কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌর এলাকার বাগরাইট মহল্লায় একটি বাসা ভাড়া করে মানব বিকাশ সংস্থা নামে একটি এনজিও দুই মাস কার্যক্রম চালিয়ে সদস্যদের নিকট থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে। ঋণ গ্রহণের তারিখে কার্যালয়ে তালা দেখে হতাশ হয়ে প্রশাসনের দ্বারস্ত হন সদস্যরা।
জানা যায়, মানব বিকাশ সংস্থা (এমভিএস) গভ: রেজি:নং এস-৯২০১(৭৩৮) ২০০৮ ইং, রেজিস্টার্ড কার্যালয়: সর্জনকান্দা, বড়পুল, রাজবাড়ী নামে নিবন্ধিত একটি এনজিও গত দুই মাস পূর্বে কটিয়াদী পৌর এলাকার বাগরাইট মহলায় পন্ডিতের বাড়ির একটি ঘর ভাড়া নিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করে।
ঋণ নিতে আগ্রহীগণই সদস্য হিসাবে অন্তর্ভূক্ত হন। দুই মাসে পৌর এলাকার বাগরাইট, কামারকোনা, চরিয়াকোনা ও পার্র্শ¦বর্তী মসূয়া, আচমিতা, মুমুরদিয়া ইউনিয়নে প্রতারনার জাল বিস্তার করে প্রায় এক হাজার সদস্য সংগ্রহ করে।
সদস্যদের সহজভাবে সহজশর্তে ঋণ প্রদানের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের নিকট থেকে প্রাথমিক সদস্য ফি হিসাবে ৫০ টাকা এবং ঋণ গ্রহণে আগ্রহীদের নিকট থেকে এক লক্ষ টাকার বিপরীতে ১০ হাজার, দুই লক্ষ টাকার বিপরীতে ২০ হাজার টাকা হারে জামানত গ্রহণ করে।
প্রতারণার জাল সুকৌশলে বাস্তবায়নের জন্য নারীদেরকেই সদস্য হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ইতিপূর্বে শাখা ব্যবস্থাপক ১৫ নভেম্বর’২১ তারিখে সদস্যদেরকে ঋণ দেয়ার ঘোষণা দেন এবং ঋণ গ্রহীতাদেরকে অফিসে আসার জন্য বলেন।
সদস্যরা সোমবার (১৫ নভেম্বর) ঋণ নিতে এসে দেখেন অফিস তালাবন্ধ। মাঠে বিতরণকৃত কর্মকর্তা মো. ইব্রাহিমের মোবাইল ফোন ০১৮৩০৩৫৪৮৭৩ তে সদস্যগণ ফোন করে নাম্বারটি বন্ধ পান।
অফিসের কারো সাথেই যোগাযোগ করতে না পেরে বুঝতে পারেন তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। অত:পর সদস্যরা দল বেধে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মডেল থানা কটিয়াদীকে বিষয়টি অবহতি করেন এবং প্রতিকার চান।
কামারকোনা গ্রামের নাজমা, স্বামী অহিদ, সদস্য নং-০৩৬৮ বলেন, ৫০ টাকা দিয়ে সদস্য হই। তখন আমাকে একটি পাশ বই প্রদান করে। দুই লক্ষ টাকা ঋণ নিতে চাইলে আমাকে ২০ হাজার টাকা জমানত দিতে বলে।আমি ২০ হাজার টাকা জমা দিলে তা আমার পাশ বই এ তুলে দিয়ে বলে ঋণ পরিশোধ হলে জামানতের টাকা ফেরত দিয়ে দিবে।কামারকোনা গ্রামের বিলকিছ, স্বামী শাহীন সদস্য নং-০৭৩৮ বলেন, বসত ঘরটি খুবই নাজুক। হাতে টাকা নেই, ঘরটিও সংস্কার করা প্রয়োজন। স্বামী রিকশা ভ্যান চালক।প্রতিদিনের আয় থেকে টাকা জমিয়ে কষ্ট করে হলেও কিস্তি দিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে পারবো ভেবে দেড় লক্ষ টাকা ঋণ নিতে ১৫ হাজার টাকা জামানত দেই। ঋণের টাকা তুলতে গিয়ে দেখি আমাদের জামানতের টাকা নিয়ে অফিসে তালা দিয়ে কর্মকর্তারা পালিয়ে গেছে।
কটিয়াদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম শাহাদত হোসেন বলেন, ভুক্তভোগী সদস্যগণ মৌখিক ভাবে বিষয়টি অবহিত করেছে। আমরা চেষ্টা করছি প্রতারকদের অবস্থান চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতিশ্বর পাল বলেন, নিবন্ধিত এনজিওদেরকে নিয়ে আমাদের মাসিক মিটিং হয়। ‘মানব বিকাশ সংস্থা’ নামে কোন এনজিওকে মিটিংএ আসতে দেখিনি। এ নামে কোন সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে এটিও আমার জানা নেই। যেহেতু তারা প্রতারিত হয়েছে, কাজেই ভূক্তভোগিদের থানায় নিয়মিত মামলা দেয়ার করার পরামর্শ প্রদান করেন।
পরবর্তীতে যাতে এ ধরণের ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ডের সদস্য পর্যায় পর্যন্ত সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে নির্দেশনা দেয়া হবে বলে তিনি জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন