বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ০৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আল্লাহর পথে আহ্বান জানানোর মূল্য

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম | আপডেট : ১২:০৮ এএম, ৪ নভেম্বর, ২০২১

মানুষ হচ্ছে সৃষ্টি জগতের সেরা জীব। মহান আল্লাহপাক মানুষকে যে জ্ঞান-বিদ্যা, বুদ্ধিমত্তা, সামর্থ্য ও যোগ্যতা প্রদান করেছেন, তা অন্যান্য সৃষ্টিকুলকে প্রদান করেননি। এই শ্রেষ্ঠত্ব ও ফজিলত দান করার পাশাপাশি আল্লাহপাক মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান জানানোর দায়িত্বও দিয়েছেন। এই দায়িত্ব পালন করা মানুষের অপরিহার্য কর্তব্য।

আরবী ভাষায় আহ্বান জানানোকে ‘দাওয়াত’ বলা হয়। এই শব্দটির মূল ধাতু হচ্ছে ‘দায়া’। এর আভিধানিক অর্থ হলো ডাকা, আহ্বান করা, আমন্ত্রণ জানানো, উৎসাহিত করা ইত্যাদি। আর ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় ইহকালীন কল্যাণ ও মঙ্গল এবং আখিরাতের মুক্তি ও নিস্কৃতির উদ্দেশ্যে মানব জাতিকে ইসলামী জীবনবিধানের দিকে ডাকা বা আহ্বান করাকে ‘দাওয়াত’ বলা হয়।

এই পৃথিবীর অনুপূর্বিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, যুগে যুগে মানুষ যখন আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর বিধানকে ভুলে গিয়ে বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট হয়েছে, তখনই আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত দয়াপরবশ হয়ে মানব জাতির মধ্য থেকেই সঠিক ও সরল পথ প্রদর্শনের জন্য নবী বা রাসূল প্রেরণ করেছেন। আর সকল নবী রাসূলগণই নিজ নিজ জাতির কাছে সর্বপ্রথম তাঁর প্রকৃত মালিক ও অধিকর্তা আল্লাহর দিকে আহ্বান করেছেন। শেষ নবী হযরত মোহাম্মাদ মোস্তাফা আহমাদ মুজতাবা (সা.)-এর ইন্তেকালের পর কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত এই পৃথিবীতে আর কোনো নবী-রাসূল আগমন করবেন না। কিন্তু যারা তাঁর প্রকৃত অনুসারী ও উম্মত তারাই কুরআন এবং সুন্নাহর আলোকে দুনিয়ার মানুষকে আল্লাহর প্রকৃত বান্দাহ হওয়ার জন্য দাওয়াতের কাজটি চালিয়ে যাবেন। এভাবে দাওয়াত বা আহ্বানের কাজটি রোজকিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত জারি থাকবে।

আল্লাহ জাল্লা শানুহু পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর আল্লাহর পথে আহ্বান করার দায়িত্ব অর্পণ করে ইরশাদ করেছেন : (ক) আপনি আপনার প্রতিপালকের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহ্বান করুন এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক করুন। নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালকই জানেন কে তার পথ থেকে ভ্রষ্ট ও বিচ্যুত হয়েছে এবং হিদায়াত প্রাপ্তদের তিনি ভালো করেই জানেন। (সূরা নাহল : আয়াত-১২৫)। (খ) বলুন, এটা আমার পথ। আমি জেনে বুঝে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেই। এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারাও। আর আল্লাহ পবিত্র মহান এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। (সূরা ইউসুফ : আয়াত-১০৮)।
(গ) আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা হা-মীম সিজদাহ : আয়াত-৩৩)। (ঘ) হে নবী! আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে আর আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারী ও আলোকদীপ্ত প্রদীপ হিসেবে। (সূরা আহযাব : আয়াত ৪৫-৪৬)।

(ঙ) হে রাসূল! আপনার প্রতিপালকের নিকট হতে আপনার নিকট যা নাজিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দিন, আর যদি আপনি না করেন তবে আপনি তাঁর রিসালাত পৌঁছালেন না। আর আল্লাহ আপনাকে মানুষ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না। (সূরা মায়িদাহ : আয়াত ৬৭)।

আল্লাহর পথে আহ্বান না করার পরিণাম খুবই ভয়াবহ। (ক) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন; একটি আয়াত হলেও তা আমার পক্ষ হতে প্রচার করো। আর বনী ইস্রাইল সম্পর্কে আলোচনা করো। তাতে কোনো দোষ নেই। সে ব্যক্তি আমার প্রতি ইচ্ছাপূর্বক মিথ্যা আরোপ করে তার উচিত নিজ চিরস্থায়ী ঠিকানা জাহান্নামে সন্ধান করা। (সহীহ বুখারী : ৪/৩৪৬১)।

(খ) হযরত হুযায়ফা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, যার হাতে আমার জীবন। অবশ্যই তোমরা সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে মানুষকে বারণ করবে। নতুবা তোমাদের ওপর শীঘ্রই আল্লাহর আযাব নাজিল হবে। অতঃপর তোমরা (আল্লাহর আযাব হতে নিস্কৃতি লাভের জন্য) দুআ করতে থাকবে কিন্তু তোমাদের দ্আু কবুল হবে না। (জামেয়ে তিরমিজী)। সুতরাং আল্লাহর পথে আহ্বান করা সকল ঈমানদারের একান্ত কর্তব্য। এই কর্তব্যে অবহেলা করার ফলেই বর্তমানে বিশ্বজোড়া আযাব ও গজবের ব্যাপক প্রসার ঘটছে। মানব সভ্যতা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এ নিয়ে বিজ্ঞজনেরা শঙ্কা বোধ করছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
মামুন রশিদ চৌধুরী ৪ নভেম্বর, ২০২১, ১:৪৭ এএম says : 0
‘হে নবি, কোমল ও ক্ষমাসুন্দর নীতি অবলম্বন কর। ‘মারূফ’ কাজের নিদের্শ দিয়ে যাও এবং মুর্খদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়ো না। শয়তান কখনো যদি তোমাকে উস্কানি দেয়-তবে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও। তিনি সব জানেন, সব শোনেন। প্রকৃতপক্ষে যারা মুত্তাকি, তাদের অবস্থা তো এরূপ যে, শয়তানের প্ররোচনায় কোনো খারাপ খেয়াল যদি তাদের স্পর্শ করেও বসে, তারা সাথে সাথে সাবধান ও সতর্ক হয়ে যায়। অতঃপর (তাদের সঠিক করণীয় কি) তা তারা সুস্পষ্টভাবে দেখতে পায়। বাকি থাকলো তাদের (শয়তানের) ভাই-বন্ধুদের কথা। এদের তো শয়তান বক্র পথে টেনে নিয়ে যায়। এবং এদের বিভ্রান্ত করার ব্যাপারে তার কোনো ত্রুটিই করে না’। (সুরা আরাফ, ১৯৯-২০২)
Total Reply(0)
Nazmul Hasan ৪ নভেম্বর, ২০২১, ১:৪৭ এএম says : 0
দায়িয়ে হকের জন্যে সবচাইতে জরুরি গুণাবলীর একটি হচ্ছে তাকে কোমল, বিনয়ী, ধৈর্যশীল ও উদারচিত্তসম্পন্ন হতে হবে। নিজ সহকর্মীদের বেলায় তাকে কোমল ও প্রেমময় সাধারণ মানুষের বেলায় দরদী ও সহানুভূতিশীল এবং বিরোধীদের বেলায় অতিশয় সহিষ্ণু হতে হবে। কঠিন উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশেও তার মন মেজাজকে ঠাণ্ডা রাখতে হবে।
Total Reply(0)
নাজমুল হাসান ৪ নভেম্বর, ২০২১, ১:৪৮ এএম says : 0
দাওয়াতে হকের কামিয়াবি এ পন্থায় নিহিত রয়েছে যে, দাওয়াত দানকারী বড় বড় দর্শন ও সূক্ষ্মতত্ত্বের পরিবর্তে লোকদের সরাসরি ‘মারূফ’ মানে-সোজা ও সুস্পষ্ট কল্যাণের শিক্ষা দেবে, যেসব কথাকে সাধারণ মানুষ ভাল কথা বলে জানে কিংবা যা ভাল কথা বলে মনে করার জন্যে-তাদের সাধারণ বুদ্ধিই যথেষ্ট হতে পারে।
Total Reply(0)
Mulla Tashfin ৪ নভেম্বর, ২০২১, ১:৪৯ এএম says : 0
দাওয়াতে হকের ব্যাপারে দাওয়াত দানকারীর সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ হওয়া তার আন্তরিকতা ও সত্য পরায়ণতার এক সুস্পষ্ট দলিল
Total Reply(0)
Md.Rashadujaman ৪ নভেম্বর, ২০২১, ১:৪৯ এএম says : 0
কুরআন মজিদে বার বার বলা হয়েছে, নবি আল্লাহর পথে আহ্বানের যে কাজ করছেন তাতে তাঁর নিজের কোন স্বার্থ নেই; বরং তিনি তো নিজে আল্লাহর বান্দাদের কল্যাণের জন্যেই নিজের জীবনকে বিলিয়ে দিচ্ছেন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন