খুলনার ডুমুরিয়ায় ভদ্রা ও শালতা নদী ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে খননের দুই বছরেই ভরাট হয়ে গেছে। এতে বর্ষা মৌসুমে নদী সংলগ্ন পাঁচটি ইউনিয়নের অন্তত ৪০ থেকে ৫০টি গ্রামে পানিবদ্ধতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১৪ থেকে ১৫ বছর আগেও ভদ্রা-শালতা নদীকে ঘিরে হাজার হাজার মানুষের জীবিকা চলত। জোয়ার-ভাটা, মাছ শিকার ও নৌযান চলাচল ছিল নিয়মিত চিত্র। কিন্তু ধীরে ধীরে ভদ্রা ও শালতার প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পলিমাটি জমে ভরাট হয়ে যায়। শুরু হয় অবৈধ দখল। এ কারণে ওই সব এলাকার পানি নিষ্কাশনের পথ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পানিতে তলিয়ে যায় কৃষি জমি, বসতবাড়ি।
এমন অবস্থায় ২০০৫ সালে নদী দু’টি খননের উদ্যোগ নেয় খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে নানা জটিলতায় প্রকল্পটি ঝুলে যায়। পরে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একনেকের বৈঠকে ৭৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। ওই বছরই কাজ শুরু হয়ে ২০১৯ সালে শেষ হয়। খননের কাজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমিন এ্যান্ড কোং, হাসান এ্যান্ড ব্রাদার্স, কেএসএল জেভি, রানা বিল্ডার্স, সালেহ আহমেদ ও কামরুল এন্টারপ্রাইজ।
প্রতিষ্ঠানগুলো ভদ্রা নদীর দক্ষিণ অংশে ডুমুরিয়ার দিঘলিয়া থেকে ডুমুরিয়া বাজার পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭ কিলোমিটার এবং উত্তরাংশের তেলিগাতি থেকে ডুমুরিয়া বাজার পর্যন্ত ৯ দশমিক ৮ কিলোমিটার খনন করে। এ ছাড়া শালতা নদীর ডুমুরিয়া বাজারের ভদ্রা থেকে শুরু করে ৯ কিলোমিটার খনন করে শৈলমারি নদীতে সংযুক্ত করা হয়।
উপজেলার শোভনা ইউনিয়নের বাসিন্দা আজিজুল হক বলেন, হিসাব অনুযায়ী নদীটি ১২০ ফুট চওড়া এবং ১২ থেকে ১৪ ফুট গভীর পর্যন্ত খননের কথা ছিল। তবে সব জায়গায় এ নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। মাটি খুঁড়ে সেগুলো সরিয়ে নেয়ার কথা থাকলেও খরচ বাঁচাতে নদীর দুই ধারে ফেলে রাখা হয়। এতে বর্ষা মৌসুমে ওই মাটি ধুয়ে ফের নদীতে গিয়ে পড়ে।
একই এলাকার জামালউদ্দিন অভিযোগ করেন, প্রকল্পের অন্যতম অংশ দিঘলিয়া ও তেলিগাতি প্রান্তে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে দু’টি স্লুইস গেট নির্মাণের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। দুই প্রান্তের বাঁধ কেটে দেয়ায় মাত্র দেড় বছরেই পলিতে নদী ফের ভরাট হয়ে গেছে। এতে খননে ব্যয় হওয়া পুরো টাকাই জলে গেছে বলে তিনি মনে করেন।
উপজেলার গাবতলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীর ধারে দাঁড়িয়ে আছে উঁচু উঁচু গাছের সারি। পাশেই নদীর ভরাট জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে আধা পাকা বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আর সমতল জমি ছেয়ে গেছে সবুজ ঘাসে। সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে গরু-ছাগল। কোথাও কোথাও ধানের চাষও শুরু হয়েছে।বামুদিয়ার আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয়ে নদী খনন করেও কোনো লাভ হয়নি। খনন করা নদী পুরোটা ভরাট হয়ে গেছে। এখন বর্ষাকালে পাঁচটি ইউনিয়নের অন্তত ৫০টি গ্রামে জলাবদ্ধতা তৈরি হবে। অসংখ্য ফসলের মাঠ নষ্ট হবে।’
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-এর নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, নদী খননের উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল হয়েছে তা আমরা মনে করছি না। তবে তেলিগাতি ও টিয়াবুনিয়া বাঁধ কেটে দেয়ায় পানির সঙ্গে পলি এসে নদী ভরাট হয়েছে। নতুন মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ওই প্রকল্পের আওতায় ফের খনন করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন