বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

সন্তান মাদকাসক্ত হলে কী করবেন

| প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৪ এএম

একটি সুন্দর ফুল বাগানকে বিনষ্ট করার জন্য যেমনি একটি হুতোম পেঁচাই যথেষ্ট। তেমনি তরুণ সমাজকে বিনষ্ট করার জন্য মাদকই যথেষ্ট। মাদক একটি সামাজিক ব্যাধি। বর্তমানে মাদকাসক্তি আমাদের সমাজে এক সর্বনাশা ব্যধিরূপে বিস্তার লাভ করছে। আজকাল তরুণ প্রজন্মের কাছে অতি সহজেই মাদকদ্রব্য পৌঁছে গেছে। সাধারণত মানুষ নেশার জন্য যা ব্যবহার করে তাই মাদক দ্রব্য। আবার সেটা হতে পারে ইনজেকশন, ধুমপান, বা যে কোন মাধ্যমে। বিভিন্ন মাদক দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে যেমন-হিরোইন, কোকেন, আফিম, গাঞ্জা, ফেনসিডিল, বিভিন্ন রকমের ইনজেকশন। আর এখনকার সহজলভ্য ইয়াবা ট্যাবলেট। বর্তমান সময়ে গোটা দেশে যত সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, অপহরণ বাণিজ্যের মত সংঘবন্ধ অপরাধ, মাস্তানি হয়ে থাকে মাদকাসক্তিকে তার অন্যতম প্রধান কারণ ধরা যায়। এই মাদকাসক্তির কারণেই দাম্পত্য কলহ, বিবাহ-বিচ্ছেদ দিন দিন বাড়ছে।

মাদক প্রতিরোধে পরিবার ও সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা, বন্ধু নির্বাচন, দায়িত্বশীলতা ইত্যাদি উপায়ে মাদকাসক্তি প্রতিরোধ করা সম্ভব। অভিভাবকের অসতর্কতায় সন্তান যদি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে, প্রাথমিক অবস্থাতেই তা রোধ করা সম্ভব। বাবা-মা’ই যেহেতু সন্তানকে সব সময় কাছ থেকে দেখার সুযোগ পান, তাই তাঁদের পক্ষেই কেবল বোঝা সম্ভব সন্তান মাদকাসক্ত কিনা। কারণ, মাদকদ্রব্য গ্রহণ করলে কিছু শারীরিক ও মানসিক লক্ষণ মাদকাসক্তির মধ্যে প্রকাশ পাবে। কাজেই মাদকাসক্তির লক্ষণ এবং নমুনাগুলো যদি অভিভাবকগণ প্রাথমিক অবস্থাতেই সনাক্ত করতে পারেন, তাহলে অতি সহজেই সন্তানকে স্নেহ-ভালবাসা এবং প্রয়োজনে পরিচর্যা দিয়ে সুস্থ করে তুলতে পারবেন।

মাদকাসক্ত হওয়ার কিছু লক্ষণ ও চিহ্ন:
১. অতি সাম্প্রতিক আচরণের পরিবর্তন
২. রাতে ঠিকমত ঘুমায় না, দিনে বসে ঝিমায়
৩. গুছিয়ে কথা বলার অপারগতা
৪. খাবার গ্রহণের প্রতি অনীহা জন্মাবে, ফলে ক্ষুধা কমতে থাকবে
৫. জিহবা অপেক্ষাকৃত শুকনো থাকবে।
৬. মন খুব অস্থির থাকবে। মেজাজ কখনও খুব ভাল-কখনও খুব খারাপ থাকবে
৭. কখনও চুপ আবার কখনও খুব বেশি কথা বলবে
৮. মনোযোগ দেয়ার ক্ষমতা কমতে থাকবে
৯. আড্ডায় বেশি সময় নষ্ট করবে
১০. বিনা কারণে টাকার অতিরিক্ত চাহিদা বাড়বে
১১. দিনের একটি বিশেষ সময়ে বাড়ির বাইরে যাওয়ার জন্যে মন চঞ্চল হয়ে উঠবে
১২. শরীর ক্রমান্বয়ে শুকিয়ে যাবে।

মাদকদ্রব্য ব্যবহারে প্রতিক্রিয়া ঃ স্বল্প মেয়াদী :
১. ক্ষুধা ও যৌন অনুভূতি দ্রুত কমে যায়, রক্তচাপ কমায় এবং শ্বাস প্রশ্বাসের হার হ্রাস করে
২. শ্বাস-প্রশ্বাসক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসে, ব্যবহারকারী ক্রমান্বয়ে নিস্তেজ এবং অবসন্ন হয়ে যায়
৩. ব্যবহারকারীর মতিভ্রম ঘটে এবং তার মধ্যে সন্ত্রস্তভাব পরিলক্ষিত হয়
৪. চলাফেরায় অসংলগ্নতা ধরাপড়ে
৫. হৃদস্পন্দন দ্রুত হয় এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়
৬. চোখ লালচে হয় এবং মুখ শুকিয়ে যায়

৭. স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগের ক্ষমতা সাময়িক কমে যায়। তাই চলাফেরায় তাদের জীবন যে কোন সময় হয়ে উঠতে পারে বিপদজনক।
৮. কোন কোন ক্ষেত্রে আরও কিছু প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন উগ্র মেজাজ, রাগান্বিত ভাব, নিদ্রাহীনতা, অধিক মাত্রায় মাদক গ্রহণকারী ব্যক্তি মাতালের মত আচরণ করতে পারে এবং ঘুমিয়ে পড়তে পারে।

দীর্ঘ মেয়াদী খারাপ দিক ঃ
১. মাদকাসক্ত ব্যক্তির ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বোধ লোপ পায়,
২. স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে।
৩. মাদকাসক্ত মেয়েদের গর্ভের সন্তানের ওপরও ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে এবং মায়ের মত সন্তানেরও মাদকাসক্ত হওয়ার আশংকা থাকে,
৪. মস্তিষ্ক কোষের ক্ষয়প্রাপ্তি ঘটতে পারে, স্মৃতিশক্তি লোপ পায়,
৫. জীবনের সব বিষয়ে নিরাসক্ত হয়ে পড়ে,
৬. মাদকাসক্তি ব্যক্তিকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।

তাই আসুন ‘মাদককে না বলি, মাদক মুক্ত সুস্থ-সুন্দর দেশ গড়ি’ স্লোগানে নিজে সচেতন হই এবং অন্যকে সচেতন করে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। আর মাদকাসক্ত তরুণ-তরুণীদেরকে সুন্দর জীবন গড়ার সুযোগ করে দিই।

মো. লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট, মোবা: ০১৭১৬২৭০১২০।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন