মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ব্যবসা-বাণিজ্যের রীতি-নীতি

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

তেজারত বা ব্যবসা-বাণিজ্য জীবন ও জগতের এমন একটি অনুষঙ্গ, যা কোনোক্রমেই উপেক্ষা করা যায় না। যেহেতু যায় না, সেহেতু ইসলাম এই বিষয়টির আগাগোড়া বিশ্লেষণ করেছে এবং এর গুরুত্বকে উচ্চকিত করে তুলেছে। আল কুরআনুল কারীম গভীর মনোযোগের সাথে অধ্যয়ন করলে দেখা যায় যে, এতে তেজারত শব্দটি নয় বার ব্যবহৃত হয়েছে।

যথা : সূরা বাক্বারাহ-এর ১৬ ও ২৮ নং আয়াতে। সূরা নিসা-এর ২৯ নং আয়াতে। সূরা তাওবাহ-এর ২৪ নং আয়াতে। সূরা নূর-এর ৩৭ নং আয়াতে। সূরা ফাতির-এর ২৯ নং আয়াতে। সূরা সফ-এর ১০ নং আয়াতে এবং সূরা জুমুয়া-এর ১১ নং আয়াতে এই শব্দটি ২ বার ব্যবহৃত হয়েছে।

এই তেজারতের সাথে জড়িত আছে ক্রেতা-বিক্রেতা, ক্রয়-বিক্রয় ও এতদসংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াবলি। এ জন্য ইসলাম তেজারতকে এমন একটি লাভজনক ব্যবসা বলে আখ্যায়িত করেছে, যার শুভফল কেবলমাত্র পৃথিবীতেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং এর প্রতিফল আখেরাতের জীবনকেও সুন্দর ও সুশোভিত করে তোলে।

আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘হে মুমিনগণ! আমি কি তোমাদের এমন এক ব্যবসায়ের সন্ধান দেবো, যা তোমাদের মর্মান্তিক শাস্তি থেকে রক্ষা করবে? তাহলো এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস রাখবে এবং তোমাদের জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম ও সাধনা করবে। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা উপলব্ধি করো।’ (সূরা আসসফ : ১০-১১)।

এই আয়াতে কারীমায় সুস্পষ্টভাবে বিবৃত হয়েছে যে, সৎ ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে তেজারত করলে পরকালের ভয়ঙ্কর শাস্তি হতে রক্ষা পাওয়া যাবে এবং নিরঙ্কুশ শান্তি ও সুখ লাভে কৃতার্থ হওয়া যাবে। শুধু তা-ই নয়, সৎ ব্যবসা দ্বারা অর্জিত ধন সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় যেমন দান করা যাবে, তেমনি ইসলাম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও এর বহুমুখী ব্যবহার সাধন করা সম্ভবপর হবে। এ জন্য ব্যবসায়ী শ্রেণির উচিত তাদের ভুলত্রুটির কাফফারা স্বরূপ উদারচিত্তে আল্লাহর রূহে দান-সদকাহ করা, যাতে করে জীবন ও জগতের সকল অঙ্গনে নেকী ও পুণ্যের স্রোতধারা অবিরাম গতিতে বইতে থাকে। বিক্রেতার কর্তব্য হলো ক্রেতার প্রাপ্য যথাযথভাবে আদায় করে দেয়া, পরিমাপে ও ওজনে বিশ্বস্ততার পরিচয় দেয়া।

আল কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে : ‘ধ্বংস হীন ঠকবাজদের জন্য। যারা পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে। যখন তাদের মেপে দেয় অথবা ওজন করে দেয় তখন কম দেয়। তারা কি ভেবে দেখে না, মহাদিবসে তারা পুনরুত্থিত হবে? সেদিন সমস্ত মানুষ জগৎসমূহের প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে।’ (সূরা মুতাফফিকীন : ১-৬)।

তাছাড়া চড়া দাম পাওয়ার আশায় খাদ্যবস্তু গুদামজাত করে রাখা এবং আল্লাহর সৃষ্টিকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা নেহায়েত দরকার। নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেছেন : ‘গুদামজাতকারী প্রকৃতই পাপী।’ (মেশকাত)। একই সাথে বিক্রেতার উচিত মালের দোষ-ত্রæটি গোপন না করা এবং ক্রেতাসাধারণের সাথে সদাচরণ করা এবং ঋণ গ্রহীতাদের সাথে রু² ব্যবহার না করা।

রাসূলে পাক (সা.) বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি প্রতারণা করে তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’ (সহীহ মুসলিম)। তিনি আরো বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি ক্রয়-বিক্রয় এবং পাওনা আদায়ের ব্যাপারে গ্রহীতার সাথে কোমল ব্যবহার করে এবং উত্তম চরিত্রের পরিচয় দেয়, আল্লাহপাক তার প্রতি কৃপাবান হন।’ (সহীহ বুখারী)।

তবে, ব্যবসায়ীদের উচিত নিজে পরিশ্রম করা এবং কর্মচারীদেরও পরিশ্রমী করে তোলা। অবশ্য অধীনস্থদের প্রাপ্য উদারচিত্তে আদায় করাই শ্রেয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘যে সমাজে দুর্বলদের প্রাপ্য পুরোপুরি আদায় করা হয় না, আল্লাহপাক সে সমাজের লোকদের পবিত্র করবেন না।’ (সহীহ মুসলিম)।

ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সঠিক সময়ের প্রতি লক্ষ্য রাখাও দরকার। কেননা, সময় জ্ঞান একটি উত্তম পাথেয়। ক্রেতারা যেন বিক্রেতাকে হিতাকাক্সক্ষী মনে করে এমন পরিবেশ গড়ে তোলা প্রত্যেক বিক্রেতারই উচিত।

বস্তুত ব্যবসা-বাণিজ্যে সর্বদা আমানতদারী ও বিশ্বস্ততার পরিচয় দেয়া নেহায়েত দরকার। রাসূলূল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘সত্যবাদী ও নিষ্ঠাবান ব্যবসায়ী কিয়ামত দিবসে নবী সিদ্দিক ও শহীদদের সাথে উঠবে।’ (সহীহ মুসলিম)।

মনে রাখা দরকার যে, ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতি করতে চাইলে সর্বদা সত্যের আশ্রয় নেয়া এবং মিথ্যা শপথ থেকে কঠোরভাবে বিরত থাকা জরুরি। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ করে ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতির চেষ্টা করবে, কিয়ামত দিবসে আল্লাহপাক তার সাথে কথা বলবেন না এবং তার দিকে মুখ তুলে তাকাবেন না, এমনকি তাদের পাক পবিত্র করে জান্নাতেও দাখিল করবেন না।’ (সহীহ মুসলিম)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
নুরজাহান ১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩:১৩ এএম says : 0
পুরো পৃথিবী সৃষ্টিকারী এবং প্রতিপালনকারী মহান আল্লাহ। রুটি-কাপড় এবং বাসস্থান হল মানুষের মৌলিক প্রয়োজন। প্রয়োজন পুরা করার জন্য মানুষ বিভিন্ন উপায়ে অর্থ উপার্জন করে। তন্মধ্যে ব্যবসা হল সবচেয়ে উত্তম এবং শ্রেষ্ঠ।
Total Reply(0)
মাহমুদ ১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩:১৪ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের সবাইকে নবীর সুন্নত ব্যবসাকে আপন করে নেয়ার এবং ঈমানদারী, চেষ্টা-প্রচেষ্টা, মন দিয়ে ইসলামের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবসা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
জসিম ১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩:১৫ এএম says : 0
ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীকে সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততার সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হবে, অবৈধ উপার্জন ও লোভ-লালসাকে সংবরণ করতে হবে। আর এটাই ইসলামের দাবী। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সততার সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করে ইহকালে আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জন ও পরকালে মুক্তি লাভের তাওফীক দান করুন। আমীন!!
Total Reply(0)
পাবেল ১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩:১৫ এএম says : 0
ব্যবসা-বাণিজ্যে ওজনে কম-বেশী করা গুরুতর অপরাধ। এতে এক শ্রেণীর মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর এক শ্রেণীর মানুষ সাময়িকভাবে লাভবান হয়, যা ইসলামে কাম্য নয়।
Total Reply(0)
আরমান ১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩:১৬ এএম says : 0
ইসলাম উপার্জনের পেশা হিসাবে হালাল পথে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে যেমন উৎসাহ দিয়েছে, তেমনি অবৈধ পথে অর্থ-সম্পদ উপার্জন করতেও নিষেধ করেছে। মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে অবৈধ উপায়ে সম্পদ উপার্জন করে সাময়িকভাবে লাভবান হওয়া গেলেও এর শেষ পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। কাজেই অন্যায়, যুলুম, ধোঁকাবাজি, প্রতারণা, মুনাফাখোরী, কালোবাজারী, মওজুদদারী ইত্যাদি অবৈধ ও ইসলাম বিরোধী কার্যাবলী পরিহার করে সততার সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন