শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম্য, দায়িত্বশীলদের কর্তব্য ও ইসলামের নির্দেশনা

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

কোনো চিন্তাশীল মানুষ যদি তার চারপাশের বিভিন্ন ঘটনা ও পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন তাহলে তার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাবে যে, ইসলামের বিধিবিধান মেনে চলার মধ্যেই মানুষের কল্যাণ। চারপাশের জগতে যে অশান্তি, অনাচার, ঠকবাজি, প্রতারণা, মিথ্যাচার- এই সবকিছুর অনিষ্ট থেকে বাঁচতে হলে ইসলামের শিক্ষা-নির্দেশনা নিষ্ঠার সাথে মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। যত দিন যাচ্ছে ততই এ সত্য স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে। ইসলামের স্বভাব-চরিত্রগত শিক্ষা অনুসরণ না করার ফলে মানুষ একই প্রতারণার ফাঁদে বারবার জড়িয়ে যাচ্ছে, তেমনি ইসলামের সামাজিক বিধিবিধানের প্রয়োগ অনুপস্থিত থাকার কারণে অপরাধীচক্র একই কৌশলে বারবার অপরাধ সংঘটনের সুযোগ পাচ্ছে।

কিছুদিন আগে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ই-কমার্স ভিত্তিক একাধিক সংস্থার কর্মকাণ্ড আলোচনায় এসেছে। এজাতীয় কর্মকাণ্ডের কারণে এর আগেও বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা, সমিতি, প্রতিষ্ঠান আলোচিত সমালোচিত হয়েছে, অসংখ্য মানুষ প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পথে বসেছে। কিন্তু না সরকার ও দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে এই প্রতারণার ধারা বন্ধ করার বিষয়ে কোনো সফল পদক্ষেপ দেখা গেছে আর না সাধারণ মানুষের মধ্যে এইসকল প্রতারণার বিষয়ে সত্যিকারের সচেতনতা তৈরি হয়েছে।

প্রতারণার পদ্ধতি হিসেবে সেই লোভনীয় অফার, চটকদার বিজ্ঞাপন, অযৌক্তিক, অস্বাভাবিক কমিশন, জনগণের তরফ থেকে সেই হুজুগে মেতে ওঠা, অবাস্তব স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়া, নিজের সর্বস্ব বিনিয়োগ করে ফেলা এমনকি ধারকর্জ করেও মোটা অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করে বসা, আর কিছু দিন পর সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসে পড়া- এই তো হচ্ছে এক-দেড় দশক ধরে চলমান ঘটনা-পরিক্রমার সংক্ষিপ্ত ধারাভাষ্য। একইসাথে রয়েছে সরকারি ও দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে একটা সময় পর্যন্ত মৌনতা ও নির্লিপ্ততা।

জীবন ও সমাজের এই ঘটনাধারাকে আমরা যদি পর্যবেক্ষণী দৃষ্টিতে দেখি, তাহলে বলতেই হবে, এই ক্ষতিকর চক্র থেকে বের হয়ে আসতে হলে আমাদের নিজেদের বদলাতে হবে। আমাদের মন-মানস, চেতনা-বিশ্বাস, কর্ম ও কর্মপদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। ইসলামী নীতি ও বিধানের সত্যিকারের অনুসরণ ছাড়া এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোনো উপায় নেই।

জীবন-যাপন, আয়-উপার্জনের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকতা ও অল্পেতুষ্টির নীতি অবলম্বন করতে হবে। আয়-উপার্জনের ক্ষেত্রে অন্যায়, অবৈধ বা অস্বাভাবিক কোনো পন্থার দিকে না গিয়ে প্রত্যেকের যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুসারে সুস্থ-সুন্দর পন্থায় রিযিক অন্বেষণ করতে হবে।

দেখুন, নবীজী কত পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন : লোকসকল! আল্লাহকে ভয় কর আর (রিযিক) অন্বেষণে সুস্থ-স্বাভাবিক পন্থা অবলম্বন কর। কারণ, কোনো প্রাণ তার রিযিক পুরোপুরি গ্রহণ না করে কিছুতেই মারা যাবে না, যদিও তার কাছে সেই রিযিক পৌঁছতে (তার দৃষ্টিতে) বিলম্ব হয়। কাজেই আল্লাহকে ভয় কর আর সুন্দর পন্থায় (রিযিক) অন্বেষণ কর। যা হালাল তা-ই গ্রহণ কর আর যা হারাম তা বর্জন কর। -সুনানে ইবনে মাজাহ : ২১৪৪; সহীহ ইবনে হিব্বান : ৩২৩৯)।

এখানে ভোক্তা ও ব্যবসায়ী উভয় শ্রেণির জন্যই গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা আছে। ভোক্তারও কর্তব্য, পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিচার-বিবেচনা করা, ব্যবসায়ীরও কর্তব্য, ধোঁকা-প্রতারণার পথ অবলম্বন না করা।
কোনো মুমিন ধোঁকাবাজি করতে পারে না। এটা যেমন ঈমানী চেতনার পরিপন্থী, তেমনি মুসলিম-ভ্রাতৃত্ববোধেরও পরিপন্থী। আল্লাহর রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন : যে আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে সে আমাদের নয়। যে আমাদের ধোঁকা দেয় সেও আমাদের নয়। (সহীহ মুসলিম, ঈমান অধ্যায় : ১০১)।

এই হাদীসের পরেই সহীহ মুসলিমে নবীযুগের একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। তা এই যে, একবার নবী (সা.) বাজারে স্তূপীকৃত খাদ্য-শস্যের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তার ভিতর হাত ঢুকিয়ে দিলেন। ভেতরে ভেজা অনুভূত হলো। বিক্রেতাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কী ব্যাপার? বিক্রেতা বললেন, আল্লাহর রাসূল! এতে বৃষ্টির পানি পড়েছিল (তাই ভিজে গেছে)। রাসূল (সা.) বললেন, ভেজা শস্য উপরে রাখলে না কেন? যে ধোঁকা দেয় সে আমাদের নয়। (সহীহ মুসলিম, ঈমান অধ্যায় : ১০২)।

লক্ষ করার ব্যাপার হচ্ছে, এই সামান্য ব্যাপারটুকুও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পছন্দ করেননি। তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্যে পরিষ্কার ধোঁকা-প্রতারণা, মিথ্যাচারের অবস্থা তো বলাই বাহুল্য। এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বাজার তদারকি। সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলদের জন্য এখানে গুরুত্বপূর্ণ নমুনা আছে। এটা তাদের অপরিহার্য দায়িত্ব।

কাজেই দায়িত্বশীলদের অবশ্যপালনীয় কর্তব্য, জনসাধারণের স্বার্থ-সংরক্ষণে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করা। এক্ষেত্রে তাদের নীরবতা ও নির্লিপ্ততা ভয়াবহ অপরাধ। তারা যদি তাদের অবস্থান এবং সে অবস্থানের নিরিখে তাদের ওপর অর্পিত দায়-দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন তাহলে সমাজ থেকে দুর্নীতি ও প্রতারণা বহুলাংশে দূর হতে পারে। আল্লাহ তাআলা সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন- আমীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
শাহীন হাসনাত ৯ নভেম্বর, ২০২১, ২:২৬ এএম says : 0
ইসলামের বিধিবিধান মেনে চলার মধ্যেই মানুষের কল্যাণ।
Total Reply(0)
হাবীব ৯ নভেম্বর, ২০২১, ২:২৭ এএম says : 0
দায়িত্বশীলদের অবশ্যপালনীয় কর্তব্য, জনসাধারণের স্বার্থ-সংরক্ষণে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করা। এক্ষেত্রে তাদের নীরবতা ও নির্লিপ্ততা ভয়াবহ অপরাধ।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ৯ নভেম্বর, ২০২১, ২:২৭ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সকল অন্যায় অপরাধ থেকে হেফাজত করুক
Total Reply(0)
তারিকুল ইসলাম ৯ নভেম্বর, ২০২১, ২:২৯ এএম says : 0
মানুষকে ধোঁকা দেওয়া হারাম। যারা অন্যকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে ঠকিয়ে পয়সা রোজগার করে তাদের রোজগার হালাল নয়। মানুষকে নানান প্রবঞ্চনায় ফেলে অর্থ লোটে যে চালাক ও ধড়িবাজ সে আসলে একজন হারামখোর।
Total Reply(0)
নুরজাহান ৯ নভেম্বর, ২০২১, ২:৩০ এএম says : 0
আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমাদের ধোঁকা দেয় সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়। ধোঁকা ও চালবাজ জাহান্নামে যাবে। (তাবারানির কাবির ও সাগির, ইবনে হিব্বান, সহিহুল জামে)।
Total Reply(0)
রুহান ৯ নভেম্বর, ২০২১, ২:৩০ এএম says : 0
খাদ্যপণ্যে ভেজাল দেওয়া এক মারাত্মক অপরাধ। ধর্মীয় দৃষ্টিতে তা কবিরা গুনা। আমাদের দেশে এ অপরাধ অহরহ ঘটছে। নিজেদের ইমানদার হিসেবে দাবি করলে এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে উদ্যোগী হতে হবে।
Total Reply(0)
লিয়াকত আলী ৯ নভেম্বর, ২০২১, ২:৩০ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রতারণা বা ধোঁকা দেওয়ার গুনা থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন।
Total Reply(0)
Abdul Mannan ৯ নভেম্বর, ২০২১, ১২:১৬ পিএম says : 0
ইসলামের বিধিবিধান মেনে চলার মধ্যেই মানুষের কল্যাণ
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন