টানা পাঁচ দিনের ছুটির সুযোগ নিয়ে হাজার হাজার পর্যটকের ভিড় পড়েছে কক্সবাজারে। গত বুধবার থেকে পর্যটক আসতে শুরু করেছে দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্রে। ইতিমধ্যে সাগর পাড়ের হোটেল-মোটেলগুলোর ৭০-৮০ ভাগ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। তবে পর্যটকের ভিড় দেখে কক্সবাজারের বেশ কিছু হোটেল-মোটেলে আবারো অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। ফলে পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, গত বুধবার সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে পর্যটক ও পূজারীদের প্রচুর ভিড় লক্ষ্য করা গেলেও বৃহস্পতিবার তুলনামূলক পর্যটকের উপস্থিতি ছিল অনেক কম। আবহাওয়া খারাপ হয়ে পড়ায় অনেক পর্যটক সৈকত ছাড়া অন্যান্য দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনে গেছেন। আবার অনেকেই হোটেল কক্ষে সময় কাটাচ্ছেন। বুধবার থেকে রবিবার এ সময়ের মধ্যে বৃহস্পতিবার অফিস-আদালত খোলা থাকলেও অনেকেই এ দিনটি ছুটি হিসেবে অতিবাহিত করছেন। এ কারণে কক্সবাজারমুখী বেড়েছে পর্যটকের ভিড়।
রাজধানী ঢাকার উত্তরা থেকে আসা মো. আবুল বশর বলেন, ‘টানা ছুটি কাটাতে স্ত্রী সন্তান নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজার পৌঁছি। অনেক দিনের পরিকল্পনা ছিল কক্সবাজার সৈকত ঘুরে বেড়ানোর। অবশেষে আমরা তা পূরণ করলাম। আরো তিন দিন থাকবো কক্সবাজার।’
ঝালকাটি থেকে আসা আহসান গ্রুপের টেকনিক্যাল ম্যানেজার মনিরুজ্জামান বলেন, ‘মাঝে মাঝে স্ত্রী সন্তান নিয়ে কক্সবাজার ঘুরতে আসি। এবার টানা ছুটিতে কক্সবাজারের দীর্ঘতম সৈকতে আসলাম।’
এদিকে প্রচুর সংখ্যক পর্যটকের আগমনের কারণে কক্সবাজার সাগর পাড়ের কয়েকটি আবাসিক হোটেলে আবারো গলাকাটা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। সাগর পাড়ের হোটেল অভিসার নামের একটি আবাসিক হোটেলের দুই হাজার টাকার কক্ষের ভাড়া উঠেছে ৭-৮ হাজার টাকা। পর্যটকদের অভিযোগের ভিত্তিতে আজ বিকেলে হোটেলটির এক্সিকিউটিভ জসিম উদ্দিনের সাথে মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি একটি কক্ষের একদাম ৬ হাজার টাকা দিতে হবে বলে জানান। ছাড়ের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সময়ে কোন ছাড় নেই।’
অপরদিকে তৌহিদুল ইসলাম নামের একজন হোটেল অভিসারে কক্ষ ভাড়া চাইতে গেলে হোটেলটির একটি কক্ষ একদিনের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়না বলে জানান। কমপক্ষে দুইদিনের জন্য নিতে হবে এবং ভাড়া দাবি করা হয় দৈনিক সাড়ে ৮ হাজার টাকা। অথচ হোটেলটির ১০০ গজ দূরত্বের পাঁচ তারকা মানের হোটেল সী গালে ৫০ ভাগ ছাড় দিয়ে প্রতিকক্ষ ভাড়া দেওয়া হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকায়। হোটেলটির ৫০৮ নম্বর কক্ষের অতিথি রাজ নারায়ণ সাহা কালের কণ্ঠকে জানান, তার কাছে ৭ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছে। তবে ৬ হাজার টাকায় রফাদফা করা হলেও হোটেলের রেজিষ্ট্রি খাতায় লেখা হয়েছে ৫ হাজার টাকা।
তবে হোটেলের ব্যবস্থাপক লিটন পালের সাথে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ‘আমাদের হোটেলের কক্ষ ভাড়া সর্বনিন্ম ৪ হাজার ৫৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৭৫০ টাকা। তবে আপনার (সাংবাদিক) জন্য সুপার ডিলাক্স কক্ষ ভাড়া তিন হাজার টাকা।’
অভিযোগ রয়েছে, সাগর পাড়ের এসব হোটেল কর্তৃপক্ষ ভ্যাট নিয়েও করে নানা কারচুপি। শুল্ক বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমেই হোটেলগুলো ভ্যাট দিয়ে থাকে। এ দিকে হোটেল অভিসারের ৫৫ টি কক্ষের জন্য কি পরিমাণ ভ্যাট আদায় করা হয় তা জানতে স্থানীয় শুল্ক বিভাগের (ভ্যাট) সুপার মুজিবুর রহমানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি, মোবাইলে তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি হোটেলটির গলাকাটা ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন