শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আল-কোরআনের এই কি মর্যাদা আমাদের কাছে!

মুহাম্মদ হেদায়াতুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

প্রিয় রাসূলে কারীম (সা.) বলেছেন-‘আহসানুল কালামি কালামুল্লাহ’ (সর্বোত্তম কালাম আল্লাহর কালাম) অন্যত্র বলেছেন- ‘খাইরু বিকাঈল আরদি মাসাজিদুহ’ (জমিনের সর্বোত্তম স্থান মসজিদ)।

আল-কোরআনের এই শ্রেষ্ঠত্বের কথা শুধু মুসলমানরাই নয় বরং পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সেই জাহেলী ভাষাবিদদের আত্মসমর্পণের ঘোষণা ‘লাইসা হাযা-মিন কালামিল বাশার’-এর সূত্র ধরে এযাবত বিশ্বের যে কোনো ধর্মাবলম্বী কোরআনের শত্রু-মিত্র সকলেই স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন।

আমরা মুসলমানরা বাস্তব জীবনে যতটুকুই মানি আর না মানি, কথাটি কিন্তু মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি। অন্তত যারা মসজিদের মুসল্লী তারা তো অবশ্যই বিশ্বাস করে যে, জীবনে-মরণে প্রধান অবলম্বন আল কোরআন এবং একমাত্র কেন্দ্রস্থল সেই বাইতুল্লাহর প্রতিচ্ছবি মসজিদ ঘর।

আল্লাহ ওয়াদা করেছেন যাদের অন্তরে কোরআন থাকবে জাহান্নামের আগুন তাদেরকে স্পর্শ করবে না। আর যাদের অন্তর মসজিদের সাথে লেগে থাকবে হাশরের ময়দানে তারা আরশের ছায়া পাবে। তাই কোরআনের সঙ্গে এবং মসজিদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আত্মার সম্পর্ক এবং হৃদয়ের গভীরের সম্পর্ক।

কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্য ও আফসোসের ব্যাপার হলো আমাদের মসজিদগুলোতে কোরআন মাজীদের দুরবস্থার দিকে তাকালে তা বিশ্বাস হয় না; বরং এমন অবস্থা হয়ে থাকে যা দেখলে শত্রুদেরও করুণা না হয়ে পারবে না। শত্রুদেরও করুণা হবে কোরআনের প্রতি। করুণা হবে মসজিদের প্রতি-সর্বোপরি আমাদের মুসলমান নামের মানুষগুলোর প্রতি।

কারণ, না মানলেও কোরআনের মর্যাদা সম্পর্কে এখন তারাও অনেকটা অবগত। একদম অজপাড়া গাঁয়ের জীর্ণ ছাপড়ার মসজিদ বলুন আর শহরের অভিজাত এলাকায় কোনো আলীশান মসজিদ বলুন, অধিকাংশ মসজিদে ঢুকলেই কোরআন মজীদগুলোর যে করুণ দৃশ্য চোখে পড়ে তা অবাক করার মতো এক লজ্জাজনক ব্যাপার।

কিছু ছেড়া-ফাড়া, কিছু বাঁধাই ছুটা, সেলাই খোলা- এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। আর ধুলামলিন যে কী পরিমাণ হয় তা তো সবার চোখের সামনে। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর হাত না লাগলে যা হবার তাই হয়ে থাকে। ধুলা-বালি জমতে জমতে ময়লার এমন স্তর পড়ে যায়, যা শুধু মসজিদের মতো পবিত্র জায়গাই নয় মানববসতির যেকোনো একটি সাধারণ পরিবেশেও বেমানান। যে মসজিদের এমন করুণ পরিস্থিতি এবং যে কোরআন মাজীদ আমাদের হাতে এমন নিগ্রহের শিকার সেই মসজিদে গিয়ে সেই কোরআন থেকে কীভাবে আমরা আত্মার পরিশুদ্ধির দীক্ষা নেব? অন্তরের পরিচ্ছন্নতার খোরাক পাব?

নিশ্চয়ই কোরআন ও মসজিদের সঙ্গে ভালোবাসার বিষয়টা ঈমানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিন্তু তবুও বলতে হয় এবং বাস্তবতাও এটাই যে, একটি মসজিদে শত শত নিয়মিত মুসল্লী আসেন। একজন মুসল্লীও যদি এমন থাকতেন যার অন্তরে কোরআন ও মসজিদের কিংবা যেকোনো একটির পূর্ণ ভালোবাসা আছে অথবা তার গুরুত্বের উপলব্ধিটুকু অন্তত আছে তাহলেও মনে হয় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারত না।

কারণ আমরা যারা শহরের বসতিতে কিংবা গ্রামের জীর্ণ কুটিরে বাস করি তাদের কারো ঘরেই আমার মনে হয় সাধারণ একটি বই কিংবা একটি খাতা এমন অযত্ন অবহেলায় ধুলামলিন হয়ে পড়ে থাকার কোনো সুযোগ কখনো পায় না। পড়ে থাকা বস্তুটা যদি আদবযোগ্য হয় তাহলে অন্তত কুঁড়ে ঘরের শ্রী রক্ষার জন্য হলেও তা সঙ্গে সঙ্গেই গুছিয়ে রাখা হয়। আর আমরা যারা আলীশান প্রাসাদের বাসিন্দা তাদের প্রাসাদে তো এমন দৃশ্য কখনো কল্পনা করাও কঠিন। অথচ যে মসজিদের কথা বলছি আমরা কিন্তু সে মসজিদেরও বাসিন্দা। শুধু ইহকালের নয় চিরকালের বাসিন্দা।

একটু লক্ষ করে দেখুন তো আপনার বুকসেলফে গল্প-উপন্যাসের যে বইগুলো আছে তার উপরও কি এরকম ধুলাবালি কখনো জমেছে যা আপনার মসজিদের কোরআন মাজীদের ওপর জমে আছে। আপনার কোনো অসুস্থতার সময় বা জীবনের সবচে ব্যস্ততার সময়েও কি আপনার বসবাসের কামরা এবং কামরার বইপত্র বা অন্য কোনো আসবাবপত্র এমন এলোমেলো হয়ে পড়েছিল যেমন এলোমেলো হয়ে বছরের পর বছর পড়ে আছে আপনার মসজিদের কোরআন মজীদগুলো।

এখন যদি আমরা ভাবি যে, এটা আসলে কোরআনের প্রতি মসজিদের প্রতি আমাদের হৃদ্যতার অভাব, ভালোবাসার অভাব, সর্বোপরি আমাদের ঈমানের দুর্বলতা তবে কি আমাদের এ ভাবনা অমূলক হবে? অবশ্য শহরের এবং গ্রামের বিশেষ বিশেষ মসজিদগুলো যেহেতু সাধারণ সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা এবং কার্যকরী কমিটির অধীনে থাকে তাই এ সমস্যার সমাধানে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার হয় তা যেকোনো সাধারণ মুসল্লীর পক্ষে অনেক ক্ষেত্রে একক ও পরিপূর্ণভাবে নেওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। যদিও যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব ততটুকুও আমরা সাধারণত করি না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
মনিরুল ইসলাম ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:০৬ এএম says : 0
করোনাভাইরাসের এ মহামারীতে আল কোরআনের তিলাওয়াত, অর্থ বোঝা, তাফসির পড়ায় মনোনিবেশ করা প্রয়োজন
Total Reply(0)
তানিম আশরাফ ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:০৬ এএম says : 0
পৃথিবীতে একমাত্র সন্দেহমুক্ত আসমানি কিতাব হলো আল কোরআন। এ কোরআন প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর নাজিল হয়েছে রমজানে। কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘রমজান মাস যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে যা মানুষের জন্য হেদায়াতস্বরূপ এবং হেদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে।’ সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫।
Total Reply(0)
গাজী ফজলুল করিম ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:০৭ এএম says : 0
আল কোরআন পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যয়নকারী। ‘আর আমি তোমার প্রতি কিতাব নাজিল করেছি যথাযথভাবে, এর আগের কিতাবের সত্যয়নকারী ও এর ওপর তদারককারীরূপে।’ সুরা আল মায়েদা, আয়াত ৪৮।
Total Reply(0)
সাইফ আহমেদ ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:০৭ এএম says : 0
কোরআন পাঠকারীর পিতা-মাতাকে কিয়ামতের ময়দানে হাশরে নুরের টুপি পরানো হবে
Total Reply(0)
বদরুল সজিব ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:০৮ এএম says : 0
রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি সর্বোত্তম যে কোরআন শেখে ও অন্যকে শিক্ষা দেয়।’ বুখারি। রসুল (সা.) বলেছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী হলো আল্লাহর বাণী। আর সর্বশ্রেষ্ঠ পথ হলো মুহাম্মাদ (সা.)-এর দেখানো নুরানি পথ। মুসনাদে আহমাদ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন