শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কোটি টাকার খোঁজে দুদক

১৭টি দেশে পাচারের ৪১৬

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

মূলধনী যন্ত্রপাতি কিংবা পণ্য উৎপাদনের বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল আমদানির আড়ালে চোখের সামনেই আইনি কাঠামোর মধ্যে পাচার হচ্ছে দেশের টাকা। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গেøাবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) তথ্যানুসারে, বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন কৌশলে বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে থাকে। সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ, ওভার ইনভয়েসিং (আমদানিতে মূল্য বেশি দেখানো) ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের (রফতানিতে মূল্য কম দেখানো) মাধ্যমে এসব অর্থ পাচার হয়।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র বলছে, গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন সংস্থার কাছে অর্থপাচার সংক্রান্ত তিন হাজারের মতো প্রতিবেদন জমা রয়েছে। যা নিয়ে কাজ করছে দায়িত্বপ্রাপ্ত পাঁচটি সংস্থা। সংস্থাগুলো হলো- দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সবচেয়ে বেশি অর্থপাচার হয় থাইল্যান্ড, দুবাই, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, চীন, সুইজারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, কোরিয়া, ভারত, নেদারল্যান্ডস, বুলগেরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড ও বেলজিয়ামে। ওই সময় কাস্টম আইনে লাইসেন্স বাতিলসহ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হলেও গোয়েন্দা প্রতিবেদনের আলোকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কিংবা পাচার করা অর্থ ফেরতের দৃশ্যমান উদ্যোগ আর দেখা যায়নি।
এনবিআরের টাস্কফোর্স কমিটির প্রস্তুত করা ২০১৬ সালের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ১৭টির বেশি দেশে প্রায় ৪১৬ কোটি টাকা পাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্তের হদিস পাওয়া যায়। শুল্ক ফাঁকি ও মিথ্যা ঘোষণায় ওই টাকা বিভিন্ন দেশে পাচারের প্রমাণ পাওয়ায় শতাধিক প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দও করে এনবিআর।

এনবিআর থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, সবচেয়ে বেশি অর্থপাচার হয় থাইল্যান্ড, দুবাই, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, চীন, সুইজারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, কোরিয়া, ভারত, নেদারল্যান্ডস, বুলগেরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড ও বেলজিয়ামে। ওই সময় কাস্টম আইনে লাইসেন্স বাতিলসহ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হলেও গোয়েন্দা প্রতিবেদনের আলোকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কিংবা পাচার করা অর্থ ফেরতের দৃশ্যমান উদ্যোগ আর দেখা যায়নি। কিছু অসাধু সরকারি কর্মচারীর সহযোগিতায় কতিপয় গার্মেন্ট মালিক আমদানি ও রফতানির আড়ালে বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। এ বিষয়ে পৃথকভাবে দুটি দল গঠন করা হয়েছে। অনুসন্ধান দল প্রতিবেদন দাখিল করলে তা পর্যালোচনা করে কমিশন আইন মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক সুপারিশে অর্থপাচারে সহায়তাকারী ব্যাংক কর্মকর্তা ও শুল্ক শাখার অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেছিল এনবিআরের তদন্ত দল। অজানা কারণে ওই সুপারিশ ফাইলবন্দী হয়ে যায়। এবার দুদকের নজর ওই প্রতিবেদনে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে। অর্থপাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় ১৩২টি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার ধরন এবং তাদের আমদানি করা পণ্যের বিবরণসহ অডিট রিপোর্ট ও তদন্ত প্রতিবেদন তলব করেছে দুদক।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বরাবর পাঠানো চিঠিতে তলব করা নথিপত্রের মধ্যে রয়েছে- ১৩২টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় ৪১৬ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি, বিভিন্ন দেশে অর্থপাচার ইত্যাদি বিষয়ে টাস্কফোর্স কমিটির ২০১৬ সালের জুলাই ও অক্টোবরে দাখিল করা প্রতিবেদন ও রেকর্ডপত্র।
এছাড়া কে মরিয়ম গার্মেন্টস লিমিটেড, লাজিম পলি অ্যান্ড এক্সেসরিজ লিমিটেড, মাহমুদ এপারেলস লিমিটেড, মার্স প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ ও মার্ভেলাসি ফ্যাশন লিমিটেডের বিরুদ্ধে শুল্ক ফাঁকি ও বিভিন্ন দেশে অর্থপাচারের অভিযোগের বিষয়ে ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরের অডিট রিপোর্ট ও তদন্ত প্রতিবেদনও তলব করা হয়েছে।
অন্যদিকে, দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, কিছু অসাধু সরকারি কর্মচারীর সহযোগিতায় কতিপয় গার্মেন্ট মালিক আমদানি ও রফতানির আড়ালে বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। এ বিষয়ে পৃথকভাবে দুটি দল গঠন করা হয়েছে। অনুসন্ধান দল প্রতিবেদন দাখিল করলে তা পর্যালোচনা করে কমিশন আইন মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। প্রায় ১৩২টি প্রতিষ্ঠান ৪১৫ কোটি ৯৩ লাখ ৬৬ হাজার টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলে পাচার করেছে। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির নামে সবচেয়ে বেশি অর্থপাচার হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল আমদানি, উৎপাদন বৃদ্ধি, আমদানি ও বিপণন খাতে নতুন ক্রেতা খোঁজা, এমনকি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিশেষজ্ঞ আনা এবং বিদেশে সেমিনার আয়োজনের নামেও পাচার হয়েছে দেশের টাকা।

তবে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকে এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থপাচারের তথ্য-উপাত্ত রয়েছে বলে জেনেছি। যেহেতু লিগ্যাল চ্যানেলে টাকা পাচার হয়েছে, তাই এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া কঠিন হবে না। দুদক তার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর থেকে তথ্য পেতে শুরু করেছে। সব নথিপত্র পেলে অর্থপাচারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে। এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন প্রতিষ্ঠানের মালিক, তাদের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা। প্রভাবশালী ওই মালিকরা কাগজপত্রে স্ত্রী ও সন্তানদের নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন