বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সাফল্যের পথ বর্তমানকে কাজে লাগানো-২

মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

আমরা যদি আমাদের ব্যক্তিজীবন ও সমাজ-জীবনকে পর্যবেক্ষণী দৃষ্টিতে দেখি তাহলে এই সত্য খুব স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করতে পারব। ইসলামের দৃষ্টিতে যা কিছু ‘মুনকার’ ও পরিত্যাজ্য, তা আকীদা ও বিশ্বাসগত হোক, কিংবা কর্ম ও আচরণগত এই সবের কত কিছু আমাদের মুসলিম-সমাজে বিস্তার লাভ করেছে। কালেমা পাঠকারী কত আল্লাহর বান্দা সেসব বর্জনীয় বিশ্বাস ও কর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েছে! কত বর্জনীয় বিষয় এমন আছে, যেগুলোর পক্ষে প্রচার-প্রচারণাও রয়েছে! সেসব প্রচার-প্রচারণার শিকার হয়ে কত অসংখ্য মানুষ বিপথগামী হয়েছে এবং অনৈসলামিক চিন্তা, বিশ্বাস ও কর্মের মাঝে লিপ্ত হয়েছে! এক এক করে এই সব বিষয়ের তালিকা যদি প্রস্তুত করা হয় তাহলে সেই তালিকা মোটেও ছোটখাটো হবে না, অনেক দীর্ঘ হবে।

সমাজে যখন ফিতনার বিস্তার ঘটে তখন ফিতনার শিকার মানুষের কী অবস্থা হয় তা উপরোক্ত হাদীসে খুব সংক্ষেপে ও সারগর্ভ ভাষায় এভাবে বলা হয়েছে : ‘ব্যক্তি সকালে মুসলিম থাকবে, সন্ধ্যায় কাফিরে পরিণত হবে কিংবা বলেছেন, সন্ধ্যায় মুসলিম থাকবে, সকালে কাফিরে পরিণত হবে’। ইমাম নববী রাহ. বলেন : ফিতনাসমূহের বিস্তার ও ভয়াবহতার কারণে একদিনের মধ্যেই মানুষের এমন এমন পরিবর্তন ঘটবে। এর আরো ব্যাখ্যা এসেছে পরের বাক্যে : সামান্য পার্থিব স্বার্থের বিনিময়ে নিজের দ্বীনদারি বিসর্জন দিবে।

সকল ফিতনার স্বরূপ হচ্ছে মানুষ ঈমান থেকে কুফরের মধ্যে কিংবা ‘সালাহ’ ও পরহেযগারী থেকে গোমরাহী ও পাপাচারের মধ্যে চলে যাওয়া। আর এর পেছনে পার্থিব স্বার্থই বড় কারণ। সামান্য পার্থিব স্বার্থের জন্য নিজের দ্বীনদারি বিসর্জন দেয়া। ফিতনাসমূহের পরিচয়ের ক্ষেত্রে এটি এমন এক সারগর্ভ বাণী, যার দ্বারা কিয়ামত পর্যন্ত সব ধরনের ফিতনা চিহ্নিত করা এবং ফিতনাকে ফিতনা হিসেবে বুঝতে পারা সম্ভব। শুধু তাই নয়, ফিতনার শিকার ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর পক্ষেও একান্তে নিজের বিচার নিজে করা সম্ভব।

ফিতনা থেকে আত্মরক্ষার জন্য ফিতনাকে ফিতনা হিসেবে চিনতে পারাটা জরুরি। এর জন্য জ্ঞান ও উপলব্ধির যে আলোর প্রয়োজন তা কোরআন-সুন্নাহয় উম্মতের জন্য রয়েছে। কুফর-শিরক, গোমরাহী ও পাপাচারের যখন বিস্তার ঘটে তখন আমলে সালিহ ও নেক আমল থেকে মানুষ নানাভাবে বঞ্চিত হয়। আল্লাহর কাছে আমল মাকবুল হওয়ার জন্য তো ঈমান সবচেয়ে বড় শর্ত। কাজেই কুফর-শিরকের ফিতনায় পড়ে ঈমান হারানো ব্যক্তির আমলের কী মূল্য আছে?

তেমনি বিদআতে লিপ্ত হয়ে নিজ ধারণা অনুসারে বড় বড় আমলেও কোনো লাভ নেই। আমল তো সেটিই গ্রহণযোগ্য, যা সুন্নাহ মোতাবেক হয়। তেমনি গুনাহ ও পাপাচারের বিস্তারের ক্ষেত্রগুলোতে মানুষের আমলনামায় ভালো কাজ কমতে থাকে, গুনাহের কাজ বাড়তে থাকে। আর যা কিছু নেক আমল করা হয় তারও পূর্ণ সুফল থেকে বঞ্চিত হতে থাকে। কাজেই হাদীস শরীফের শিক্ষা, ফিতনাসমূহ আসার আগেই ভালো কাজ করো।

ভবিষ্যতের সুসময়ের অপেক্ষায় বর্তমানকে কর্মহীন রাখা নির্বুদ্ধিতা। বর্তমান সম্পর্কে এবং বর্তমানের করণীয় সম্পর্কে যে সজাগ হয় এবং সেই করণীয় নিষ্ঠার সাথে পালন করতে থাকে তার সময়টাই কাজে লাগে এবং সময়ের সুফল ঘরে তোলা তার পক্ষেই সম্ভব হয়।

এই হাদীস থেকে আমাদের জীবন ও কর্মের জন্য যে শিক্ষাগুলো আমরা গ্রহণ করতে পারি তা হচ্ছে : ১. নেক আমল ও ভালো কাজের বিষয়ে উদ্যমী ও তৎপর হওয়া। ২. বর্তমানের মূল্য বোঝা। একে কাজে লাগানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। ৩. বর্তমানের নানাবিধ সমস্যা ও সঙ্কটে হতোদ্যম না হয়ে এই পরিস্থিতিতে সাধারণ ও বিশেষ উভয় প্রকারের দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করে যাওয়া। ৪. চারপাশের বিশ্বাসগত ও কর্মগত ফিতনা থেকে নিজের ঈমান আমলকে রক্ষা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।

৫. সম্পদের মোহ ও পদ-পদবির লিপ্সা থেকে অন্তরকে শুদ্ধ ও পবিত্র করার চেষ্টা করা। ৬. ভিতরের প্রবণতাসমূহ যেমন, ক্রোধ, জিঘাংসা, প্রতিহিংসা, যৌনতা, প্রবৃত্তিপরায়ণতা প্রভৃতির অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় সন্ধান করা। কারণ এইসকল আভ্যন্তরীণ প্রবণতা ফিতনার শিকার হওয়ার অনেক বড় কারণ। ৭. বাইরের প্রচার ও পাপাচারের পরিবেশে প্রভাবিত না হওয়া। ৮. দাওয়াত, তালীম, আমল বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকারের ব্যাপারে যত্মবান হওয়া। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দান করুন- আমীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Shahadat Hossain ৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৫:৪২ এএম says : 0
ফিতনা থেকে আত্মরক্ষার জন্য ফিতনাকে ফিতনা হিসেবে চিনতে পারাটা জরুরি।
Total Reply(0)
হাবীব ৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৫:৪৭ এএম says : 0
সুন্দর এই লেখাটির জন্য লেখককে ধন্যবাদ
Total Reply(0)
আবদুর রহমান ৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:০৭ এএম says : 0
বর্তমানকে যথাযথভাকে কাজে লাগাতে পারলেই কেবল সফলতা সম্ভব
Total Reply(0)
দুলাল ৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:০৭ এএম says : 0
ভবিষ্যতের সুসময়ের অপেক্ষায় বর্তমানকে কর্মহীন রাখা নির্বুদ্ধিতা।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন