে ইন্নালিল্লাহ পড়া ধৈর্যশীলদের পরিচায়ক।
Total Reply(0)
MD FOKHRUL ISLAM ২৪ আগস্ট, ২০২১, ৬:২৬ এএম says : 0
আমরা যে সবরের কথা বলি সেটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো, শরিয়তে নিষিদ্ধ সব রকম কাজে জড়ানো থেকে নিজেকে বিরত রাখা। বিপদের মুখেও এমন কোনো কাজ না করা, শরিয়ত যেটির অনুমতি দেয়নি। যেমন কারও মৃত্যুতে বিলাপ করা। দুঃখ-কষ্টে জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা। আল্লাহতায়ালার ব্যাপারে অসংগত কোনো বিশ্বাস পোষণ করা ইত্যাদি।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন