বিখ্যাত সাহাবী হযরত সালমান ফারসী রাযিয়াল্লাহু আনহুর প্রসিদ্ধ ঘটনাটি তো সকলেরই জানা আছে। তিনি মদীনায় এক ইহুদীর গোলাম ছিলেন। নবীজী তাকে বললেন, তুমি আযাদ হওয়ার জন্য তোমার মনিবের সাথে ‘মুকাতাবা’ চুক্তি করো।
সেই ইহুদী সালমান ফারসী রাযিয়াল্লাহু আনহুকে শর্ত দিলো, নিজের পক্ষ থেকে তিনশ’ খেজুর গাছ রোপণ করে দিলে এবং চল্লিশ উকিয়া স্বর্ণ দিলে দাসত্ব থেকে মুক্তি পাবে। সালমান ফারসী রাযিয়াল্লাহু আনহু নবীজীকে বিষয়টি জানালে নবীজী সাহাবায়ে কেরামকে সহযোগিতা করতে বললেন। সাহাবায়ে কেরামের কেউ বিশটি, কেউ পনেরটি, কেউ দশটি করে খেজুর গাছের চারা দিলেন। তারপর নবীজী নিজ হাতে সেগুলো রোপণ করে দিলেন। (দ্র. মুসনাদে আহমাদ : ২৩৭৩৭)।
এভাবে নবীজীসহ সাহাবায়ে কেরাম মিলে হযরত সালমান ফারসী রাযিয়াল্লাহু আনহুকে দাসত্ব থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করলেন। তিনশ’ খেজুর গাছের চারা তাঁর একার পক্ষে যোগাড় করা অনেক কঠিন ছিল। কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম সকলে কিছু কিছু করে চারা দেওয়ায় খুব সহজেই তাঁর তিনশ’ চারার ব্যবস্থা হয়ে গেল। কেবল চারা দিয়েই সাহাবায়ে কেরাম ক্ষান্ত হননি। সেগুলোর জন্য গর্তও খুঁড়ে দিয়েছেন। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম স্বয়ং সেগুলো রোপণ করে দিয়েছেন।
হাদীসে আরেকটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে : এক আনসারী সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে তীব্র অভাব-অনটনের কথা জানালেন। নবীজী বললেন, তোমার কাছে যা আছে নিয়ে এসো। আনসারী সাহাবী একটা মোটা কাপড় আর বাটি নিয়ে এসে বললেন, এই কাপড়ের এক অংশ বিছিয়ে আরেক অংশ গায়ে দিয়ে আমরা ঘুমাই, এই বাটি দিয়ে পানি পান করি।
নবীজী (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে বললেন, এগুলো এক দিরহাম দিয়ে আমার কাছ থেকে কে কিনবে? একজন বললেন, আমি। নবীজী (সা.) বললেন, এক দিরহামের বেশি দিয়ে কে নেবে? একজন বললেন, আমি দুই দেরহাম দেব। নবীজী (সা.) দুই দেরহাম দিয়ে তার কাছে সেগুলো বিক্রি করে দিলেন।
তারপর ওই আনসারী সাহাবীকে বললেন, নাও, এক দিরহাম দিয়ে তোমার পরিবারের জন্য খাবার কিনবে। আর এক দেরহাম দিয়ে কুঠার কিনবে। তারপর ওই উপত্যকায় গিয়ে কাঁটাদার ও শুকনো ডাল কাটবে (এবং বিক্রি করবে)। দশ দিন পর এসে অবস্থা জানিয়ো। ওই সাহাবী দশ দিন পরে এসে বললেন, আপনি আমাকে যে নির্দেশ দিয়েছেন, তাতে আমার অনেক বরকত হয়েছে। (শরহু মাআনিল আছার, তহাবী : ৪২৪৬)।
এখানে দেখুন, ওই আনসারী সাহাবীর ঘরে তীব্র অভাব ছিল, খাবার কিছু ছিল না। আয়-রোযগার করারও কোনো ব্যবস্থা ছিল না। নবীজী বললনে, তোমার যা আছে, তা-ই নিয়ে এসো। সাহাবী একটি মোটা কাপড় আর একটি বাটি নিয়ে এলেন, যা আপাত দৃষ্টিতে মূল্যহীনই ছিল। কিন্তু নবীজী নিলাম ডেকে সেটা বিক্রি করলেন। তারপর ওই টাকা দিয়ে সাহাবীর পরিবারের খাদ্যও জোগাড় হলো এবং তার জীবিকার ব্যবস্থাও হলো।
এর অনুসরণে আমরাও বিভিন্ন পন্থায় মানুষকে সাহায্য করতে পারি। কাউকে গৃহপালিত পশু কিনে দিয়ে। কাউকে সেলাই মেশিন কিনে দিয়ে। কাউকে নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী কাঁচামাল কিনে দিয়ে। কোনো অসচ্ছল নারীকে সেলাইয়ের কাজ শিখিয়ে দিয়ে। অথবা কারও কাজে লাগবে এমন কিছু নিজের কাছে থাকলে তাকে সেটা দিয়ে। আরো নানান উপায় হতে পারে।
মানুষকে সহযোগিতা করতে গিয়ে সাহাবায়ে কেরাম ও আমাদের আকাবির-আসলাফ নাম যশ খ্যাতির কথা ভাবেননি। নিজের সুনাম প্রচার করার জন্য এসব করেননি। সুখ্যাতি পাওয়ার আশায় করেননি। বরং যাদের যশ ছিল, তারা আরও গোপনে কাজ করেছেন। চেহারা ঢেকে কাজ করেছেন, যেন চেহারা দেখে কেউ চিনে না ফেলে। কেউ কেউ নাম জিজ্ঞেস করলে কৌশলে এড়িয়ে গেছেন, যেন অপরজন চিনতে পেরে লজ্জিত না হয়।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন, যেন আমরা হাদীসের শিক্ষা গ্রহণ করে মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারি। কোনো নেক কাজই ছোট করে দেখতে নেই। কখন কোন নেক কাজ আল্লাহ তাআলার দরবারে কবুল হয়ে যাবে আর সেটাই জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে। তাছাড়া মানুষকে সহযোগিতা করা কোনো ছোট আমল নয়। অনেক হাদীসে এর ফজিলত ও ফায়েদার কথা বলা হয়েছে। আখেরাতে এর বিনিময়ে বিপুল সওয়াব লাভ হবে ইনশাআল্লাহ! এ লেখার শুরুতে আমরা পড়ে এসেছি, মানুষকে সহযোগিতা করলে আল্লাহও আমাদেরকে সাহায্য করবেন। আল্লাহ তাআলাই উত্তম তাওফীকদাতা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন