বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সূরা মুলক : আমল ও ফজিলত-২

মাওলানা মুহাম্মাদ ফজলুল বারী | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

এ সূরা তিলাওয়াতকারীর জন্য কবরের আযাব থেকে প্রতিবন্ধক হবে : কবরের আযাব থেকে আল্লাহর পানাহ। কবরের আযাব অত্যন্ত ভয়াবহ। মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণী কবরের আযাব বুঝতে পারে, শুনতে পারে। নবীজী (সা.) বলেন, মানুষ দাফন করতে ভয় পাবে; নইলে আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম, তিনি যেন তোমাদের কবরের আযাব শোনান। নবীজী আমাদেরকে কবরের আযাব থেকে পানাহ চাইতে বলেছেন। যায়েদ ইবনে ছাবেত রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : তোমরা কবরের আযাব থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর। (সহীহ মুসলিম : ২৮৬৭)।

নবীজী (সা.) নিজেও কবরের আযাব থেকে পানাহ চাইতেন। আয়েশা রা. বলেন, একবার এক ইহুদী নারী তার কাছে এলো। সে কবরের আযাব প্রসঙ্গে আলোচনা করল এবং বলল, আল্লাহ আপনাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করুন। নবীজী এলে আয়েশা রা. তাঁকে কবরের আযাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। নবীজী উত্তরে বললেন, হাঁ, কবরের আযাব (সত্য)। আয়েশা রা. বলেন : এর পর থেকে আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে দেখেছি, প্রতি নামাযের পরই তিনি কবরের আযাব থেকে পানাহ চাইতেন। (সহীহ বুখারী : ১৩৭২)।
নবীজী (সা.) কী ভাষায় কবরের আযাব থেকে পানাহ চাইতেন তাও বর্ণিত হয়েছে হাদীস শরীফে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) দুআয় বলতেন : হে আল্লাহ! আমি কবরের আযাব থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। জাহান্নামের শাস্তি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আরো আশ্রয় প্রার্থনা করছি, জীবন-মৃত্যু ও দাজ্জালের ফিতনা থেকে। (সহীহ বুখারী : ১৩৭৭)।

কবরের আযাব থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনার সাথে সাথে একটি আমলও আমাদেরকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করবে। তা হলো, সূরা মুলকের আমল। এ সূরা তার আমলকারীর জন্য কবরের আযাবের সামনে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন : (সূরা মুলকের আমলকারী) ব্যক্তিকে যখন কবরে রাখা হবে, (আযাবের) ফিরিশতারা তার পায়ের দিক থেকে আসবে; তখন পা বলবে, এদিক দিয়ে তোমরা তার পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। সে (আমার ওপর ভর করে) নামাযে দাঁড়িয়ে সূরা মুলক তিলাওয়াত করত।
এরপর বুক অথবা পেটের দিক থেকে এলে তা বলবে, এদিক থেকেও তোমরা তাকে কিছু করতে পারবে না; সে তো সূরা মুলক তিলাওয়াত করত (আমার মাঝে সূরা মুলক ধারণ করত)। মাথার দিক থেকে এলে বলবে, আমার দিক থেকেও তোমাদের তার পর্যন্ত পৌঁছা সম্ভব নয়; সে তো সূরা মুলক তিলাওয়াত করত (আমার মাঝে সূরা মুলক সংরক্ষণ করত)।

ইবনে মাসউদ রা. বলেন, এ সূরা ‘মানিআহ’-বাধা দানকারী; ব্যক্তি থেকে কবরের আযাব রুখে দেয়। যে ব্যক্তি রাতে এটি তিলাওয়াত করল সে অনেক ভালো ও বড় কাজ করল। (মুসতাদরাকে হাকেম : ৩৮৩৯)।
এ বর্ণনাটি তবারানী ও আব্দুর রাযযাকে এ শব্দ-বাক্যে এসেছে : এক ব্যক্তি ইন্তেকাল করল। (কবরে) আযাবের ফিরিশতা মাথার কাছে এসে বসলে তা বলল, এদিক দিয়ে তোমরা তার পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না; কারণ সে সূরা মুলক তিলাওয়াত করত। তারা পায়ের কাছে গিয়ে বসলে তা বলল, আমার দিক থেকেও তোমরা তার কিছু করতে পারবে না; সে আমার ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে সূরা মুলক তিলাওয়াত করত। এরপর তারা পেটের কাছে গিয়ে বসলে তা বলল, সে আমার মাঝে (বক্ষে) সূরা মুলক ধারণ করেছে; সুতরাং তোমরা আমার দিক থেকেও তার কিছু করতে পারবে না।
একারণেই সূরা মুলকের নাম হয়েছে, ‘আলমানিআহ’ বাধা দানকারী, প্রতিহতকারী। -আলমুজামুল কাবীর, তবারানী : ৮৬৫০)।

নবীজী রাতে সূরা মুলক তিলাওয়াত না করে ঘুমাতেন না : নবীজী (সা.) অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে সূরা মুলক তিলাওয়াত করতেন। এমনকি রাতে সূরা মুলক এবং সূরা সাজদাহ তিলাওয়াত না করা পর্যন্ত ঘুমাতেন না। জাবের রা. বলেন : নবীজী (সা.) সূরা সাজদাহ ও সূরা মুলক তিলাওয়াত না করা পর্যন্ত ঘুমাতেন না। -জামে তিরমিযী : ৩৪০৪; মুসনাদে আহমাদ : ১৪৬৫৯)। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন!

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
নিজাম ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৫৩ এএম says : 0
আল্লাহ তায়ালা নিয়মিত সুরা মুলক পড়ার তৌফিক দিন।
Total Reply(0)
রুদ্র মোহাম্মদ শাকিল ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৫৩ এএম says : 0
THIS SURA READ AFTER ISAA NAMZ
Total Reply(0)
মোহাম্মদ রমিজ ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৫৩ এএম says : 0
মানুষকে গোনাহমুক্ত জীবন দানের জন্য কুরআন সুন্নায় অনেক আমলের বর্ণনা দিয়েছেন বিশ্বনবি। লক্ষ্য একটাই যাতে মানুষ গোনাহমুক্ত জীবন লাভ করতে পারে। এটিও তার একটি।
Total Reply(0)
সত্য উন্মোচন ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৫৩ এএম says : 0
সুরা মুলক রাতের বেলা পড়া উত্তম, তবে অন্য যেকোনো সময়ও পড়া যাবে। সুরাটি অর্থ বুঝে নিয়মিত পড়ায় রয়েছে অনন্য তাৎপর্য।
Total Reply(0)
মিফতাহুল জান্নাত ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৫৪ এএম says : 0
এই সুরা নামাজের সঙ্গে পড়াও উত্তম। মুখস্ত না থাকলে দেখে দেখে অর্থ বুঝে পড়লে বিশেষ সাওয়াব পাওয়া যায়।
Total Reply(0)
হুসাইন আহমেদ হেলাল ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৫৪ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুরা মুলকের আমল নিয়মিত করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত ফজিলত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন