যশোরের ভবদহে পানিবদ্ধতা নিরসনে উদ্ভাবনী উদ্যোগে পাইলটিং কার্যক্রম নিয়ে সেমিনারে ভুক্তভোগীদের তোপের মুখে পড়েন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। গতকাল শনিবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এই সেমিনারের আয়োজন করে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড। এসময় বক্তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে লুটপাটকারি আখ্যা দিয়ে তাদের বিচার দাবি করেন। একই সাথে ভবদহ অঞ্চলকে লুটপাটকারীদের সোনার ডিমপাড়া হাঁস হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বক্তারা বলেন, ভবদহ অঞ্চলে টিআরএম বাস্তবায়ন ছাড়া জনগণকে পানিবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা করা যাবে না। যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. রফিকুল হাসানের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের চীফ ইনোভেশন অফিসার ও মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আজাদুর রহমান মল্লিক। বিশেষ অতিথি ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী একেএম তাহমিদুল ইসলাম, যশোর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পীষুষ কৃঞ্চ কুন্ডু। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডে যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তাওহীদুল ইসলাম।
সেমিনারে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, ভবদহ অঞ্চলের মানুষ কপালপোড়া। প্রধানমন্ত্রী যেখানে বলছেন, নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে, সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড উল্টোপথে হাটছেন। তারা ভবদহ এলাকার সব নদীগুলোকে মেরে ফেলেছেন। এখানকার মানুষকে বাঁচাতে হলে টিআরএম ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
বিলকপালিয়া থেকে টিআরএম বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে। একই সাথে আমডাঙ্গা খাল খনন করতে পারলে ভবদহ অঞ্চলের মানুষ পানিবদ্ধতার হাত থেকে রেহাই পাবে। কিন্তু তা না করে পানি উন্নয়ন বোর্ড লুটপাটের প্রকল্প নিচ্ছে। কোন অনিয়মের তদন্ত হয় না। মনিরামপুর কুলটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র বলেন, গত ৪ বছর ধরে আমাদের গ্রামে পানির কারণে ফসল হচ্ছে না। নদীকে শাসন নয়, নদীকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রণজিৎ বাওয়ালি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড জনগণ ও সরকারকে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। খনন করে নদী বাঁচানো যায় না। প্রবাহ নিশ্চিত করেই কেবল নদী বাঁচানো সম্ভব। ৫ বছর ধরে কেবল নদী খনন করা হচ্ছে। এতে নদীর অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। আর সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সেচে ভবদহের পানিবদ্ধতা দূরিকরণ অবাস্তব এবং হাস্যকর। ভবদহ অঞ্চলকে বিরান হওয়া থেকে রক্ষা করতে হলে টিআরএম বাস্তবায়ন করতে হবে। এটা না করে বড় বড় প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, নদী খননের নামে অর্থ লুটপাটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জনগণের দাবি মেনে এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ না করলে এই এলাকা পানিবদ্ধতামুক্ত এবং বিরান হওয়া থেকে রক্ষা পাবে না।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন আন্দোলন কমিটির আহবায়ক এনামুল হক বাবুল বলেন, আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে টিআরএম বাস্তবায়ন শুরু না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড গত ৪০ বছর ধরে জনগণের সাথে প্রতারণা করছে। তারা কত টাকা খরচ করছেন তার হিসাব কেউ নেয় না। তাদের তামাশার কারণে আবারও ২শ’ গ্রামের ১০ লাখ মানুষ পানিবদ্ধতার শিকার হতে চলেছেন। ফসলের জমি, বসতভিটা-সবই কেড়ে নিয়েছে পানি। সরকার বারবার প্রকল্প নেয় কিন্তু পানিবদ্ধ মানুষের কোন উপকার হয় না।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেন, সরকারের ডেল্টাপ্ল্যানে টিআরএম বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ রয়েছে। যে কারণে এটি বাতিল হবে না। আমরা জনগণের সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ডোর দূরত্ব দূর করতে উদ্যোগী হয়েছি। আগামীতে যে প্রকল্প নেয়া হবে সেটি জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই করা হবে।
উল্লেখ্য, যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। এলাকার ৫২টি বিলের পানি ওঠানামা করে মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী দিয়ে। পলি পড়ে নদীগুলো নাব্যতা হারিয়েছে। ফলে নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। এই অবস্থায় বৃষ্টির পানিতে এলাকার বিলগুলো প্লাবিত হয়েছে। বিল উপচিয়ে পানি ঢুকেছে বিলসংলগ্ন গ্রামগুলোতে। ইতোমধ্যে অভয়নগর ও মনিরামপুর উপজেলার ২শ’ গ্রাম পানিতে তলিয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে। দ্রুত টিআরএম বাস্তবায়ন না করলে অসংখ্য বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, মাছের ঘের, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আবারও পানির নিচে চলে যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন