বিশ্ব স্রষ্টা মহান রাব্বুল আলামীন মানুষকে অবৈধভাবে প্রাচুর্য লাভের প্রত্যাশী হতে চরমভাবে নিষেধ করেছেন। আল কোরআনে এরশাদ হয়েছে : ‘প্রচুর ধনসম্পদ ও আধিপত্য লাভের প্রত্যাশা তোমাদের মোহাঅন্ধ করে ফেলেছে, এ পর্যন্ত যে তোমরা কবরে নীত হও।’ (সূরা তাকাসুর : আয়াত-১-২)। এই আয়াতদ্বয়ের অর্থ ও মর্মের প্রতি গভীর দৃষ্টিতে তাকালে বোঝা যায় যে, অন্যায় পন্থায় প্রাচুর্য লাভের মোহে নিপতিত হাওয়া হারাম। এহেন হারাম কাজের দ্বারা চিরকালীন আরাম লাভ করা যায় না।
কিন্তু দুনিয়ার মানুষ এখন মাল-সম্পদ ও ভোগ সম্ভোগের মোহে এমনভাবে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে যে, নিজেদের অবস্থা ও অবস্থানের ঠিক-ঠিকানা পর্যন্ত ভুলে গেছে। কোন দিকে যাচ্ছে, সে দিশাও হারিয়ে ফেলেছে। পাপ-পঙ্কিলতার স্রোতে এমনভাবে গাঁ ভাসিয়ে দিয়েছেন যে, আল্লাহর ভয়, পরকালের চিন্তা তাদের অন্তর থেকে ধুয়েমুছে নীল হয়ে গেছে।
বালক বেলায় মরমি লেখক আকবর হোসেনের লেখা ‘দুনিয়া আর চাই না’ নামক উপন্যাসটি পড়েছিলাম। তখন মনে করেছিলাম যে, পাপ-পঙ্কে নিমজ্জিত পৃথিবীর মায়া না থাকাই ভালো। কিন্তু এখন দেখছি, সব উল্টে গেছে। এখনকার জনগণ মনে করে, দুনিয়াকে বেশি করে চায়। দুনিয়ার সাধ-আহ্লাদ, মজা ও তৃপ্তি যতবেশি উপভোগ করা যাবে, ততই উন্নতি এবং অগ্রগতি সাধিত হবে। দুনিয়া নাইতো কিছুই নাই।
এতো সাধের দুনিয়া এমনিতেই কি ছেড়ে দেয়া যায়? না, যায় না। আর যায় না বলেই, মোহান্ধ দুনিয়া প্রত্যাশীদের স্মরণ রাখা দরকার যে, বিশ্বস্রষ্টা পরম কৌশুলী আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত দুনিয়াবাসীদের জন্য কি উপহার বরাদ্দ রেখেছেন? কত সঙ্কটময়কাল তাদের অতিবাহিত করতে হবে? কারণ, এমনিতেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে না।
পিয়ারা নবী মোহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এতদসম্পর্কে বিশ্ববাসীকে অবহিত করে গেছেন। হজরত আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘দাজ্জালের আবির্ভাবের পূর্বে তিনটি দুর্ভিক্ষের বছর আসবে। এতে মানুষকে দুঃসহ অনাহার ও অনসন ভোগ করতে হবে। প্রথম বছর আল্লাহর নির্দেশ এক-তৃতীয়াংশ বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে, পৃথিবী এক-তৃতীয়াংশ শস্যাদির উৎপাদন বন্ধ করে দিবে।
দ্বিতীয় বছর আল্লাহর নির্দেশে দুই-তৃতীয়াংশ বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে যাবে এবং পৃথিবী দুই-তৃতীয়াংশ শস্যাদির উৎপাদন বন্ধ করে দিবে। তৃতীয় বছর আল্লাহর আদেশে আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করে দিবে। আকাশ হতে এক বিন্দু বৃষ্টিও বর্ষিত হবে না। সে বছর আল্লাহর আদেশক্রমে পৃথিবী শস্যাদির উৎপাদন সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করে দিবে। তা হতে কোনো সবুজ উদ্ভিদই উৎপন্ন হবে না। ফলে আল্লাহ যে (স্বল্পসংখ্যক)-কে রাখতে চাইবেন তা ব্যতীত সকল তৃণভোজী পশুই মৃত্যু মুখে পতিত হবে। এই ক্ষুধা কাতর অবস্থায় একমাত্র আল্লাহর তাসবিহই হবে ঈমানদারদের অবলম্বন। (মিশকাতুল মাসাবিহ)।
এ সময়ে শুরু হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বা পারমাণবিক যুদ্ধ। পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী রাষ্ট্রগুলো নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য দেদারসে পারমাণবিক বোমার ব্যবহার ঘটাবে। একই সাথে চলতে থাকবে করোনা মহামারি। ফলে, পৃথিবীর তিনভাগের দুইভাগ মানুষ মারা যাবে। ভয়াবহ এই সঙ্কটকালে মানুষ দু’ভাবে মারা যাবে। প্রথমত : যুদ্ধ বিগ্রহে অংশ নেয়ার ফলে। দ্বিতীয়ত : মহামারি ও স্বাভাবিক মৃত্যুবরণের মাধ্যমে।
যেদিকে তাকানো যাবে, সেদিকেই দেখা যাবে মৃত্যুর মিছিল আর মিছিল। বর্তমানে (২৭ জুলাই ২০২১ খ্রি.) এই মৃত্যুর মিছিল মহামারি করোনার কারণে দুনিয়ার সকল অংশেই পরিদৃষ্ট হচ্ছে। বাকি আছে বিশ্ব যুদ্ধটা। তা হয়তো অতিশীঘ্রই শুরু হয়ে যাবে। পারমাণবিক শক্তির অধিকারী মাতবররা ক্রমেই লম্ফজম্ফের বাকরীতি শুরু করে দিয়েছেন। এতে লক্ষণ ভালো দেখা যাচ্ছে না।
গণমানুষের একান্ত অজান্তেই হয়তো শুরু হয়ে যাবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এই যুদ্ধের ফলে পৃথিবী নামক গ্রহের অবস্থা কি দাঁড়াবে তা কল্পনা করতেও গাঁ শিউরে উঠে। দেহের ৩২ নাড়িতে ত্বড়িৎপ্রবাহ শুরু হয়। তাই বিনীতভাবে মহান আল্লাহপাকের দরবারে ফরিয়াদ করছি, হে আল্লাহ! আপনি আমাদের সব ধ্বংসের হাত হতে রক্ষা করুন। ধন-সম্পদের প্রাচুর্য, সন্তান-সন্ততি ও বংশ গোত্রের বড়াই এবং আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা হতে বিমুক্ত রাখুন-আমীন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন