শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আল কোরআন’ নামকরণের তাৎপর্য-২

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মাজীদ | প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

খাতামুন নাবিয়্যীন হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে প্রেরণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে : তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদেরই মধ্য থেকে, যে তাদের নিকট পাঠ করে তার আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করে এবং শিক্ষা দেয় কিতাব ও হিকমত। ইতিপূর্বে তো তারা ঘোর বিভ্রান্তিতে ছিল। (সূরা জুমআ : ০২)।
উক্ত আয়াত থেকে বোঝা যায়, কোরআনে কারীমের আয়াত তিলাওয়াত করে শোনানো নবীজী (সা.)-এর স্বতন্ত্র একটি দায়িত্ব, যেমন আয়াতের অর্থ ও মর্ম এবং আয়াতে বর্ণিত বিধিবিধান শিক্ষাদান করা স্বতন্ত্র একটি দায়িত্ব। কোরআনী হেদায়েত অনুসারে মানুষের জীবনকে পরিশুদ্ধ করা স্বতন্ত্র আরেকটি দায়িত্ব।

এছাড়াও একাধিক আয়াতে নবীজী (সা.)-কে কোরআন তিলাওয়াত করার আদেশ করা হয়েছে। একটি আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : আমি তো আদিষ্ট হয়েছি এই নগরীর প্রভুর ইবাদত করতে, যিনি একে সম্মানিত করেছেন। সমস্ত কিছু তাঁরই। আমি আরো আদিষ্ট হয়েছি, যেন আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হই। আমি আরো আদিষ্ট হয়েছি, কোরআন তিলাওয়াত করতে। অতএব যে ব্যক্তি সৎ পথ অনুসরণ করে, সে নিজের কল্যাণের জন্য সৎ পথ অনুসরণ করে। আর কেউ ভ্রান্তপথ অবলম্বন করলে তুমি বল, আমি তো কেবল সতর্ককারীদের একজন। (সূরা নামল : ৯১-৯২)।

সূরা ফাতিরের ২৯ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে, সালাত কায়েম করে, আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে তারাই আশা করে এমন ব্যবসায়ের, যার ধ্বংস নেই। এজন্যই যে, আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দেবেন এবং তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বেশি দেবেন। তিনি ক্ষমাশীল গুণগ্রাহী। (সূরা ফাতির : ২৯-৩০)।

লক্ষ করুন, উপরোক্ত আয়াতে সালাত কায়েম করা এবং দান-সদকা করার মতো কোরআন তিলাওয়াতও স্বতন্ত্র আমল ও ইবাদত হিসেবে উল্লিখিত হয়েছে এবং এই প্রত্যেক প্রকার আমলের জন্যই সওয়াবের ঘোষণা করা হয়েছে।
এমনিভাবে বহু সংখ্যক হাদীসেও নবীজী (সা.) কোরআন তিলাওয়াতের ফযীলত আলাদাভাবে বর্ণনা করেছেন। এক হাদীসে নবীজী ইরশাদ করেন : দুটি জিনিস ছাড়া অন্য কিছুতে হিংসা নেই। যে ব্যক্তিকে আল্লাহ কোরআন দিয়েছেন আর সে দিন-রাত তা তিলাওয়াত করে। আর যে ব্যক্তিকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, আর সে দিন-রাত তা (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে। (সহীহ বুখারী : ৭৫২৯)।
মোদ্দাকথা, কোরআন মাজীদ আল্লাহ তাআলার কালাম, মানবরচিত বই-পুস্তকের সাথে এর তুলনা চলে না। মানবরচিত বই-পুস্তকের অর্থটাই আসল, অর্থ না বুঝলে পড়া নিরর্থক। কিন্তু কোরআন মাজীদ আল্লাহ তাআলার সিফাতে কালামের প্রকাশ, অন্য কারও রচনা নয়। এর শব্দ ও অর্থ উভয়টাই উদ্দেশ্য। এর শব্দমালার ভেতরেও রয়েছে নূর ও হেদায়েত, বরকত ও প্রশান্তি এবং হৃদয়ের উদ্ভাস ও উদ্দীপনা।

এটা ভিন্ন কথা যে, পবিত্র কোরআন মাজীদ নাযিলের আসল উদ্দেশ্য, অর্থ ও মর্ম বুঝে সে অনুযায়ী আমল করা, যাকে কোরআনের পরিভাষায় ‘তাদাব্বুর’ (গভীরভাবে চিন্তা করা) ও ‘তাযাক্কুর’ (উপদেশ গ্রহণ করা) এবং ‘ইত্তেবা’ (অনুসরণ করা) বলা হয়। ইরশাদ হয়েছে : এটা এক বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি এজন্য নাযিল করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহে চিন্তা-ভাবনা করে এবং বোধসম্পন্ন ব্যক্তিগণ উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা সাদ : ২৯)।

প্রকাশ থাকে যে, কোরআনের তাদাব্বুর কেবল অর্থ বোঝার নাম নয়। অর্থ তো আরবের কাফের, মুশরিক ও মুনাফিকরাও বুঝত কিন্তু তারা তাদাব্বুর আদৌ করত না। তাদাব্বুরের সত্তাসার হলো, উপদেশ গ্রহণের লক্ষে ভক্তি ও ভালোবাসা সহকারে চিন্তা ও ধ্যানমগ্নতার সাথে আয়াতসমূহ পাঠ করা, সেইসঙ্গে সতর্ক থাকা, যাতে আল্লাহ তাআলার উদ্দিষ্ট মর্ম বোঝার ক্ষেত্রে আমার ব্যক্তিগত মেযাজ-মর্জি, ভাবাবেগ ও চিন্তা-চেতনার কিছুমাত্র প্রভাব না পড়ে। ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয়ই এর ভেতর এমন ব্যক্তিদের জন্য উপদেশ রয়েছে, যার আছে অন্তর, কিংবা যে মনোযোগ দিয়ে কর্ণপাত করে। (সূরা ক্বাফ : ৩৭)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Nazmul Hasan ৬ নভেম্বর, ২০২১, ৮:৫৬ এএম says : 0
পবিত্র কোরআনের মূল ৫টি নামের মধ্যে প্রধান নাম হলো কোরআন। আল্লামা জারকানী লেখেন, কোরআন শব্দটি কিরাআত থেকে এসেছে। অর্থ পঠিত, পড়া, পাঠ করা।
Total Reply(0)
মোঃ কামরুজ্জামান ৬ নভেম্বর, ২০২১, ৮:৫৭ এএম says : 0
একবিংশ শতাদ্বীর অন্যতম কোরআন গবেষক আল্লামা তকি উসমানি বলেন, কোরআন নামটি মূলত অবিশ্বাসীদের প্রত্যাখ্যানের জবাবে রাখা হয়েছে।
Total Reply(0)
হুসাইন আহমেদ হেলাল ৬ নভেম্বর, ২০২১, ৮:৫৭ এএম says : 0
কোরআন শব্দটি এসেছে কারনুন থেকে। অর্থ মেলানো, একত্রিত, সংযুক্ত। কোরআনের এক আয়াত অপর আয়াতের সঙ্গে, এক সূরা আরেক সূরার সঙ্গে, এক অংশ অন্য অংশের সঙ্গে মেলানো এবং সংযুক্ত। তাই এ নামে কোরআনের নামকরণ করা হয়েছে। শরহে নুরুল আনওয়ার, পৃ. ৮৪।
Total Reply(0)
Jahidul Islam ৬ নভেম্বর, ২০২১, ৮:৫৭ এএম says : 0
কোরআন এমন এক গ্রন্থ, যা মানুষের কল্যান-মুক্তি ও ইহ-পরলোকে শান্তির জন্য অবশ্যই পড়তে হবে, বুঝতে হবে, জানতে হবে এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। তাই কোরআনের নাম কোরআন রাখা হয়েছে।
Total Reply(0)
তরিকুল ৬ নভেম্বর, ২০২১, ৮:৫৭ এএম says : 0
পবিত্র কোরআন এমন একটি গ্রন্থ, যা বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি পঠিত বা পড়া হয়। তাই কোরআনকে কোরআন নামকরণ করা হয়েছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন