শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

পানিবদ্ধতার শিকার ১০ লাখ মানুষ

যশোর থেকে শাহেদ রহমান : | প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

যশোরের দুঃখ ভবদহ। প্রায় ৪০ বছর ধরে লাখো মানুষ পানির সাথে বসবাস করছেন। আবারো নতুন করে দুইশত গ্রামের ১০ লাখ মানুষ পানিবদ্ধতার শিকার হতে চলেছেন। তাদের অনেকের ফসলের জমি ও বসতভিটাসহ সবই কেড়ে নিয়েছে ভবদহের পানি। এদিকে সরকার ওই এলাকার মানুষকে ভবদহ থেকে রক্ষার জন্য বারবার প্রকল্প হাতে নেয় কিন্তু পানিবদ্ধ মানুষের স্থায়ীভাবে কোন উপকার হয় না।
জানা যায়, যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশ নিয়ে ভবদহ। এলাকার ৫২টি বিলের পানি চলাচলের পথ মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী। এখন পলি পড়ে নদীগুলো নাব্যতা হারিয়েছে। ফলে নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। এই অবস্থায় বৃষ্টির পানিতে এলাকার বিলগুলো প্লাবিত হয়েছে। এ কারণে বিলসংলগ্ন গ্রামগুলোতে পানি ঢুকেছে। ইতিমধ্যে অভয়নগর ও মনিরামপুর উপজেলার দুইশত গ্রাম পানিতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
অভয়নগর উপজেলার ডুমুরতলা গ্রামে নিত্যানন্দ মন্ডলের জানান, পরিবারের পাঁচজন সদস্য নিয়ে গতবছর বাড়ি ছেড়ে উঠেছিলেন সড়কে। বর্তমানে নদীতে পলি জমে পানি উপচে পড়ছে। মনে হচ্ছে, এ বছরও বাড়ি ছাড়তে হবে। মনিরামপুর উপজেলার হাটগাছা গ্রামের শংকর মন্ডল জানান, পানির কারণে তার জমিতে চাষাবাদের সুযোগ পায় না। সাজানো গোছানো বাড়ি ছিল কিন্তু সবই এখন পানির নিচে। খুব কষ্টে আছি।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রনজিত বাওয়ালি জানান, পানিবদ্ধতা দূর করার জন্য টিআরএম করতে হবে, এটাই সবচেয়ে সফল উপায়। সেটা তো সবাই বলে কিন্তু সরকারের পানিবদ্ধতা দূর করার নতুন প্রকল্পে টিআরএম নেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তাওহীদুল ইসলাম বলেন, পানি সরানোর জন্য পাম্পসেট (সেচযন্ত্র) দিয়ে পানি সেচে বের করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে সাড়ে নয় কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। অর্থ বরাদ্দের পর কার্যক্রম শুরু করা হবে। এ ছাড়া ভবদহ এলাকার পানিবদ্ধতা নিরসন ও টেকসই পানি ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য প্রায় ৮০৮ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, খনন করে নদী বাঁচানো যায় না। প্রবাহ নিশ্চিত করেই কেবল নদী বাঁচানো সম্ভব। ৫ বছর ধরে কেবল নদী খনন করা হচ্ছে। এতে নদীর অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। আর সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সেচে ভবদহের পানিবদ্ধতা দূরীকরণ অবাস্তব এবং হাস্যকর।
ভূক্তভোগীরা জানায়, আশির দশকের পলি জমে নাব্যতা হারায় মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী। অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে পানি নিষ্কাশনের পথ। বৃষ্টির পানি আটকে সৃষ্টি হয় পানিবদ্ধতা। ১৯৮৪ সাল থেকে এই পানিবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করে। ১৯৯৪ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ২২৯ কোটি আর্থিক সহায়তায় শুরু হয় খুলনা-যশোর নিষ্কাশন পুনর্বাসন প্রকল্প (কেজেডিআরপি)। প্রকল্পে টিআরএম বাস্তবায়ন করায় অবসান হয় পানিবদ্ধতার। কিন্তু স্থায়ী কোন সমাধান পায়নি ওই এলাকার মানুষ।
স্থানীয়রা জানায়, ১৯৯৭ সালে এলাকার কৃষকেরা পানিবদ্ধতার হাত থেকে বাঁচতে হরি নদীর বাঁধ কেটে দেয়। এটাই এলাকার কৃষকদের ‘স্বতঃস্ফূর্ত টিআরএম’। পাউবো ২০০২ সালে অভয়নগর উপজেলার বিল কেদারিয়ায় টিআরএম বাস্তবায়ন করে। ২০০৪ সাল পর্যন্ত চলে এ টিআরএম। এ সময় এলাকায় কোনো পানিবদ্ধতা ছিল না। এরপর ২০০৬ সালের অতিবর্ষণে অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুর উপজেলায় দেখা দেয় ভয়াবহ পানিবদ্ধতা । ২০০৬ সালে কেশবপুর উপজেলার বিল খুকশিয়ায় তিন বছর মেয়াদী জোয়ারাধার প্রকল্প চালু করা হয়। ২০০৮ সালে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা অব্যাহত থাকে। ফসলের ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ বিক্ষুব্ধ কৃষকেরা ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে হরি নদীর সাথে বিল খুকশিয়ার কাটিং পয়েন্ট বেঁধে দেন। বন্ধ হয়ে যায় বিল খুকশিয়ায় জোয়ারাধার প্রকল্প। এরপর অভয়নগর ও মনিরামপুর উপজেলায় অবস্থিত বিল কপালিয়ায় টিআরএম বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয় পাউবো। তিনদফা বাড়ানোর পর ২০১৫ সালের ২৯ জুলাই পরিকল্পনা কমিশন চিঠি দিয়ে টিআরএম প্রকল্প বন্ধ করে দেয়। এরপর পানিবদ্ধতা দূরীকরণের নামে নদীতে ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১৮টি প্রকল্পে প্রায় সাত কোটি টাকার পাইলট চ্যানেল খনন কাজ হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি সাংবাদিক সম্মেলন করে বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন। পলিতে ভরাট হওয়া নদীগুলো সংস্কার করে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কাজ করার দাবিসহ ৬টি দাবি তুলে ধরা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন