বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ০৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আলোকিত মানুষের গুণ : ভুল-ত্রুটি উপেক্ষা করতে পারা

মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

শান্তি ও সফলতার জীবনলাভে যেসকল গুণ ও বৈশিষ্ট্য গভীর প্রভাবক হয়ে থাকে তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ক্ষমা ও সহনশীলতা। অন্যের অপরাধ ক্ষমা করতে পারা এবং অপ্রীতিকর বিষয়সমূহ উপেক্ষা করতে পারা। আরবি ভাষায় যাকে বলে : ‘আল আফওয়া ওয়াস সাফহা’। ‘আল আফওয়া’ অর্থ অন্যায়ের প্রতিশোধ না নেয়া আর ‘আস সাফহা’ অর্থ অন্যায়কে উপেক্ষা করা। যেন দেখেও না দেখা, শুনেও না শোনা, বুঝেও না বোঝা। আরবি ভাষায় ‘আস সাফহা’-এর সাথে যখন ‘আল জামিল’ বিশেষণটি যুক্ত হয় তখন এর মর্ম দাঁড়ায় ‘সুন্দর উপেক্ষা’। তত্ত্ববিদগণ এর ব্যাখ্যা করেছেন, কারো অন্যায়-অপ্রীতিকর আচরণ এমনভাবে উপেক্ষা করা যে, কষ্ট বা বিরক্তিরও প্রকাশ না ঘটে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এর জন্য অনেক শক্তির প্রয়োজন।

এখানে এই প্রশ্ন আসতে পারে যে, ‘জীবনের সকল ক্ষেত্রে তো অন্যায়-অপরাধ উপেক্ষা করতে থাকা উচিত নয়।’ ঠিক কথা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে যে উচিত তাতে তো সন্দেহ নেই। এখানে সেই ‘অনেক ক্ষেত্রে’র কথাই বলা হচ্ছে। ‘সব ক্ষেত্রের’ কথা বলা হচ্ছে না। কোনো গুণ বা বৈশিষ্ট্যের কাম্যতা নিয়ে যখন আলোচনা করা হয় তখন ‘প্রযোজ্য ক্ষেত্রে’র শর্তটি সাধারণভাবেই মালহূয থাকে।

আলাদা করে তা উল্লেখ করার প্রয়োজন হয় না। যাইহোক, আমাদের জীবনের বহু ক্ষেত্র এমন আছে, যেখানে এই গুণ ও বৈশিষ্ট্যের চর্চা আমাদের করতে হয়। কোরআন মাজীদে এই গুণ অর্জনে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : আর যে সবর করে ও ক্ষমা করে নিশ্চয়ই তা অতি আবশ্যকীয় বিষয়। (সূরা শূরা : ৪৩)।

অর্থাৎ ‘সবর’ ও ‘ক্ষমা’ এমন বিষয়, যা অতি কাম্য, যার পুরস্কার অনেক বড়, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে উচ্চাভিলাষী মুমিনের জন্য তা অতি আবশ্যক। মুমিনের বৈশিষ্ট্য এই হবে যে, মুমিন আখিরাতের বিষয়ে উচ্চাভিলাষী হবে। ব্যক্তিগত দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা এই উচ্চাভিলাষের পথে বাধা হবে না। কারণ, মুমিনের বিশ্বাস, কল্যাণের তাওফীক আল্লাহর পক্ষ হতে আসে।

ব্যক্তি শুধু চেষ্টা করতে পারে। চেষ্টার পর ফলাফল আসে আল্লাহর হুকুমে। কাজেই সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করার সামর্থ্য তো মানুষের আছে। সেই চেষ্টার ওপর অচিন্তনীয় ফলাফল দান করা তো আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ। তাই উচ্চতম লক্ষ্য, জান্নাতের উচ্চতম স্থানের প্রত্যাশা ও আকাক্সক্ষায় মুমিন ব্যর্থ হয় না। এককথায়, মুমিনের উচ্চাভিলাষের উপাদান তার নিজস্ব সক্ষমতা নয়, আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহের ভরসা। ইসলামের আকীদাই তাকে আখিরাতের বিষয়ে উচ্চাভিলাষী হওয়ার শিক্ষা দিয়েছে।

তো উচ্চাভিলাষী মুমিনের কর্মও তো উচ্চমানসম্পন্ন হতে হবে। সাধারণ ক্ষেত্রে যা ঐচ্ছিক, উচ্চাভিলাষীর জন্যে তাও আবশ্যকীয়। কারণ তাকে তো এক উন্নত লক্ষ্যে উপনীত হতেই হবে। আমরা যে বৈশিষ্ট্যটি নিয়ে আলোচনা করছি, অর্থাৎ অন্যায়কে উপেক্ষা করা; সাধারণ অবস্থায় ও জীবনের অনেক ক্ষেত্রে এর অবস্থান এরকম। কাজেই এই বৈশিষ্ট্য অর্জনে চেষ্টা-চরিত্র করে যাওয়া আমাদের কর্তব্য।

অন্যায়কে উপেক্ষা করা ও ক্ষমা করার যে ফযীলত কোরআন মাজীদ থেকে পাওয়া যায় তন্মধ্যে একটি হচ্ছে আল্লাহ তাআলার ক্ষমা ও মাগফিরাতের ঘোষণা। যে অন্যকে ক্ষমা করে, অন্যের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে আল্লাহ তাআলাও তাকে ক্ষমা করেন ও তার দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করেন। আরবি ভাষায় একটি কথা আছে, যার অর্থ হচ্ছে : যে প্রকারের কর্ম ওই প্রকারের পুরস্কার। বাংলা ভাষার প্রবাদ- ‘যেমন কর্ম তেমন ফল’-এর চেয়েও বিষয়টি বিশেষ। নীতিটি এরকম যে, তুমি যদি ক্ষমা পেতে চাও তাহলে তুমিও অন্যকে ক্ষমা কর, দয়া পেতে চাইলে অন্যের ওপর দয়া কর। কোরআন-সুন্নাহর অনেক বাণীতে এই নীতির অনুরণন পাওয়া যায়।

এক্ষেত্রে এক হৃদয়গ্রাহী ঘোষণা কোরআন মাজীদে আছে- সূরাতুন নূরে, নূরের আয়াতে। আয়াতের প্রেক্ষাপট উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা.-এর জীবনের এক মর্মান্তিক ও মহাসৌভাগ্যের ঘটনা, যা হাদীস-সীরাতের কিতাবে ইফ্কের ঘটনা নামে প্রসিদ্ধ। ‘ইফ্ক’ অর্থ অপবাদ আরোপ। সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ। মুনাফিকেরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই কষ্টটি দিতেও ছাড়েনি। তো উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রা.-এর প্রতি মুনাফিকদের ঐ অপবাদ আরোপের ঘটনাটিকেই ‘মর্মান্তিক’ ও ‘মহাসৌভাগ্যের’ বলে উল্লেখ করেছি। মর্মান্তিক এজন্য যে, একজন পবিত্রাত্মা নারীর পক্ষে এর চেয়ে মর্মবিদারক বিষয় আর কী হতে পারে? শরীয়তও যে কয়টি গুনাহকে কবীরা গুনাহ বলে চিহ্নিত করেছে তন্মধ্যে একটি হচ্ছে সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা। তদ্রুপ যে কয়টি অপরাধের ওপর শরীয়তে নির্ধারিত র্দুরা রয়েছে তন্মধ্যে উপরোক্ত অপরাধটিও অন্যতম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
জাফর ১০ নভেম্বর, ২০২১, ৪:৩৪ এএম says : 0
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অতীব ক্ষমাশীল, তিনি ক্ষমাকে পছন্দ করেন।
Total Reply(0)
নিয়ামুল ১০ নভেম্বর, ২০২১, ৪:৩৫ এএম says : 0
ক্ষমা একটি মহৎ গুণ। এটি প্রকৃত মুমিনদের বৈশিষ্ট্য। মহান আল্লাহ ক্ষমাশীলদের ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা মানুষকে ক্ষমা করে আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৪)
Total Reply(0)
জব্বার ১০ নভেম্বর, ২০২১, ৪:৩৭ এএম says : 0
অতএব আমাদের উচিত, ক্ষমাশীল হওয়া। ঘৃণা নয়, ভালোবাসা দিয়েই সব কিছু জয় করা। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
সবুজ ১০ নভেম্বর, ২০২১, ৪:৩৮ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা আমাদের মহৎ এই গুণ অর্জন করে মানুষের মন জয়ের পাশাপাশি আল্লাহর মনোনীত বান্দা হওয়ার তাওফিক দান করুন।
Total Reply(0)
নুরজাহান ১০ নভেম্বর, ২০২১, ৪:৩৯ এএম says : 0
আমাদের মাঝেও আজ ক্ষমার সেই দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করতে হবে যেই দৃষ্টান্ত আমাদের প্রিয় নবী (সা.) প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন