বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্যতম অংশ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের মতো বাগেরহাটের চিতলমারীতে চিত্রা নদীর বিশাল চরে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে সুন্দরবনের সব বৈশিষ্ট নিয়ে পৃথক একটি বন। স্থানীয়রা বনটিকে বলছেন মিনি সুন্দরবন। বহমান চিত্রা নদীর দুই কুলঘেঁষে এই বনকে ঘিরে পর্যটন শিল্পের নতুন দ্বার খুলবে বলে আশাবাদ বিশেষজ্ঞ মহলের। এ বনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে বলেও মনে করছেন তারা। পাশাপাশি পরিবেশের জন্য এটি এখন আশীর্বাদ বলে মনে করা হচ্ছে। এ বনকে যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানিয়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।
এক সময়ের খরস্রোতা চিত্রা নদীর বিস্তীর্ণ চর ও আশপাশে নদীর দুই পাড়ে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে এই বন। উপজেলার রায়গ্রাম, শুড়িগাতী, খিলিগাতী, করাতের দিয়া, ডুমুরিয়া, আরুলিয়া, খড়িয়াসহ প্রায় ১৫ থেকে ২০টি গ্রাম মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে এখন বনাঞ্চলে পরিণত হয়েছে।
এখানকার অধিকাংশ বাড়ির আঙিনাসহ আশপাশে আবাদি-অনাবাদি জমিতেও গোলপাতা, কেওড়া, সুন্দরী, গড়ান, হেঁতালসহ নানা প্রজাতির গাছ প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠছে। এ ছাড়া নদীর দুই ক‚লজুড়ে বিস্তীর্ণ চর এলাকায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে গাছের সংখ্যা। বাঘ-হরিণের দেখা না মিললেও সুন্দরবনের নানা ধরনের বন্যপ্রাণীর দেখা মিলছে এখানে। ঠিক যেন সুন্দরবনেরই একটা অংশ। মেছো বাঘ, বাঘডাসা, খাটাশ, বিষধর সাপ, তক্ষক, বনবিড়াল, শিয়াল, গুঁইসাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বিচরণভ‚মিতে পরিণত হয়েছে এলাকাটি।
মাছরাঙা, ঘুঘু, শালিক, টিয়া, পানকৌড়ি, বক, দোয়েল, ঘড়িয়াল, টুনটুনিসহ প্রায় অর্ধশত প্রজাতির পাখির দেখা মিলছে এখানে। এসব পাখির কলকাকলিতে বন এখন মুখরিত। এছাড়া সুন্দরী, গোলপাতা, কেওড়াসহ নানা প্রজাতির গাছ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুন্দরবনের অসংখ্য প্রজাতির উদ্ভিদ জন্মেছে এখানে।
এতে গ্রামবাসীর মধ্যে আশার আলো দেখা দিয়েছে। সুন্দরবনের মূল ভ‚খন্ড থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার উত্তরে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেঁষে বয়ে যাওয়া চিত্রা নদীর দুই পাড়ে গড়ে ওঠা এ মিনি সুন্দরবন এখন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
স্থানীয় হেদায়েত উল্লাহ, মলয় হালদার জানান, চিত্রার চরে মিনি সুন্দরবনের পাশেই তাদের বাড়ি। এখানে অসংখ্য প্রাণী ও পাখিদের আশ্রয়স্থল গড়ে উঠেছে। ঘুম ভাঙে পাখির কলকাকলিতে। অজস্র পাখি আশ্রয় নিয়েছে গাছগুলোতে। পাশাপাশি সুন্দরবনের অসংখ্য গাছ ও উদ্ভিদ জন্মেছে এলাকাটিতে। তারা আরো বলেন, বনবিভাগ হরিণসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী এখানে ছেড়ে দিলে বনটির আকর্ষণ আরো বেড়ে যাবে।
এ বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (পূর্ব) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, মিনি সুন্দরবনটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। বনটির সাথে মূল সুন্দরবনের উল্লেখ করার মতো তেমন কোনো পার্থক্য নেই। পর্যটকেরা মিনি সুন্দরবন দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন। কীভাবে বনটির সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করা যায়, আমরা সে চেষ্টা করছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন