সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তি, অতীতের ঘটনাগুলোর দ্রুত বিচার সম্পন্ন, প্রশাসনের তৎপরতা বৃদ্ধিসহ সম্প্রীতি রক্ষায় ৭দফা দাবি জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। গতকাল সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসব সংগঠনের সমন্বয়ে আয়োজিত সম্প্রীতি সমাবেশে এই দাবি তুলে ধরা হয়। সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক বিশিষ্ট নাট্যকার পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে সমাবেশে ৫০টির অধীক সংগঠনের প্রতিনিধি অংশ নেয় এবং বিভিন্ন সংগঠন সংহতি প্রকাশ করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি যখন যেখানে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠবে সেখানেই তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানানো, প্রতিরোধ গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। সেই দিকেই আমরা অগ্রসর হব। এটি একটি রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িকতা। যদি রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িকতাই হয় তাহলে রাজনৈতিক দলসমূহ যারা অন্তত অসাম্প্রদায়িক মানবিক চেতনায় বিশ্বাস করেন সেই মানুষগুলো সহমত পোষণ করে একই মঞ্চে আসতে হবে। সাম্প্রদায়িকতা রুখতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
চেতনা একাত্তরের সভাপতি আসিফ মনির তন্ময় বলেন, যেটি ঘটছে তা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সরকারের উর্ধ্বতন পর্যায় থেকেও সেরকম বলা হচ্ছে। এই ঘটনার সাথে জড়িতদের দুই একজনকে গ্রেফতার করা হলেও মূল হোতাদের সরাসরি চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস বলেন, এই দেশকে যারা আফগানিস্তান, পাকিস্তান বা ইরাকে পরিণত করতে চায় তাদেরকে আমরা রাজপথে মোকাবেলা করব। সংখ্যালঘু শব্দটি শুনলেও আমার ঘৃণা আসে, এই ধরনের কোনো শব্দ থাকতে পারে না। এই ধরনের কোন শব্দ আমাদের সংবিধান সমর্থন করে বলেও আমি মনে করিনা। সবার আগে আমার পরিচয় আমি বাঙালি, আমি হিন্দু না মুসলমান, বৌদ্ধ না খ্রিস্টান তা আমার উপাসনালয়ের পরিচয়, আমার রাজনৈতিক পরিচয় নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এসেও আমাদেরকে সম্প্রীতির বাংলাদেশের জন্য রাজাকার, আল বদর, তালেবানদের বিরুদ্ধে সভা সমাবেশ করতে হচ্ছে এটি আমাদের জন্য দুঃখজনক এবং লজ্জাজনকও বটে।
পীযূষ বন্দোপাধ্যায় বলেন, সাম্প্রতিককালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে ষড়যন্ত্র করেছে, চক্রান্ত করেছে এবং কিছু অপকর্ম ঘটিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সকলে যদি আমরা সম্মিলিতভাবে দাঁড়ায়, এই দেশ থেকে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিষদাঁত আমরা ভেঙে দেব। এই দেশে আগামী দিনে সাম্প্রদায়িক শক্তি কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।
প্রফেসর ড. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন- মুক্তিযুদ্ধ একাডেমি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান আবুল আজাদ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এম ওহিদুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. গোলাম রব্বানী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব প্রফেসর উত্তম কুমার বড়ুয়া, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবিব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের চিত্ত রঞ্জন দাস, ভাষা সৈনিক মনোরঞ্জন ঘোষাল, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি মনিরুজ্জামান নান্টু প্রমুখ। সমাবেশে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, প্রজন্ম একাত্তরসহ বিভিন্ন সংগঠন সংহতি প্রকাশ করে।
৭ দফা দাবি: সাম্প্রদায়িক ঘটনার সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অতীতের ঘটনার দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ঘটনা আর না ঘটে সেজন্য প্রশাসনকে আরও বেশি তৎপর হতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘর এবং উপাসনালয় দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদসহ শিক্ষা ও ব্যবস্থায় মানবিক মূল্যবোধ ও সহনশীলতার বিষয় অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। আবহমান বাংলার সংস্কৃতি চর্চায় তরুণ ও যুব সমাজকে অধিকতর সম্পৃক্ত করতে যাথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও উস্কানি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন