শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সম্পত্তি বিক্রি করতে পারবে না ইভ্যালি

হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা : অর্থ ফেরত চেয়ে পৃথক রিট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০৪ এএম

কথিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘ইভ্যালি’র স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি এবং হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ইভ্যালি কেন অবসায়ন করা হবে না-এই মর্মে রুল জারি করেন আদালত। ফরহাদ নামক এক গ্রাহকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহসিব হোসেন। তিনি বলেন, ফরহাদ হোসেন নামে একজন গ্রাহক গত মে মাসে ইভ্যালিতে একটি ইলেকট্রনিক পণ্য অর্ডার করেন। অর্ডারের সময়ই পণ্যের সম্পূর্ণ মূল্য তিনি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করেন। বিনিময়ে ইভ্যালি তাকে একটি রশিদ দেয়।
কিন্তু অর্ডার দেয়ার পর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও ইভ্যালি পণ্যটি তাকে হস্তান্তর করেনি। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা পণ্য দেয়ার আশ্বাস দেয়। কিন্তু টাকা রিফান্ড বা পণ্য কোনোটিই এখন পর্যন্ত দেয়নি। এ প্রেক্ষাপটে তিনি হাইকোর্ট প্রতিকার চেয়ে আবেদন দেন। আবেদনে তিনি ইভ্যালির অবসায়ন চান।
আইনজীবী বলেন, ফরহাদ হোসেনের আবেদনটি আদালত এডমিট করে আদেশ দেন। আদেশে আদালত বলেছেন, ইভ্যালির যত সম্পদ আছে সেটা যেন বিক্রি অথবা ট্রান্সফার (হস্তান্তর) করা না হয়। একইসঙ্গে ইভ্যালিকে কেন অবসায়ন করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন আদালত। এ ব্যাপারে আদালত একটি নোটিশ ইস্যু করেছেন। বিবাদীদের নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

গ্রাহকের আবেদনে ইভ্যালি লিমিটেড, রেজিস্ট্রার জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস, বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, কনজুমার রাইটস প্রটেকশন ব্যুরো, নগদ, বিকাশ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, ই-ক্যাব অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বেসিস, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্য সচিবকে বিবাদী করা হয়।
এদিকে ই-কমার্সের বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত চেয়ে হাইকোর্টে পৃথক একটি রিট করা হয়েছে। প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থপাচার বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। রিটে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির পল্লব এ রিট করেন।

রিটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ব্যংকের গভর্ণর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক, প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়।

রিটে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে অনলাইনভিত্তিক আর্থিক লেনদেন তাৎপর্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি, ব্যাংকিং খাতে অনলাইন পেমেন্টের সুবিধা, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধির সুযোগে ব্যাঙের ছাতার মতো ই-কমার্স ভিত্তিক অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে ইভ্যালি, ধামাকা, আলেশা মার্ট, কিউকম, দালাল, ই-অরেঞ্জ, আলাদিনের প্রদীপ, সিরাজগঞ্জ শপ, দারাজ ইত্যাদি উল্লেখ যোগ্য।

গত কয়েক বছরে এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর কার্যকর নজরদারির অভাবের সুযোগে গ্রাহক আকর্ষণে বিভিন্ন অনৈতিক অফার, ডিসকাউন্ট নামে গ্রাহকদের প্রলুব্ধ করে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে। এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আর্জি জানানো হয়েছে রিটে।

আইনজীবী বলেন, ইভ্যালি, ধামাকা, আলেশা মার্ট, কিউকম, দালাল, ই-অরেঞ্জ, আলাদিনের প্রদীপ, দারাজ প্রতিষ্ঠার মাত্র দুয়েক বছরের মধ্যে বিভিন্ন অফারের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা মূলত মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতিতে এই অর্থ সংগ্রহ করে। বিভিন্ন পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী এসব কোম্পানি বিপুল অর্থ ইতোমধ্যে বিদেশে পাচার করেছে।

তিনি বলেন, ই-ওয়ালেট, গিফ্ট কার্ডসহ আরো অন্যান্য অ-অনুমোদিত পদ্ধতিতে লেনদেন করে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে লাখ লাখ গ্রাহকদের সর্বস্বান্ত করেছে। এসব অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত দেশের প্রচলিত আইন ভঙ্গ করেছে সরকারি দফতরগুলোর নাকের ডগায়। কিন্তু তারা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বছরের পর বছর নোটিশগ্রহীতাদের কার্যকর নজরদারির অভাবে এসব কোম্পানিগুলো আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

আইনজীবী বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সরকারি দফতরগুলো তাদের সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগে গাফিলতি ও ব্যর্থতার ফলে বাংলাদেশের লাখ লাখ অনলাইন গ্রাহক যাদের বেশিরভাগই তরুণ আজ সর্বস্বান্ত। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ই-কমার্স ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যে সম্ভাবনা সেটিও আজ প্রশ্নবিদ্ধ। কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারে না।

সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসারপ্রাপ্ত বিচারপতির সমন্বয়ে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে যাদের গাফিলতির কারণে লাখ লাখ গ্রাহক সর্বস্বান্ত হয়েছে তাদের চিহ্নিত করে আইন আনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলেছেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির পাল্লব। এছাড়া দুদকের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ইভ্যালি, ধামাকা, আলেশা মার্ট, কিউকম, দালাল, ই-অরেঞ্জ, আলাদিনের প্রদীপ, দারাজ ইত্যাদি কর্তৃক পাচার করা অর্থের পরিমাণ নিরূপণ করে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা, বাংলাদেশ ব্যাংককে এ পর্যন্ত ইভ্যালি, ধামাকা, আলেশা মার্ট, কিউকম, দালাল, ই-অরেঞ্জ, আলাদিনের প্রদীপ, দারাজ ইত্যাদিতে মোট কত টাকা লেনদেন হয়েছে এবং গ্রাহকরা মোট কত টাকা দিয়েছে তা চিহ্নিত করার কথা বলা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন