কথিত অনলাইন শপিং প্রতিষ্ঠান ‘ইভ্যালি ডট কম লি.’র অনিয়ম-দুর্নীতি যাচাইয়ে তলবকৃত নথি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হাতে এখনও পৌঁছেনি। প্রায় এক মাস আগে রেকর্ডপত্র চাওয়া হলেও হস্তগত হয়নি রেকর্ডপত্র। ফলে ইভ্যালির কর্ণধার মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে এখন অবধি জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি করতে পারেনি দুদক। তবে প্রয়োজনে তাদের কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবেÑ মর্মে জানিয়েছে সংস্থাটি।
রাসেল ও শামীমাকে গ্রেফতারের পর গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের বিষয়ে দুদকের অগ্রগতি জানতে চাওয়া হয়। জবাবে দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, ইভ্যালির অনিয়মের অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে তথ্য-উপাত্ত চেয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছে অনুসন্ধান টিম। ইভ্যালি নিয়ে অন্যান্য সংস্থাও কাজ করছে। আমাদের নিজস্ব অনুসন্ধান এখনো চলমান। আইন অনুযায়ী অপরাধ পাওয়া গেলে যাকে প্রয়োজন অনুসন্ধান টিম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ দ্বিতীয় দফায় গ্রাহকের দায়-দেনাসহ ব্যবসার যাবতীয় নথিপত্র চেয়ে গত ২২ আগস্ট ইভ্যালি কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠায় সংস্থাটির অনুসন্ধান টিম।
এর আগে চলতিবছর জুলাইয়ে ইভ্যালি ও তার মালিকদের ব্যক্তিগত আয়কর ফাইল, অডিট রিপোর্ট, ইভ্যালির নিবন্ধিত মার্চেন্ট তালিকা, পেন্ডিং অর্ডারের তালিকা ও ব্যাংক হিসাব লেনদেন সংক্রান্ত বেশকিছু রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে। এসব যাচাই-বাছাই শেষে দ্বিতীয় দফায় আরো কিছু নথিপত্র তলব করা হয়। এসব নথি পাওয়ার পর যাচাই শেষে ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও এমডি মো. রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরিকল্পনা ছিল দুদকের অনুসন্ধান টিমের। এরই মধ্যে গতকাল তারা র্যাবের অভিযানে গ্রেফতার হয়েছেন।
দুদকের সর্বশেষ চিঠিতে ইভ্যালি’র কাছে চাওয়া নথিপত্রের মধ্যে রয়েছে, কোম্পানির সব ধরনের লাইসেন্স, ব্যবসায়িক মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য, কতগুলো ক্রয় আদেশের বিপরীতে পণ্য সরবরাহ করা হয়নি, ক্রেতার আদেশের বিপরীতে বকেয়া কীভাবে হলো, ব্যাংকের ঋণসহ সব রকম দায়-দেনার হিসাব, কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পর থেকে কত টাকার ভ্যাট, ট্যাক্স দেয়া হয়েছে, বিভিন্ন অর্থবছরে কোম্পানির নিরীক্ষা প্রতিবেদন, কোম্পানির সার্বিক খরচের হিসাব এবং কোম্পানি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে খরচ হওয়া অর্থের উৎস।
বিভিন্ন ডিসকাউন্ট অফার দিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গ্রাহকদের পণ্য না দেয়া কিংবা অন্য পণ্য প্রদান করা, রিফান্ডের অর্থ পেতে দেরি হওয়া, যথাসময়ে গ্রাহকসেবা না পাওয়া ইত্যাদি অভিযোগের অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুদক। সংস্থার সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী ও উপসহকারী পরিচালক মুহাম্মদ শিহাব সালামের সমন্বয়ে গঠিত টিম বিষয়টি অনুসন্ধান করছে।
এর আগে গত ৪ জুলাই ইভ্যালির বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের চার প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছেÑ দুর্নীতি দমন কমিশন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।
দুদকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ইভ্যালির বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির মোট সম্পদ ৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার ৮৪৬ টাকা (চলতি সম্পদ ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা) এবং মোট দায় ৪০৭ কোটি ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯৪ টাকা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন