মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

তাওহীদ ও রিসালাতের বিশ্বাস

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০১ এএম

দ্বীন ইসলামের মূল হচ্ছে সকল নবী এবং রাসুলগণের একক ও সম্মিলিতভাবে ধর্মীয় জীবন যাত্রার সামষ্টিক রূপ। এই মূল দু’টি কথার ওপর নির্ভরশীল। এর একটি হচ্ছে পরিপূর্ণ তাওহীদের বিশ্বাস এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে সামগ্রিকভাবে রিসালাতের বিকাশ।

মোট কথা, আল্লাহ তায়ালাকে তাওহীদের সকল গুণাবলীর মাঝে পরিপূর্ণরূপে ও শরীকহীন রূপে মেনে নেয়া এবং তার পয়গম্বর ও রাসূলগণেকে সমভাবে সত্যাবাদী এবং সত্যাশ্রয়ী স্বীকার করা। কোরআনুল কারিমে এই বিশেষত্বটি এভাবে তুলে দরা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে : ‘তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দীন চায়? যখন আকাশে ও পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে সমস্তই স্বেচ্ছায় অথবা অনীচ্ছায় তার নিকট আত্মসমর্পণ করবে। আর তার দিকেই তারা প্রত্যানীত হবে।

বলুন, আমরা আল্লাহ হতে এবং আমাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তার বংশধরগণের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীগণকে তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে প্রদান করা হয়েছে, তাতে ঈমান এনেছি। আমরা তাদের মধ্যে কোনো তারতম্য করি না এবং তারই নিকট আত্মসমর্পণকারী। আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনোও কবুল করা হবে না এবং সে পরেলোকে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। -সূরা আল ইমরানে : আয়াত ৮৩-৮৫। এই আয়াতসমূহের দ্বারা বুঝা যায় যে, আল্লাহর ওপর এবং সকল রাসুলগণের ওপর ঈমান আনয়ন করাই হলো আল্লাহর দ্বীন এবং এরই নাম হচ্ছে ইসলাম। যে ব্যক্তি নিয়মতান্ত্রিকভাবে এই দ্বীনকে কবুল করবে না, সে আখেরাতে অবশই ক্ষতিগ্রস্তশীল হবে।

কোরআনুল কারিমে পরিষ্কারভাবে ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের পথভ্রষ্ট হওয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, তারা ঐশী গ্রন্থসমূহের ভ্রান্ত বিশ্লেষণ করত। আর আয়াতে মুতাশাবিহাতগুলোর অর্থ ও মর্ম উদ্ঘাটনে সীমালঙ্ঘন করত। তাই তারা দ্বীন ইসলাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নানা রকম মতবাদরে আবর্তে জড়িয়ে পড়ত।
এতদ সম্পর্কে কোরআনুল কারিমে এরশাদ হয়েছে : ‘অবশ্যই আল্লাহর নিকট একমাত্র ধর্ম হচ্ছে ইসলাম এবং যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তারা পরস্পর বিদ্বেষবশত তাদের নিকট তাদের নিকট জ্ঞান আসবার পর সত্যানৈক্য ঘটিয়ে ছিল। আর কেউ আল্লাহর নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করলে আল্লাহ হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত তৎপর। এরপরও যদি তারা আপনার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয় তবে বলুন, আমি আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করেছি এবং আমার অনুসারীগণও।’ -সুরা আল ইমরান : আয়াত ১৯-২০।

এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) কে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে যে, তিনি যেন ইহুদি এবং খ্রিষ্টানদের এ প্রশ্ন করেন যে, তারা কি ইসলাম কবুল করবে, না কি করবে না? এ প্রসঙ্গে কোরআনুল কারিমে এরশাদ হয়েছে: ‘আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে (ইহুদি ও খ্রিষ্টান) তাদেরকে ও আরবের নিরক্ষর কাফেরদের বলুন, তোমরাও কি ইসলাম গ্রহণ করেছ? যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করে, তবে নিশ্চয় তারা পথ পাবে। আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আপনার কর্তব্য শুধু প্রচার করা। আল্লাহ বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা। Ñসুরা আল ইমরান : আয়াত ২০।

এই আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, ইহুদি এবং খ্রিষ্টানদের ইসলাম কবুল করার ফলে পরিপূর্ণ হেদায়েত লাভ করার খোশ-খবরী প্রদান করা হয়েছে। এর সত্যিকার অর্থ এই যে, পরিপূর্ণ হেদায়েত হলো দ্বীন ইসলাম এবং এটাই হলো প্রকৃত ও সত্যিকার দ্বীন যা ইহুদি, নাসারা এবং পূর্ববর্তী পয়গাম্বরদের উম্মতরা হারিয়ে ফেলে ছিল এবং যাকে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর মাধ্যমে পুনরায় পরিপূর্ণরূপে পৃথিবীতে পেশ করা হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে এই যে, পূর্ববর্তী আম্বিয়াদের উম্মতরা যে হেদায়েত লাভ করেছিল তা পরিপূর্ণ ছিল না। বস্তুত: তা ছিল সংক্ষিপ্ত ও অসম্পূর্ণ। আর দ্বীন ইসলাম যে হেদায়েত নিয়ে এসেছে তা হলো কামেল ও পরপূর্ণ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
সাইফুল ইসলাম ৭ অক্টোবর, ২০২১, ৩:৫৮ এএম says : 0
সব সদ্‌গুণাবলির অধিকারী ও সর্বশক্তির আধার অবশ্যম্ভাবী সত্তা, যিনি অনাদি অনন্ত, যাঁর শুরু নেই, শেষ নেই, লয়-ক্ষয় ও পরিবর্তন নেই, কিছুই ছিল না, তিনি ছিলেন, সবকিছু ফানা হয়ে যাবে, তিনি থাকবেন, তিনি সব সৃষ্টির খালিক ও মালিক, সৃজন, লালন-পালন, সংরক্ষণ ও ধ্বংস সাধন যাঁর এখতিয়ার, সেই অদ্বিতীয় সত্তার নাম ‘আল্লাহ’।
Total Reply(0)
কাজী সানাউল্লাহ ৭ অক্টোবর, ২০২১, ৩:৫৮ এএম says : 0
কোরআনে কারিমে সুরা ফাতিহার সূচনায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিজের পরিচয় ও পরিচিতি প্রদান করেছেন। ‘আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা! যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক, যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু, যিনি কর্মফল দিবসের মালিক।’ (সুরা-১ ফাতিহা, আয়াত: ১-৩)।
Total Reply(0)
তানিম আশরাফ ৭ অক্টোবর, ২০২১, ৩:৫৮ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলার গুণাবলি বিবেচনায় তাঁর বহু নাম রয়েছে, যা ‘ইসমে সিফাত’ বা গুণবাচক নাম। এগুলোকে ‘আসমাউল হুসনা’ বলা হয়।
Total Reply(0)
সততাই উৎকৃষ্ট পন্থা ৭ অক্টোবর, ২০২১, ৩:৫৯ এএম says : 0
আল্লাহকে বিশ্বাস করা মানেই হলো তাঁর জাত ও সিফাত (সত্তা ও গুণাবলি) বিশ্বাস করা। ইমানে মুজমালে উপরিউক্ত বিষয়টি পূর্ণাঙ্গরূপে প্রকাশ করা হয়েছে। যথা: ‘আমি ইমান আনলাম তথা বিশ্বাস করলাম আল্লাহর প্রতি, যেমন যেরূপ আছেন তিনি তাঁর নামাবলি ও গুণাবলিসহ। এবং আমি মেনে নিলাম তাঁর সকল আদেশাবলি ও নিষেধাবলি।’
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন