বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ নিয়ে ককেশাস অঞ্চলের আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের যুদ্ধ গত নভেম্বরে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় থেমে যাওয়ার পর আবারও সীমান্ত সংঘাতে জড়িয়েছে প্রতিবেশী এ দুই রাষ্ট্র। সামরিক এই সংঘাতে উভয় দেশের অন্তত ২২ সৈন্যের প্রাণহানি ঘটেছে।
বুধবার আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশের সীমান্ত এলাকায় আর্মেনিয়ার সৈন্যদের সাথে সংঘর্ষে অন্তত ৭ আজারি সেনা সদস্য নিহত এবং আরও ১০ জন আহত হয়েছেন। সংঘাতে আর্মেনিয়া প্রথমে একজন সৈন্য নিহত, ২৪ জন নিখোঁজ এবং ১৩ জনকে আজারবাইজানের সেনাবাহিনী আটক করেছে বলে জানায়। পরবর্তীতে দেশটির সংসদে বলা হয়, আজারবাইজানের সাথে সীমান্তের সংঘাতে ১৫ আর্মেনীয় সৈন্য নিহত হয়েছেন।
এর আগে, মঙ্গলবার আজারবাইজানের সৈন্যদের সঙ্গে সংঘাত শুরু হওয়ার পর আঞ্চলিক সার্বভৌমত্ব রক্ষায় রাশিয়ার সহায়তা চায় আমের্নিয়া। পরে আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রাশিয়ার মধ্যস্থতায় আজারবাইজানের সঙ্গে অস্ত্রবিরতিতে সম্মতির কথা জানায়।
আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, প্রথমে আজারবাইজানের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা আর্মেনিয়ার অবস্থান লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করেছে। অন্যদিকে, আজারবাইজানের সরকার আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে বড় ধরনের উসকানির অভিযোগ তুলেছে।
গত বছর নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধের পর মঙ্গলবারের এই সংঘাতকে সাবেক সোভিয়েতভুক্ত দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হিসেবে বলা হচ্ছে। ২০২০ সালের ওই সংঘাতে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
মঙ্গলবারের হতাহতের ঘটনা দেশ দু’টিকে আঞ্চলিক বিবাদে আরেকটি বড় ধরনের সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের দুই প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন এবং সংঘাতের অবসানের আহ্বান জানান।
এছাড়া সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন আর্মেনীয় প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান।
বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলে নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান কয়েক দশক ধরে বিবাদে লিপ্ত রয়েছে। নাগোরনো-কারাবাখ আজারবাইজানের ভূখণ্ডের ভেতরে অবস্থিত হলেও ১৯৯৪ সালের এক যুদ্ধের পর থেকে আর্মেনিয়ার সমর্থনে জাতিগত আর্মেনীয় বাহিনী ওই অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ করছে।
আর্মেনিয়ায় রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে এই ভূখণ্ড ঘিরে দুই দেশের মাঝে শুরু হওয়া যুদ্ধ রাশিয়ার মধ্যস্থতায় বন্ধ হয়। এরপর ওই অঞ্চলে প্রায় ২ হাজার শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
রাশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে নাগোরনো-কারাবাখ এবং এর আশপাশের এলাকার বিশাল অংশের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয় আজারবাইজান। যা আগে আর্মেনিয়া-সমর্থিত বাসিন্দাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সূত্র: রয়টার্স, ইউরো নিউজ, ইন্টারফ্যাক্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন