আরো বর্ণিত আছে ‘একবার রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সম্মুখস্থ বাতি নিভে গেল। তিনি ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পাঠ করলেন। কেউ আরজ করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! বাতি নিভে যাওয়াটাও কি মুসিবত? তিনি বললেন : হ্যাঁ। মুমিন ব্যক্তি যে কারণেই দুঃখ পায়, তা-ই মুসিবত। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)। রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো ইরশাদ করেছেন : ‘কোনো মুসলমান যদি অন্তরে বেদনা অনুভব করে, রোগ-শোক ও দুঃখ-কষ্টে পতিত হয় কিংবা দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনায় আক্রান্ত হয়, এমনকি তার দেহে ক্ষুদ্র কাঁটাও যদি বিদ্ধ হয়, আর সে তার ওপর সবর করে, আল্লাহপাক তার গোনাহ মাফ করে দেন’। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : ‘বিপদ যত বড় ও ভারী হবে, তার বিনিময়ে (আল্লাহর সাথে) সম্পর্কও তত বেশি গাঢ় হবে। আল্লাহ যদি কোনো জাতিকে ভালোবাসতে চান, তাহলে অতিরিক্ত দুঃখ-যাতনা দ্বারা পরীক্ষার সম্মুখীন করেন। সুতরাং যারা আল্লাহ পাকের ফয়সালার ওপর সন্তুষ্ট থাকে আল্লাহ পাকও তাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন। আর যারা এই পরীক্ষায় অসন্তুষ্ট প্রকাশ করে আল্লাহপাক তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন’। (জামেয়ে তিরমিজী)। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন: ‘যখন কোনো মুমিন ব্যক্তি অসুখ-বিসুখ অথবা কোনো দুঃখ-কষ্টের দরুন দুর্ভাবনায় পতিত হয়, আল্লাহপাক এর বিনিময়ে তার পাপরাশি এমনভাবে মোচন করে দেন, যেভাবে বৃক্ষ তার পত্রগুলো ঝেড়ে ফেলে দেয়’। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)।
বস্তুত, বিপদ-আপদ ও মুসিবতের সময় মুমিনগণের উচিত একে অপরকে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার তা’লীম দান করা এবং দুঃখ-কষ্ট ও বেদনায় একে অপরের সহযোগিতা করা এবং বন্ধু-বান্ধবদের দুঃখে শরিক হওয়া এবং দুঃখ মোচনের জন্য সকল প্রকার সহমর্মিতা প্রদর্শন করা। এতদপ্রসঙ্গে পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) পরিপূর্ণ হেদায়াত প্রদান করেছেন। যথা- (ক) ‘সমস্ত মুসলমান মিলে একত্রে একটি মানবদেহ সদৃশ। তার একটি চোখে আঘাত পেলে, তা সারা শরীর অনুভব করে। মাথায় বেদনা সৃষ্টি হলে সর্বাঙ্গে তার কষ্ট ছড়িয়ে পড়ে’। (সহীহ মুসলিম)।
(খ) নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেছেন: ‘যে ব্যক্তি কোনো বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করবে, সে ওই পরিমাণ সাওয়াব পাবে, যে পরিমাণ বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি পাবে’। (জামেয়ে তিরমিজী)।
(গ) ‘উহুদের যুদ্ধের শেষে রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মদীনায় ফিরে এলেন, তখন মহিলারা তাদের প্রিয়জন ও আত্মীয়-স্বজনদের অবস্থা জানার জন্য তাঁর খেদমতে হাজির হলো। হযরত হাসনা বিনতে জাহাশ (রা.) তাঁর খেদমতে এলে তিনি তাকে সবর এখতিয়ারের কথা বললেন- তোমার ভাই আবদুল্লাহর জন্য ধৈর্য ধারণ করো’। তিনি ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পাঠ করলেন এবং তার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন: তোমার মামা হযরত হামযাহ (রা.)-এর ওপরও ধৈর্য অবলম্বন করো। তিনি ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পাঠ করলেন এবং তার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করলেন’। (সহীহ মুসলিম)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন