নানা চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে কোটি কোটি হাতিয়ে নিয়েছেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরীন ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল। গ্রাহকদের টাকায় আয়েশি জীবন কাটাতেন তারা। প্রতিমাসে বেতন নিতেন ৫ লাখ টাকা করে, চড়তেন নামিদামি ব্র্যান্ডের গাড়িতে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানতে রিমান্ডে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাদের। কিন্তু তারা পুলিশকে কোনো সদুত্তর দিচ্ছেন না। গতকাল তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
এদিকে, শামীমা নাসরীন ও মো. রাসেল গ্রেফতারের পর ইভ্যালির সকল অফিসের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল ফেসবুক ভেরিফায়েড পাতায় ইভ্যালি এক ঘোষণায় বলেছে, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় শনিবার থেকে ইভ্যালি এমপ্লয়িগণ নিজ নিজ বাসা থেকে অফিস কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। হোম অফিস পদ্ধতিতে ইভ্যালির সব কার্যক্রম স্বাভাবিক নিয়মে চলমান থাকবে।
এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাত ১টা ১৮ মিনিটে ইভ্যালির ফেসবুক পেজে এক জরুরি নোটিশ দিয়ে ‘ইভ্যালি টি-টেন’ অফারের অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। ওই নোটিশে ইভ্যালি জানায়, শনিবার টি-টেন-এ আপনাদের রেসপন্সে আমরা অভিভূত। আমাদের পাশে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের প্রধান দুজন সিগনেটরি-সিইও এবং চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে, আমাদের সেলারদের রেগুলার বিল দিতে পারছি না। এজন্য আমাদের স্বাভাবিক ডেলিভারি কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে। তাই আপনাদের করা ১৭ সেপ্টেম্বরের টি-টেন-এর সব অর্ডার আপাতত রিকোয়েস্ট হিসেবে জমা থাকবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া মাত্রই আপনাদের টি-টেন-এর সব অর্ডার কনফার্ম করা হবে। অর্ডার কনফার্ম হলেই আপনারা পেমেন্ট সম্পন্ন করতে পারবেন।
এদিকে, গত শুক্রবার রাতে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল থানায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে তাকে রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে আবারও গুলশান থানায় নেওয়া হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই ওহিদুল ইসলাম বলেন, ইভ্যালির এমডি মোহাম্মদ রাসেলের বড় কোনো সমস্যা হয়নি। হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক জানিয়েছেন, গত দুইদিনে সামান্য অনিয়মের কারণে তার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়েছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে আবারও থানায় আনা হয়।
এর আগে শুক্রবার বিকেলে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলামের আদালতে মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে হাজির করা হয়। এরপর গুলশান থানায় প্রতারণার অভিযোগে করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশার থানার এসআই ওয়াহিদুল ইসলাম। অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিটন তাদের রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক আসামিদের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে তাদের রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ডে দফায় দফায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় তারা গুরুত্বপূণ কিছু তথ্য নিয়েছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে তথ্য প্রকাশ করতে অপারগত প্রকাশ করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় আরিফ বাকের নামে ইভ্যালির এক গ্রাহক মামলা করেন। মামলার পর বিকেলেই রাসেলকে গ্রেফতার করে র্যাব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন