মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

শুধু আল্লাহর রহমত চাই

মুহাম্মদ সানাউল্লাহ | প্রকাশের সময় : ২৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

রাত ও দিনে নিরাপদ থাকার জন্য মহানবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকাল-সন্ধ্যায় অনেকগুলো দু’আ পড়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। এগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে-

ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যূমু বিরহমাতিকা আস্তাগীস, ফা-আসলিহ্ লী শা’নী কুল্লাহু, ওয়া লা তাকিলনী ইলা নাফসী ত্বরাফাতা আইনিন। (নাসাঈ)
অর্থ: ‘হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী! আমি তোমার রহমত প্রার্থনা করছি। সুতরাং আমার সকল অবস্থা সংশোধন করে দাও এবং এক পলকের জন্য হলেও আমাকে আমার নিজের উপর ছেড়ে দিও না’।

দোয়াটি পাঠ করা অনেক সহজ, তবে এর মাহাত্ম্য অতি ব্যাপক। হাদীসটি সহীহভাবে বর্ণিত হয়েছে আনাস ইবনু মালিক (রা.) থেকে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় কন্যা ফাতিমা (রা.)-কে বললেন, ‘আমি তোমাকে যে অসিয়্যত করছি তা শুনতে তোমাকে কে নিষেধ করছে? অথবা তুমি যখন সকাল ও সন্ধ্যায় উপনীত হও তখন তোমাকে কে বলতে মানা করেছে-

‘হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী! আমি তোমার রহমত প্রার্থনা করছি। আমার জন্য আমার সব বিষয়কে তুমি সংশোধন করে দাও এবং চোখের পলকের সমান সময়ের জন্যও আমাকে একা ছেড়ে দিও না।’
দোয়াটি কাছাকাছি একই ইবারাতে বর্ণিত হয়েছে সুনানে আহমাদ ও সুনানে আবূ দাঊদ-এ। সেখানে বর্ণনাকারী আবূ বাকরাহ (রা.) বলেন, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দুঃখকালীন দোয়া : হে আল্লাহ! আমি তোমার রহমতপ্রার্থী, সুতরাং চোখের পলক পড়ার মুহূর্তের জন্যও আমাকে একা ছেড়ে দিও না। আমার সকল বিষয় সংশোধন করে দাও। তুমি ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ (ইবাদাতের যোগ্য) নেই’।

এটি হচ্ছে সেই দোয়াসমূহের অন্তর্ভুক্ত যেগুলোতে বান্দার প্রতি আল্লাহ তা‘আলার যে দাবি তার প্রতিফলন ঘটেছে। পৃথিবীকে কোন কিছু দেয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। বান্দা প্রতি রাক‘আত নামাজে ঘোষণা করে, ‘ইয়্যাকা না‘বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাঈন’। অর্থাৎ ‘আমি একমাত্র তোমারই ইবাদাত করি এবং খাস করে তোমার কাছেই সাহায্য চাই’। (সূরা ফাতিহা) কুরআন মাজিদের অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ‘আর আল্লাহর তা‘আলার জন্য রয়েছে সুন্দর নামসমূহ, অতএব তোমরা সেসব নামে ডাকো’। (সূরা আ‘রাফ : ১৮০)
এই দোয়ার শুরুতে ‘ইয়া হাইয়্যু’ ও ‘ইয়া কাইয়্যূমু’ বলে আহ্বান করা হয়েছে। এ দু’টিই হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার ৯৯টি গুনবাচক নামের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই আল্লাহ তা‘আলা যেভাবে আহ্বান করতে বলেছেন ঠিক সেভাবেই আহ্বান করা হচ্ছে। আর এ দোয়া আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার স্নেহধন্য কনিষ্ঠা কন্যা ফাতিমা (রা.)-এর মাধ্যমে আমাদের শিখিয়েছেন। কাজেই দোয়াটির মাহাত্ম্য অত্যধিক।

মহানবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বহু সওয়াবসম্বলিত অনেক দোয়া সাহাবীগণকে শিখিয়েছেন। তারা সেসব আমল করতেন। বর্তমান যুগের ধর্মপ্রাণ মুসলিমরাও সওয়াব অর্জনের জন্য সেসব দোয়া পড়ে থাকেন। কিন্তু বিশাল বিশাল পাহাড় সমান সওয়াব অর্জন করেও কেউ বেহেশত দাবি করতে পারবে না যদি আল্লাহ তা‘আলার রহমত তার প্রতি নাযিল না হয়। সে কারণেই প্রতিটি মুসলিমের উচিত আল্লাহর রহমত কামনা করা যা মহানবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কন্যাকে শিখিয়েছেন উল্লিখিত দোয়ায়।
বিশিষ্ট সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.)-কে মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওসিয়্যত করলেন: ‘হে বালক! যখন তুমি সওয়াল করবে, আল্লাহ তা‘আলার কাছেই করবে এবং যখন তুমি কোন কিছু চাইবে, আল্লাহর কাছেই চাইবে’। (তিরমিযী)

দোয়ার দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে, ‘সুতরাং আমার সকল অবস্থা সংশোধন করে দাও’। আল্লাহ তা‘আলার দু’টি গুনবাচক নাম নিয়ে তাকে ডেকে, তার কাছে রহমত কামনা করে, নিজের সব অভাব অভিযোগ তার কাছে উপস্থাপন করে সেগুলো সংশোধন করার প্রার্থনা করা হল। প্রতিটি মানুষের তার পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে, ব্যবসা-বাণিজ্যে, বন্ধু-বান্ধবের মাঝেসহ নানা জায়গায় অসংখ্যা সমস্যা আছে। অভাব-অনটনের মাঝে পিতা-মাতা, স্ত্রী, সন্তান বা ভাই-বোনের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের মালিক, কর্মকর্তা, কর্মচারী সবারই সমস্যা থাকতে পারে, পণ্য তৈরির সমস্যা, বিক্রির সমস্যা, মান সঠিক না হওয়ার সমস্যা এক কথায় অসংখ্য সমস্যা থাকতে পারে। এসব সমস্যা সমধানের ক্ষমতা রাখেন একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। কাজেই বান্দার শুধুমাত্র তার কাছেই যাচ্ঞা করতে হবে, এটিই মহানবী (স.)-এর শিক্ষা।

দোয়ার শেষ অংশে বলা হয়েছে, ‘চোখের পলক পড়ার সমান মুহূর্তের জন্যও আল্লাহ তুমি আমাকে আমার নিজের ওপর ছেড়ে দিও না’। প্রকৃতপক্ষে যিনি চিরঞ্জীব, যিনি চিরস্থায়ী, তার তো বান্দাসহ পৃথিবীর প্রতিটি জিনিষের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আছে। তার রহমতের ওপর টিকে আছে পৃথিবীর সবকিছু। এক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা যদি তার বান্দাকে চোখের পলক পড়ার সমান মুহূর্তের জন্য একা ছেড়ে দেন তাহলে তার ধ্বংস অনিবার্য।

পৃথিবীর সীমানার বাইরে যেমন কারো পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়, তেমনি তার রহমত ছাড়াও পৃথিবীতে টিকে থাকা সম্ভব নয়। সূর্যের আলো বন্ধ হয়ে গেলে, অক্সিজেন বন্ধ হয়ে গেলে, পৃথিবী পানিশূন্য হয়ে গেলে কোন মানুষের পক্ষে কখনও বাঁচা সম্ভব নয়। কাজেই আমরা যেমন প্রতিনিয়ত আল্লাহ তা‘আলা অসংখ্য নেয়ামত গ্রহণ করে বেঁচে আছি তেমনি তা যেন অব্যাহত থাকে তার জন্যই তার কাছে দোয়া করা একান্ত কর্তব্য। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ওপর তার রহমত বৃদ্ধি করুন, আমাদের সব সমস্যা দূর করে দেন এবং এক মুহূর্তের জন্যও যেন আমাদের একা ছেড়ে না দেন। আমীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Burhan uddin khan ২৯ আগস্ট, ২০২১, ১:৩৫ এএম says : 0
Allah is great
Total Reply(0)
পারভেজ আলম ২৯ আগস্ট, ২০২১, ১:৪৬ এএম says : 0
মানুষের অবস্থা, অবস্থান সব সময় এক রকম যায় না। পরিবেশ পরিস্থিতিও অনেক সময় পরিবর্তন হয়। কখনও মানুষের জন্য তা হয়ে উঠে অনুকূল আবার কখনও প্রতিকূল। এটাই দুনিয়াতে আল্লাহর চিরাচরিত নিয়ম
Total Reply(0)
নুর নাহার আক্তার নিহার ২৯ আগস্ট, ২০২১, ১:৪৭ এএম says : 0
মুমিন বান্দা কখনও কোনো বিপদ-আপদেই হতাশ হয় না। কোনো পেরেশানিই তাকে বিচলিত করতে পারে না। কারণ বিপদ-আপদ মহান আল্লাহর পক্ষতে মুমিন বান্দার জন্য এক মহাপরীক্ষা। আল্লাহ তাআলা নৈকট্য লাভে এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার বিকল্প নেই।
Total Reply(0)
সাইফ আহমেদ ২৯ আগস্ট, ২০২১, ১:৪৭ এএম says : 0
যুগে যুগে নবি-রাসুল, ওলি-আওলিয়া, আলেম-ওলামাগণ বহু পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন। যে যত বেশি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, আল্লাহর দরবারে তিনি ততবেশি মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন।
Total Reply(0)
সোয়েব আহমেদ ২৯ আগস্ট, ২০২১, ১:৪৮ এএম says : 0
সর্বাবস্থায়, সব ব্যাপারে মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করা। বিপদ-আপদ ও সংকট মোকাবেলায় আল্লাহর সাহায্যের কাছে দুনিয়ার কোনো সাহায্যই সমকক্ষ হতে পারে না।
Total Reply(0)
জোবায়ের খাঁন ২৯ আগস্ট, ২০২১, ১:৪৮ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ভালো-মন্দ সব বিষয়ে তাকদিরের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে তাঁরই কাছে সাহায্য চাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন