বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর প্রতি প্রেরিত দুরূদ ও সালাম শ্রবণ করেন, উত্তর দেন

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

বিশ্ব নবী হযরত মোহাম্মাদ (সা.)-এর ওপর দরূদ ও সালাম পাঠ করার নির্দেশ আল্লাহপাক প্রদান করেছেন। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফিরিশতাগণ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি সালাত (দরূদ) প্রেরণ করেন, হে মুমিনগণ তোমরাও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরূদ ও সালাম প্রেরণ কর।’ (সূরা আহযাব : আয়াত ৫৬)। অতএব, মুমিন-মুসলমানদের একান্ত কর্তব্য হলো নূর নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরূদ ও সালাম প্রেরণ করা। হাদীস শরীফে এসেছে : (ক) হযরত আবু বুরদা বিনদিনার (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘আমার উম্মতের যে ব্যক্তি খালেস অন্তরে আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করবে, মহান আল্লাহপাক তাঁর প্রতি দশবার রহমত বর্ষণ করবেন এবং তার দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেবেন এবং তার জন্য দশটি নেক লিখে দেবেন এবং তার দশটি গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (সুনানে নাসাঈ : বাজজার : তিবরানী :)।

(খ) হযরত আনাস বিন মালেক (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করবে আল্লাহ পাক তার প্রতি দশবার রহমত বর্ষণ করবেন। আর যে ব্যক্তি আমার ওপর দশবার দরূদ পাঠ করবে আল্লাহ পাক তার প্রতি একশত রহমত বর্ষণ করবেন। আর যে ব্যক্তি আমার প্রতি একশত বার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহপাক তার কপালে নেফাক থেকে মুক্ত ও জাহান্নাম থেকে মুক্ত লিখে দেবেন।’ (তিবরানী)।

শুধু তা-ই নয় বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মাদ (সা.) ও অন্যান্য আম্বিয়াগণের কবর পার্শ্বে দাঁড়িয়ে বা দূর থেকে তাদের প্রতি দরূদ ও সালাম প্রেরণ করলে রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং আম্বিয়াগণ তা নিজে শ্রবণ করেন এবং উত্তর দিয়ে থাকেন। এটা আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে আম্বিয়ায়ে কেরামের প্রতি এক বিশেষ রহমত ও ফযল।

এতদপ্রসঙ্গে হাদীস শরীফে উক্ত হয়েছে : (ক) হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : ‘কোনো ব্যক্তি আমার ওপর সালাম প্রেরণ করলে আল্লাহপাক আমার রূহ ফেরত দেন’। (সুনানু আবি দাউদ-১/২৮৬)।

(খ) হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : ‘যে ব্যক্তি আমার কবর পার্শ্বে দাঁড়িয়ে সালাম জানায় আমি তা’ নিজে শ্রবণ করি। আর যে দূর হতে সালাত ও সালাম প্রেরণ করে, তা আমার নিকট পৌঁছে দেয়া হয়।’ (কানজুল উম্মাল ১/৪৯২)।

(গ) হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : ‘আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা এই পৃথিবীতে পরিভ্রমণকারী একদল ফিরিশতা নিযুক্ত করেছেন, তাঁরা আমার নিকট উম্মতের সালাত ও সালাম পৌঁছে দিয়ে থাকেন।’ (সুনানু নাসাঈ ১/১৮৯)।

(ঘ) সকল আয়েম্মায়ে কেরাম একমত যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কবর যিয়ারতকালে তাঁকে এবং তাঁর দুই সাহাবী (রা.) কে সালাম করবে। এতদ প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরায়রা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস সুনানে আবু দাউদ শরীফে সংকলিত হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘যে কোনো মুসলিম আমাকে সালাম করলে আল্লাহপাক আমাতে রূহ ফিরিয়েদেন। আমি তার সালামের উত্তর দেই’। এটি একটি হাসান ও উত্তম হাদীস। (ফাতাওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়্যাহ-৪/৩৬১)। সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার নিরিখে একথা সুস্পষ্টভাবে প্রতিপন্ন হয় যে, আম্বিয়ায়ে কেরামের প্রতি সালাত ও সালাম প্রেরণ করলে তারা তা’ নিজে শুনেন এবং-এর উত্তর দিয়ে থাকেন।

তবে, স্মরণ রাখা দরকার যে, হযরত সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রা.) মদীনা শরীফ অবরোধকালে যা হাররার’ ঘটনা বলে বিখ্যাত, সেই দিনগুলোতে নামাজের সময় রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কবর মোবারক হতে আজানের ধ্বনি উত্থিত হতে শুনেছেন এবং কোনো কোনো লোক রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কবর হতে সালামের উত্তর শুনেছেন অথবা কোনো কোনো নেককার লোকের কবর হতে সালামের উত্তর শুনেছেন, এগুলো বিক্ষিপ্ত ঘটনা। এগুলোর সাথে উপরে উল্লেখিত বর্ণনাগুলোর কোনো সংশ্রব নেই। মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আমাদেরকে সঠিক বুঝ গ্রহণ করার তাওফিক এনায়েত করুন, আমীন!

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন