শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

কিশোর অপরাধ : আইনি ও ইসলামী দৃষ্টিকোণ

মুহাম্মাদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৯ এএম

ইসলামী আইনের পরিভাষায় হদ্দ হলো আল্লাহর অধিকার লঙ্ঘনের জন্য নির্ধারিত শাস্তি, যা বাস্তবায়ন করা আবশ্যক। দ্র: আস-সারাখসী, আল-মাবসূত, বৈরূত’ দারুল মা’আরিফা, ১৯৯২ খ্রি., খ. ৯, পৃ. ৩৬’ ও কিসাস ‘কিসাস; শব্দটি আরবী শব্দ থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ সমতা বা সাদৃশ্য বিধান, কর্তন করা ইত্যাদি। পরিভাষায় কোন ব্যক্তিকে হত্যা বা আহত করার দায়ে হত্যাকারী বা আহতকারীকে হত্যা বা আহত করাকে কিসাস বলে। দ্র. ড. রাওয়াস কা’লাজী, মু’জামু লুগাতিল ফুকাহা, করাচী: ইদারাতুল কুরআন, ১৪০৪ হি., পৃ. ৩৬৪; ড. সায়্যিদ হাসান ‘আব্দুল্লাহ, আল-মাকাসিদুশ শার’ঈয়্যাহ লিল ‘ঊকুবাহ ফীল ইসলাম, বৈরূত: দারু ইবন হাযম, ১৪২৭ হি., পৃ. ১৩৯’। পর্যায়ের শাস্তি প্রযোজ্য নয়। তবে জনস্বার্থে এবং সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য তাদেরকে সংশোধনমূলক তা’যীরী ‘তা’যীর; শব্দটি আল-উষরু শব্দ থেকে উদ্ভুত। এর আভিধানিক অর্থ হলো শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া, নিষেধ করা, সাহায্য করা ইত্যাদি। ইসলামী আইনের পরিভাষায় যে সব অপরাধের জন্য শরী’আত নির্দি’ কোন শাস্তি বা কাফফারা নির্ধারণ করে দেয় নি, সে সব অপরাধের শাস্তিকে তা’যীর বলে। দ্র. সা’দী আবু জীব, আল-কামুসুল ফিকহী, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৫০; আস-সায়্যিদ সাবিক, ফিকহুস সুন্নাহ, প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ৩৭৫’। শাস্তি প্রদান করার নির্দেশনা ইসলামী আইনে বিদ্যমান রয়েছে। যেমন রাসুলুল্লাহ স. বলেছেন, ‘তোমাদের সন্তানদের বয়স সাত বছরে পদার্পণ করলে সালাত আদায়ের নির্দেশ দিবে। দশ বছর বয়সের পর সালাত আদায় না করলে তাদেরকে প্রহার করবে এবং তাদের বিছনা পৃথক করে দিবে। ‘আবূ দাউদ, আস-সুনান, অধ্যায়: সালাত, অনুচ্ছেদ: মাতা ইয়ুমারুল গুলামু বিস-সালাত, প্রাগুক্ত, খ. ১, পৃ. ১৪৪-১৪৫, হাদীস নং-১৯৫; হাদীসটি হাসান ও সহীত, মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী সহীহ ওয়া য’ঈফু সুনানি আবী দাউদ, আল-মাকাতাবাতুশ শামিলা, ২য় সংস্করণ, খ. ১, পৃ. ৪৯৫, হাদীস নং-৪৯৫’।
এ প্রসঙ্গে ড. ‘আব্দুল ‘আযীয ‘আমির এর অভিমতটি উল্লেখ করা যেতে পারে। তাঁর মতে, একজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু-কিশোর ব্যভিচার অথবা চুরি অথবা ডাকাতির মতো অপরাধ করলে সামাজিকভাবে তাকে অপরাধী বলে গণ্যই করা হবে না- এমনটি মনে করা সঠিক নয়, কেননা তা হবে আইনের অপব্যাখ্যা মাত্র। বরং উত্তম হলো যে, প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির অপরাধের ন্যায় শিশু-কিশোরের অপরাধও আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। শুধুমাত্র পার্থক্য হলো-শর্তপূরণ না হওয়ার কারণে শিশু-কিশোরদের উপর সুনির্দি’ শাস্তি যেমন হুদূদ, কিসাস প্রয়োগ করা যাবে না। তবে কোন শিশু-কিশোর যদি শরী’আতের সুনির্দিষ্ট শাস্তিযোগ্য গুরুতর অপরাধ করে অথবা সুনির্দি’ তা’যীরী অপরাধসমূহের মধ্যে কোন একটি অপরাধ সংঘটন করে তাহলে তার অপরাধের মাত্রা ও বয়সের উপযুক্ততা বিচার করে সংশোধনমূলক কোন শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে ইসলামী আইনে কোন বাধা-নিষেধ নেই। ‘ড. ‘আব্দুল ‘আযীয ‘আমির, আত্-তা’যীরু ফিশ শারী’আতিল ইসলামিয়্যাহ, আল কাহেরা: দারুল ফিক্র আল-‘আরাবী, ১৪২৮ হি., পৃ. ৫৮’। অতএব, ইসলামের দৃষ্টিতে কিশোর অপরাধ বলতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ে কর্তৃক শরী’আতের এমন আদেশ-নিষেধের লঙ্ঘনকে বুঝায়, যা করলে তা’যীর প্রযোজ্য হয়।
কিশোর অপরাধের কারণ : কিশোর অপরাধের সুনির্দি’ কারণ নির্ণয় করা অত্যন্ত জটিল ও কঠিন বিষয়। তথাপিও অপরাধবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কিশোর অপরাধের কারণ অনুসন্ধানের প্রয়াস চালিয়েছেন। যা অপরাধের নানাবিধ সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে ধারণা লাভে সহায়ক। কিশোর অপরাধের কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে প্রখ্যাত ব্রিটিশ ঐতিহাসিক আরনল্ড টয়েনবী অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, বর্তমানের ধর্মহীনতাই অন্যান্য অপরাধের ন্যায় কিশোর অপরাধের কারণ। ‘অধ্যক্ষ মো: আলতাফ হোসেন, অপরাধ বিজ্ঞান, ঢাকা: মুহিত পাবলিকেশন, ২০১০ খ্রি., পৃ. ২৩৬’। অন্যদিকে সমাজতন্ত্রের জনক কার্লমার্কস এর মতে, কিশোর অপরাধসহ সব ধরনের অপরাধের মুলে রয়েছে অর্থনৈতিক প্রভাব। ‘প্রাগুক্ত’। আধুনিক অপরাধবিজ্ঞানের জনক সিজার লোমব্রোসো কিশোর অপরাধের কারণ হিসেবে জৈবিক প্রভাবকে দায়ী করেছেন। ‘উবূদুস সিরাজ, ‘ইলমূল ইজ্রাম ওয়া ‘ইলমূল ইকাব, কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয়: ২য় সংস্করণ, ১৪০৩ হি., পৃ. ১৮৩’। সমাজবিজ্ঞানী হিলি এবং ব্রোনার (Healy and Bronner) কিশোর অপরাধের কারণ হিসেবে সামাজিক পরিবেশের প্রভাবকে চিহ্নিত করেছেন। ‘প্রফেসর মো. আতিকুর রহমান, সামাজিক সমস্যা এবং সমস্যা বিশ্লেষণ কৌশল, ঢাকা : অনার্স পাবলিকেশন্স, ২০১২ খ্রি., পৃ. ২৭৪’। বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েড কিশোর অপরাধের কারণ অনুসন্ধানে বাহ্যিক পরিবেশের পরিবর্তে মানুষের মনোজগতের প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। ‘ড. উত্তম কুমার দাশ ও অনিমা রাণী নাথ, মানবীয় বিকাশ আচরণ ও সামাজিক পরিবেশ, ঢাকা : ঢাকেশ্বরী লাইব্রেরী, ২০০৩ খ্রি., পৃ. ২০৭-০৯; বোরহান উদ্দীন খান, অপরাধ বিজ্ঞান পরিচিতি, ঢাকা: প্রভাতী প্রকাশনী ১৯৯৫ খ্রি., পৃ. ১১৩’।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন