শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গুলিস্তানে যাত্রীরা জিম্মি

ফ্লাইওভারে চলাচল করা বাসের ভাড়া বাড়িয়েছে মালিকরা প্রতিবাদ করলেই গুণ্ডাবাহিনী দিয়ে নির্যাতন করা হয়

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

গুলিস্তান থেকে বাসে উঠে সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ি, কাজলা, শনির আখড়া, রায়ের বাগ, মাতুয়াইল, মৃর্ধাবাড়ি, ডেমরা, সারুলিয়া সেখানেই নামেন ভাড়া গুনতে হবে ২০ টাকা। অথচ গুলিস্তান থেকে যাত্রাবাড়ি, কাজলা সরকারি হিসেবে বাসভাড়া ছিল ৫ টাকা এবং শনির আখড়া পর্যন্ত বাস ভাড়া ছিল ১০ টাকা। ফ্লাইওভার চালু হওয়ার পর বাস মালিকরা নিজেরাই ৫ টাকা করে বাস ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। যানজট থেকে রক্ষা পেতে যাত্রীরা সে বাড়তি ভাড়া মেনে নেয়। কিন্তু করোনা পরবর্তী সময়ে হঠাৎ করে বাস ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বাসের মালিকরা। ফলে প্রতিদিন এই রুটে যাত্রীদের সঙ্গে বাসের ড্রাইভার, হেলপারদের ঝগড়া বিবাদ হচ্ছে। প্রায়ই অতিরিক্ত ভাড়া দেয়া নিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে যাত্রীদের হাতাহাতি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যাত্রীরাই বেশি মার খাচ্ছেন। কারণ যে বাসে ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বিতণ্ডা হয়, বাসের ড্রাইভার ও হেলপাররা এ নিয়ে মালিককে ফোন করলেই মালিকের পোষা কয়েকজন গুণ্ডা চলে এসে যাত্রীদের ওপর চড়াও হন। এ দৃশ্য নিত্যদিনের। অথচ সরকার করোনা কারণে দুই সিটে একজন যাত্রী শর্তে গত বছরের ৩১ মে সরকার বাস ভাড়া ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছিল; পরবর্তীতে তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
সন্ধ্যা হলেই গুলিস্তানে হাজার হাজার লোক জরো হয়। দিনভর বিভিন্ন যায়গায় কাজ করার পর তারা ঘরে ফিরতে গুলিন্তানে এসে বাসে উঠেন। সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ বাসে উঠেন। কিন্তু তাদের প্রত্যেককেই গুনতে হয় বাড়তি ভাড়া। ১০ টাকা দূরত্বের ভাড়া তাদের ২০ টাকা দিতে হয়। বেশি ভাড়া না দিলে তারা ঘরে ফিরতে পারবেন না। বাস মালিকরা সিণ্ডিকেট করে নিজেরাই ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা সরকারের আইন কানুনের কোনো তোয়াক্কাই করেনি। গত এক মাস সরেজমিন ঘুরে এবং বাসে যাতায়াত করে এ চিত্র পাওয়া যায়।
গুলিস্তান টু সোনারগাঁও রুটে শ্রাবণ পরিবহণ। এই পরিবহনের বহরে রয়েছে শত শত বাস। আগে ফ্লাইওভার হয়েই গুলিস্তান থেকে কাজলা ১০ টাকা ভাড়া নেয়া হতো। আবার মতিঝিল থেকে কাজলা ভাড়া নেয়া হতো ১০ টাকা। এখন সব বাসেই ২০ টাকা ভাড়া। হেদায়েত নামের এক ড্রাইভার জানালেন, তাদের করার কিছুই নেই। মালিকরা নিজেরাই বাসের ভাড়া বৃদ্ধি করেছেন। ফলে তারা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে বাধ্য। রায়েরবাগ থেকে প্রতিদিন নবাবপুর রোডের দোকানে আসা যাওয়া করেন মোবারক হোসেন। গতকাল তিনি বলেন, বাসের ভাড়া বাড়ানোর আগে ঘোষণা দেয়া উচিত ছিল। তা না করে বাসের ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। যাত্রীদের কেউ প্রতিবাদ করলেই বাস মালিকদের গুণ্ডা বাহিনী এসে তাকে ধরে নিয়ে যায় এবং নির্যাতন করে টাকা পয়সা কেড়ে নিয়ে ছেড়ে দেয়। আমরা কার্যত এই রুটের বাস মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে গেছি। শ্রাবণ বাসে কথা হয় রহিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি শনিরআখড়া থেকে সাপ্তাহে ৬ দিন গুলিস্তান যাতায়াত করেন। আক্ষেপ করে বললেন, আমরা এই বাসের মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে গেছি। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বাস ভাড়া বাড়িয়েছে। অথচ সরকারের দায়িত্বশীলদের এ নিয়ে কোনো মাথাব্যাথা নেই। সরকার তদারকী না করায় যাত্রীদের বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
তবে শ্রাবণ বাসের একাধিক ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বলে জানা, তারা নিজেরা সিটিং সার্ভিস করেছেন। বাসে দাঁড়নো অতিরিক্ত যাত্রী না তোলায় সিটে বসা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন। অন্যান্য বাসগুলোতে প্রায় অভিন্ন চিত্র। যাত্রীদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করা হচ্ছে; অথচ দেখার যেন কেউ নেই।
জানা যায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং কোনো গাড়িতে ধারণ ক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি যাত্রী পরিবহন না করার সিদ্ধান্ত হওয়ায় বাস ভাড়া বাড়িয়েছিল সরকার। চলতি বছরের ৩০ মার্চ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণপরিবহনের ভাড়া ৬০ ভাগ বৃদ্ধির ঘোষণা দেন। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এই আদেশ আগামী দুই সপ্তাহ কার্যকর থাকবে’। এর আগে গত বছরের ৩১ মে সরকার বাস ভাড়া ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছিল। অর্ধেক যাত্রী বহন করায় বাস মালিকদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। এর আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দুই সপ্তাহের জন্য ১৮ দফা নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সীমিত পরিসরে আগামী ১১ আগস্ট চালু হয় গণপরিবহন। সে সময় বাড়তি ভাড়া নেয়া যাবে না ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু গণপরিবহণ বাড়তি ভাড়া আদায় করছে।
গণপরিবহণের ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, ১৭০টি রোডে পর্যবেক্ষণ করে তারা দেখেছে ঢাকা শহরের প্রায় ৮৭ ভাগ যানবাহন যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। সংগঠনটির মহাসচিব মো: মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, জ্বালানীর মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে গনপরিবহনের ভাড়া ইচ্ছেমতো বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় যাত্রীদের সেবার বদলে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। ঢাকায় যে গণপরিবহন চলছে এগুলোর সেবার মান অত্যন্ত নিম্নমুখী। এই গণপরিবহনে যাত্রাদের যাতায়াত করার ন্যূনতম পরিবেশ নেই। তিনি আরো বলেন, সাধারণ যাত্রীদের জিম্মি করে পরিবহন মালিকরা যেমন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে, তেমনি সরকারের তরফ থেকে এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে তখনও তার প্রতিক্রিয়ায় বাস বন্ধ করে সাধারণ যাত্রীদের হয়রানির মধ্যে ফেলে তারা তাদের প্রতিক্রিয়া জানায়। বাংলাদেশে চলমান গণপরিবহনগুলো আইনকানুন কিছুই তোয়াক্কা করেনা। আর এখানে মালিকদের এমন একটা শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে যারা সরকারের কোন না কোন রাজনৈতিক আশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Kamrul Tarek Hasan ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:১৬ এএম says : 0
যাত্রীদের পকেট কাটছে সিটিং সার্ভিসগুলো
Total Reply(0)
Manika Nandi ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:১৬ এএম says : 0
আমার একটা দাবি সরকার যেন আগের মত গাড়ী ভাড়া করে দিল ভালো হবে জনগণের
Total Reply(0)
Sadhan Debnath ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:১৬ এএম says : 0
যাত্রী ভারা কমানো হোক ।দিগোন ভারা কাটছে গাড়ি ওযালা গন।
Total Reply(0)
Sumit Kar ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:১৭ এএম says : 0
এর সুষ্ঠু সমাধান হয়া দরকার , সবাইকে এক হতে হবে।
Total Reply(0)
Tutul Ahmmed ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:১৮ এএম says : 0
দুই মন্ত্রীরে শ্রমিক সংগঠন থেকে বাদ দিলেই সব সমাধান হবে ।তারা দুজনেই নাটের গুরু উপরে বসে তারাই কলকাঠি নাড়ে আর ভোগান্তিতে আছি আমরা সাধারন জনগন ।
Total Reply(0)
MD Alamgir Hossain Asa ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:১৮ এএম says : 0
আরে এক জন দুই জনে কাজ হবে না বেশি টাকা চাইলে সবাই মিলে দরে মার তাদেরকে
Total Reply(0)
Shafayat Sohail ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৭:৪৫ এএম says : 0
কিছু ........... type passenger আছে যারা আগ বাড়ায় বেশি vara দেয়
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন