যশোরের ঝিকরগাছায় নাগরিক অধিকার আন্দোলন ও সেবা সংগঠনের বেনাপোল এক্সপ্রেস রুটে পুর্বের ট্রেন ফেরৎ পাওয়ার দাবিতে আজ সোমবার (২৯ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেছেন যশোর’র জেলা প্রশাসক মোঃ তমিজুল ইসলাম খান।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই বেনাপোল এক্সপ্রেস নামটি পছন্দ করেন এবং এই ট্রেনটি তিনি নিজের হাতে উদ্বোধন করেন। সেসময় ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানী করা পিটি ইনকা সিবিসি কাপ্লিং ট্রেন দ্বারা এই রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন ট্রেনটি রেলমন্ত্রী তার নিজের এলাকায় প্রত্যাহার করে নিয়ে পুরোনো একটি স্ক্রু কাপ্লিং ট্রেন দ্বারা এই রুট চালু করতে চাইছে। এই রুটে শুধুমাত্র বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষই যাতায়াত করেনা বরং পার্শ্ববর্তি দেশ ভারতগামী ও ভারতফেরৎ অন্যান্য দেশের নাগরিকবৃন্দ এই ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াত করে। বাহিরের দেশের নাগরিকের কাছে দেশের ভাবমুর্তি উজ্জ্বল করতে পিটি ইনকা সিবিসি কাপ্লিং ট্রেন দ্বারা পূর্বের নিয়মে চালু করার জন্য নাগরিক অধিকার আন্দোলন যশোর এবং সেবা সংগঠন ঝিকরগাছার পক্ষে আহবান জানানো হয়েছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, যশোর জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, নাগরিক অধিকার আন্দোলন যশোর’র আহবায়ক মাস্টার নুর জালাল, সেবা সংগঠন ঝিকরগাছার সভাপতি মাস্টার আশরাফুজ জামান বাবু, নাগরিক অধিকার আন্দোলন যশোর’র সমন্বয়ক মাসুদুজ্জামান মিঠু, আহসান উল্লাহ ময়না, সঞ্জয় কুমার দাস প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৭ই জুলাই গনভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বেনাপোল-ঢাকা রুটে আন্তঃনগর “বেনাপোল এক্সপ্রেস” ট্রেনটির চলাচল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে ঢাকার সাথে বেনাপোলের রেল যোগাযোগ চালু হওয়ায় বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানির কাজে নিয়োজিত ব্যবসায়ীদের যাতায়াত সহজ হয়। করোনার পুর্বে এই বন্দর দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫/৬ হাজার যাত্রী ভারতে যাতায়াত করতেন। সড়ক পথে বেহাল দশা ও ফেরি ঘাটের যানজটের কারনে মানুষ ব্যপক দুর্ভোগের শিকার হতো। বেনাপোল-ঢাকা রুটে ট্রেনটি চালু হওয়াতে সাড়ে সাত ঘন্টায় বেনাপোল থেকে ঢাকায় পৌছানো সম্ভব হচ্ছিল। করোনা প্রাদূর্ভাবে ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে দেশে সকল বাস, ট্রেন, লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর একই বছরের নভেম্বর মাসে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন আবার চালু হয়। প্রায় পাঁচ মাস চালু থাকার পর চলতি বছর মার্চ মাস নাগাদ করোনা পরিস্থির অবনতি হলে এপ্রিল মাস থেকে ট্রেনটি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে দেশে অন্যান্য ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হলেও বন্ধ রয়েছে বেনাপোল এক্সপ্রেস। এক পর্যায়ে বিভিন্ন মহল থেকে এই ট্রেনটি চালু করার দাবী উঠে। গত ৩০ অক্টোবর রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা হয়ে মাগুরা রেলপথ ও ট্রেন চলাচলের কর্মকান্ড পরিদর্শনে আসলে নাগরিক অধিকার আন্দোলন যশোর এর নেতৃবৃন্দ তার সাথে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। তখনি সিদ্ধান্ত আসে আগামী ২ ডিসেম্বর বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি পুনরায় চালু হবে। এরই প্রেক্ষিতে ১৪ নভেম্বর ২০২১ চীফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (পশ্চিম) এর কার্যালয়, বাংলাদেশ রেলওয়ে, রাজশাহী থেকে একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। যেখানে উল্লেখ করা হয় বেনাপোল-ঢাকা-বেনাপোল রুটে চলাচলকারী ৭৯৫/৭৯৬ নং আন্তনগর বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ০২ ডিসেম্বর হতে চালানোর পরিকল্পনা আছে। সে লক্ষ্যে রাজশাহী.বী.মূ.সি.ই. রাজশাহী রুটে চলাচলকারী ৮০৩/৮০৪ বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস এর রেক দ্বারা ৭৯৫/৭৯৬ চালানো যেতে পারে। এই চিঠি দেখার পর যশোর জেলার সর্বস্তরের জনগনের মধ্যে ব্যপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। রেলের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে নাগরিক অধিকার আন্দোলন, যশোর এবং ঝিকরগাছার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেবা যৌথভাবে জেলা প্রশাসক, যশোর এর মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন