ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা থানার ২নং বড়গ্রাম ইউনিয়নের কাতলসার গ্রামের সাধারণ লোকজন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়েছিল। সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়ে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছিল এই অপরাধে গ্রামের ঘরবাড়ি জ¦ালিয়ে দেয় হানাদার বাহিনী। ১৯৭১ সালের ২ আগস্ট সকাল ১১টায় হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে এই গ্রামের ১৪ জনকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে এবং ঘটনাস্থলে থাকা অপর ১৪ জন প্রতিরোধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে সক্ষম হন, যাদের মধ্যে ২ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে এখনও বেঁচে আছেন। ২নং বড়গ্রাম ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জনাব মো. আ. হাকিম সাহেবকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘কাতলসার গ্রামের শহীদদের অধিকার আদায়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে ২০১১ সালে ঘটনাস্থলকে একটি বধ্যভূমি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।’ ২নং বড়গ্রাম বধ্যভূমির আহ্বায়ক মো. নজরুল ইসলামের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক নিহতদের গণকবর যেখানে দেয়া হয়েছিল তার পাশে শহীদদের আত্মত্যাগ স্মরণে ১৯৭২ সালের ২৫ ডিসেম্বর শহীদ স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু অনেক চেষ্টার পরও স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও কাতলসার গ্রামের শহীদদের রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো সম্মান দেয়া হয়নি কিংবা নিহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর শহীদ পরিবার হিসেবে স্বীকৃতিও মেলেনি।’ ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ওমর আলী, মো. দুলাল উদ্দিন, মো. আ. সালাম মাস্টার, মো. ছোহরাব আলী মুন্সী, ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. সোহেল সরকারসহ নিহত এবং আহত ব্যক্তিদের পরিবার পরিজনদের সাথে কথা বলে ১৯৭১ সালে নিহত ও আহত ব্যক্তিবর্গের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। নিহত ব্যক্তিরা হলেন কাতলসার গ্রামে শহীদ রজব আলী (বয়স-৫০, পিতা- মৃত নাছিম উদ্দিন), শহীদ আবেদ আলী (বয়স-৪৮, পিতা- মৃত নাছিম উদ্দিন), শহীদ আহাদ আলী (বয়স-৫০, পিতা- মৃত শুকুর আলী), শহীদ রাজ মামুদ (বয়স-৪৫, পিতা- মৃত আব্দুল আলী), শহীদ সাহাব উদ্দিন (বয়স-৪৪, পিতা- মৃত হাসেন আলী), শহীদ হাসেন আলী (বয়স-৫৫, পিতা- মৃত আজিম উদ্দিন), শহীদ কুমেদ আলী (বয়স-১৮, পিতা- মৃত হাসেন আলী), শহীদ জবেদ আলী (বয়স-৪১, পিতা- মৃত সাহাদ আলী), শহীদ মহির উদ্দিন (বয়স-৪২, পিতা- মৃত আয়াত আলী মুন্সী), শহীদ মেহের আলী মন্ডল (বয়স-৬০, পিতা- মৃত চামারি মন্ডল), শহীদ খোরশেদ আলী (বয়স-৪০, পিতা- মৃত সফর আলী মন্ডল), শহীদ মন্নেছ আলী (বয়স-৩৫, পিতা- মৃত সিরাজ আলী), মির্জাকান্দা গ্রামের শহীদ শাহেদ আলী মন্ডল (বয়স-৭০, পিতা- মৃত আয়েন মন্ডল) এবং বনবাড়ী গ্রামের শহীদ কানু মন্ডল (বয়স-৬৫, পিতা- মৃত মন্ধি মন্ডল)। ১৯৭১ সালের ২ আগস্ট যারা গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছিলেন তারা হলেন, কাতলসার গ্রামের মো. আব্দুস সামাদ (বয়স-৩৫, পিতা- মৃত সফর আলী), মো. জবেদ আলী (বয়স-৩০, পিতা- মৃত মেহার আলী), মো. হাসেন আলী (বয়স-৪০, পিতা- মৃত হাজী রহিত আলী), মো. আবেদ আলী, (বয়স-৪২, পিতা- মৃত হাজী রহিত আলী), মো. আমজাদ আলী (বয়স-২২, পিতা- মৃত বান্দু সেক), মো. আতাব আলী (বয়স-২৮, পিতা- নইম উদ্দিন), মো. ছিদ্দিকুর রহমান (বয়স-২৫, পিতা-মৃত ইয়াদ আলী), মো. অহেদ আলী (বয়স-৪২, পিতা- শুকুর আলী), মো. লাল মামুদ (বয়স-৩৩, পিতা- মৃত ফজর আলী), মো. ছোহরাব আলী (বয়স-৩৪, পিতা-মৃত সরুবুল্লাহ), মো. মহির উদ্দিন (বয়স-৩৮, পিতা- মৃত ফইটা মন্ডল), মো. জালাল উদ্দিন, (বয়স-২৬, পিতা- মৃত সেহার আলী), মো. নইম উদ্দিন (বয়স-৩২, পিতা-মৃত সাবান আলী) এবং মো. মেহার আলী (বয়স-৪৪, পিতা- মৃত ইনাত উল্লাহ মুন্সী)।
জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বছরব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। ময়মনসিংহ সংসদীয় আসন-৫ (মুক্তাগাছা) এর সংসদ সদস্য মুক্তাগাছা থানার আওয়ামী-রাজনীতির প্রবাদ প্রতীম প্রতিমন্ত্রী (সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার) আলহাজ¦ কে. এম. খালিদ এম.পি. মহোদয়ের প্রতি আকুল আবেদন এই যে, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আপনার সংসদীয় আসনের ২নং বড়গ্রাম ইউনিয়নে কাতলসার গ্রামের যেসব বীর সন্তানেরা শহীদ হয়েছিলেন এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান এবং শহীদদের পরিবারগুলোকে শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি প্রদান করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে উল্লিখিত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মুখে হাসি ফিরিয়ে আনবেন।
লেখক: শিক্ষক এবং মানবাধিকার সংগঠক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন