মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

দুঃখ-বেদনা ও শোকতাপে মুমিনের করণীয়-২

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

আরো বর্ণিত আছে ‘একবার রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সম্মুখস্থ বাতি নিভে গেল। তিনি ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পাঠ করলেন। কেউ আরজ করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! বাতি নিভে যাওয়াটাও কি মুসিবত? তিনি বললেন : হ্যাঁ। মুমিন ব্যক্তি যে কারণেই দুঃখ পায়, তা-ই মুসিবত। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)। রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো ইরশাদ করেছেন : ‘কোনো মুসলমান যদি অন্তরে বেদনা অনুভব করে, রোগ-শোক ও দুঃখ-কষ্টে পতিত হয় কিংবা দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনায় আক্রান্ত হয়, এমনকি তার দেহে ক্ষুদ্র কাঁটাও যদি বিদ্ধ হয়, আর সে তার ওপর সবর করে, আল্লাহপাক তার গোনাহ মাফ করে দেন’। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : ‘বিপদ যত বড় ও ভারী হবে, তার বিনিময়ে (আল্লাহর সাথে) সম্পর্কও তত বেশি গাঢ় হবে। আল্লাহ যদি কোনো জাতিকে ভালোবাসতে চান, তাহলে অতিরিক্ত দুঃখ-যাতনা দ্বারা পরীক্ষার সম্মুখীন করেন। সুতরাং যারা আল্লাহ পাকের ফয়সালার ওপর সন্তুষ্ট থাকে আল্লাহ পাকও তাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন। আর যারা এই পরীক্ষায় অসন্তুষ্ট প্রকাশ করে আল্লাহপাক তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন’। (জামেয়ে তিরমিজী)। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন: ‘যখন কোনো মুমিন ব্যক্তি অসুখ-বিসুখ অথবা কোনো দুঃখ-কষ্টের দরুন দুর্ভাবনায় পতিত হয়, আল্লাহপাক এর বিনিময়ে তার পাপরাশি এমনভাবে মোচন করে দেন, যেভাবে বৃক্ষ তার পত্রগুলো ঝেড়ে ফেলে দেয়’। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)।

বস্তুত, বিপদ-আপদ ও মুসিবতের সময় মুমিনগণের উচিত একে অপরকে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার তা’লীম দান করা এবং দুঃখ-কষ্ট ও বেদনায় একে অপরের সহযোগিতা করা এবং বন্ধু-বান্ধবদের দুঃখে শরিক হওয়া এবং দুঃখ মোচনের জন্য সকল প্রকার সহমর্মিতা প্রদর্শন করা। এতদপ্রসঙ্গে পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) পরিপূর্ণ হেদায়াত প্রদান করেছেন। যথা- (ক) ‘সমস্ত মুসলমান মিলে একত্রে একটি মানবদেহ সদৃশ। তার একটি চোখে আঘাত পেলে, তা সারা শরীর অনুভব করে। মাথায় বেদনা সৃষ্টি হলে সর্বাঙ্গে তার কষ্ট ছড়িয়ে পড়ে’। (সহীহ মুসলিম)।

(খ) নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেছেন: ‘যে ব্যক্তি কোনো বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করবে, সে ওই পরিমাণ সাওয়াব পাবে, যে পরিমাণ বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি পাবে’। (জামেয়ে তিরমিজী)।

(গ) ‘উহুদের যুদ্ধের শেষে রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মদীনায় ফিরে এলেন, তখন মহিলারা তাদের প্রিয়জন ও আত্মীয়-স্বজনদের অবস্থা জানার জন্য তাঁর খেদমতে হাজির হলো। হযরত হাসনা বিনতে জাহাশ (রা.) তাঁর খেদমতে এলে তিনি তাকে সবর এখতিয়ারের কথা বললেন- তোমার ভাই আবদুল্লাহর জন্য ধৈর্য ধারণ করো’। তিনি ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পাঠ করলেন এবং তার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন: তোমার মামা হযরত হামযাহ (রা.)-এর ওপরও ধৈর্য অবলম্বন করো। তিনি ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পাঠ করলেন এবং তার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করলেন’। (সহীহ মুসলিম)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
গাজী ফজলুল করিম ২৫ আগস্ট, ২০২১, ১:১০ এএম says : 0
বিপদে বিহ্বলতা দূর করার জন্য আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে তাঁকে স্মরণ করা ও ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর শরণাপন্ন হওয়ার নির্দেশ রয়েছে কোরআন কারিমে। ‘যারা বিশ্বাস করে এবং তাদের অন্তরগুলো আল্লাহর জিকির দ্বারা প্রশান্তি লাভ করে, জেনে রাখো, আল্লাহর স্মরণ দ্বারা অন্তর শান্তি পায়।’ (সুরা ১৩ রাআদ, আয়াত: ২৮)।
Total Reply(0)
হিমালয় হিমু ২৫ আগস্ট, ২০২১, ১:১০ এএম says : 0
হজরত ইয়াকুব (আ.) দীর্ঘ অপেক্ষার পরও আশাবাদী ছিলেন। সে আশার বাণী কোরআনে বিবৃত হয়েছে
Total Reply(0)
TANVIR SAKI BHUIYAN ২৫ আগস্ট, ২০২১, ১০:০৬ এএম says : 0
‘ক্ষমা করো, ধৈর্য ধরো, হউক সুন্দরতর বিদায়ের ক্ষণ। মৃত্যু নয়, ধ্বংস নয়, নহে বিচ্ছেদের ভয় শুধু সমাপন’ আজ আমরা শর্টকাটের মোহে বুঁদ হয়ে আছি। সব কাজেই আমাদের অস্থিরতা আর হায়-হুতাশ। পরিশ্রম আর অধ্যাবসায় শব্দ-দু’খান এখন কেবল বক্তৃতা আর বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ। বাস্তব জীবনে এর দেখা মেলা ভার। বাংলা ভাষায় প্রচলিত একটি মশহুর বাগধারা আছে, ‘সবুরে মেওয়া ফলে’ যার অর্থ- অপেক্ষার ফল সুমিষ্ট হয় বা ধৈর্যের মাধ্যমে যা অর্জিত, তা খুবই সুখের। ইতিহাসের সফল ব্যক্তিদের জীবন পর্যালোচনা করলেও এটা স্পষ্ট হয় যে, তাদের বিজয়ের পেছনে ‘ধৈর্য শক্তি’ সবচেয়ে নিয়ামক ভূমিকা রেখেছে। যাদের ধৈর্য শক্তি নেই, তারা সামান্য বিপদেও ভেঙে পড়েন। কিন্তু ধৈর্যশীলরা ‘একবারে না হলে আরেকবার চেষ্টা কর’ নীতিতে বিশ্বাস করেন। মার্কিন বিজ্ঞানী টমাস এডিসন ‘বৈদ্যুতিক বাতি’ তৈরির জন্য ধৈর্যের সঙ্গে বারংবার চেষ্টা চালিয়ে সফল হন। রাশিয়ান লেখক লিও টলস্টয় বলেন, ‘ধৈর্য হলো জগতের সবচেয়ে শক্তিমান যোদ্ধা’। ইতিহাসের বলে, প্রবল বাতাসের মুখে এক মাকড়সার শত বার চেষ্টা করার পর জাল বোনা দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৩১৪ সালে রবার্ট ব্রুস ‘বানুকবার্নের যুদ্ধ’ বিজয় করেন। তাই, সফল হতে হলে অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই। সুতরাং, প্রকৃত আশরাফুল মাখলুকাত হওয়ার জন্য আমাদের প্রধান কর্তব্য হলো- ধৈর্যশীলতার এই মহৎ গুণ অর্জনে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া। আল্লাহ তা›আলা আমাদের বিপদাপদে কেবল তাঁরই ওপর আস্থা রেখে ধৈর্য ধারণ করার তাওফিক দান করুন। আমীন।।
Total Reply(0)
Nayeem ২৬ আগস্ট, ২০২১, ৭:১৬ এএম says : 0
I was waiting for 2nd part of this article. Thank you @author
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন