বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মৃত্যুর পর পুনরুত্থান দিবস-৪

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

‘ইয়াওমুল বা’ছ’ বা পুনরুত্থান দিবসে বান্দাহদের আমলসমূহ দু’বার ওজন করা হবে। প্রথমবার মু’মিন ও কাফিরকে পৃথক করার জন্য আমলসমূহ পরিমাপ হবে।

এই পরিমাপে কালিমায়ে ত্বাইয়্যিবাতে’ বিশ্বাসীদের নেকীর পাল্লা ভারী হবে এবং তারা মুমিনদের মধ্যে পরিগণিত হবে এবং কাফিরদের বদীর’ পাল্লা ভারী হবে এবং তারা জাহান্নামী বলে গণ্য হবে। আর দ্বিতীয়বার মুমিনদের মধ্যে কে সৎ এবং কে অসৎ পার্থক্য করার জন্য শুধু মুসলমানদের আমল ওজন করা হবে। এ পরিমাপে যাদের নেকীর পাল্লা ঝুঁকে যাবে বা ভারী হবে, তারা সফলকাম বলে বিবেচিত হবে এবং জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি লাভ করবে। আর যাদের বদ আমলের পাল্লা ঝুঁকে যাবে, তারা ব্যর্থ বলে বিবেচিত হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ নির্ধারিত মেয়াদে শাস্তি ভোগ করে মুক্তিপাবে আবার কেউ কেউ সাফায়াতের মাধ্যমে মুক্তিলাভ করবে।

এতদপ্রসঙ্গে আল কোরআন ও আল হাদীসে সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। যেমন (ক) আল্লাহ ফরমান : যার মানদন্ড ভারী হবে সে আনন্দময় জীবন লাভ করবে। আর যার মানদন্ড হালকা হবে, সে ‘হাভীয়ার’ অধিবাসী হবে। আপনি কি জানেন তা’কী? তা’হলো উত্তপ্ত অগ্নি। (সূরা আল ক্বারিয়াহ : আয়াত ৬-১১)।

(খ) ইরশাদ হয়েছে : যাদের পরিমাপ যন্ত্র ভারী হবে, তারাই হবে সফলকাম। আর যাদের পরিমাপ যন্ত্র হালকা হবে, তারা নিজেদেরকে ধ্বংস করেছে। তারা চিরকাল জাহান্নামে অবস্থান করবে। (সূরা আল মুমিনুন : আয়াত ১০২-১০৩)।

(গ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : হযরত নূহ (আ.)-এর ওফাত লাভের সময় নিকটবর্তী হলে তিনি তাঁর দু’পুত্রকে আহ্বান করে বললেন আমি তোমাদের দু’জনকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ ধারণ করতে নির্দেশ দিচ্ছি। নিশ্চয়ই আসমান জমিন এবং এতদুভয়ের মধ্যস্থিত সকল কিছু যদি মীযানের এক পাল্লায় রাখা হয়, আর ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অন্য পাল্লায় রাখা হয়, তবে কালেমার পাল্লাটি অপর পাল্লা হতে ভারী হবে। (কানজুল উম্মাল: ১৬/১০৭)।

(ঘ) হযরত খাইছামা বিন সুলাইমান স্বীয় সনদে হযরত জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা.) হতে রেওয়ায়েত করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : পুনরুত্থানের দিন পরিমাপ যন্ত্রসমূহ স্থাপন করা হবে। নেকী ও বদীসমূহ ওজন করা হবে। অনন্তর যার নেকীসমূহ বদীসমূহের ওপর সামান্য পরিমাণও প্রাধান্য পাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যার মন্দ আমলসমূহ ভালো আমলসমূহের ওপর প্রাধান্য লাভ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (আত্ তাসকিরাহ : লিলকুরতুবী-পৃষ্ঠা-২৭৭)।

বান্দাহর আমলসমূহকে আমরা চারটি ভাগে ভাগ করে শ্রেণি বিন্যাস করতে পারি। যথা : (ক) উক্তি বাচক আমল, (খ) কর্মবাচক আমল (গ) দেহিক আমল ও (ঘ) আর্থিক আমল। এই সকল প্রকার আমলই পুনরুত্থান দিবসে ওজন করা হবে। আমল ওজন করা বলতে আমলনামা ওজন করা অথবা আমেল বা আমলকারীকে ওজন করা মোটেই বুঝায় না। মোটকথা, আমল ওজন করা হবে। অন্য কিছু নয়। হাদীসে সুস্পষ্ট ঘোষণা প্রদান করা হয়েছে।

যথা (ক) আল্লাহপাক ফরমান : সরিষা পরিমাণ আমল হলেও আমি তা হাশরের ময়দানে আনয়ন করব। হিসাব গ্রহণকারী হিসেবে আমিই যথেষ্ট। (সূরা আল আম্বিয়া : আয়াত-৪৭)।
(খ) ইরশাদ হয়েছে : সে দিন সকলেই তার আমল উপস্থাপিত পাবে, তা ভালো হোক বা মন্দ হোক। (মন্দ আমলকারী নফস) কামনা করবে, হায়! যদি তার ও এদিনের মধ্যে দূরতম ব্যবধান সূচিত হতো! (সূরা আলে ইমরান : আয়াত-৩০)।

(গ) আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মতে, অধিকতর সঠিক কথা হলো এই যে, আখিরাতে আমলসমূহকে দৈহিক রূপ প্রদান করা হবে। অথবা কোনো দেহে সেগুলোকে প্রবিষ্ট করানো হবে। অনুগত ও বাধ্য বান্দাহদের আমলসমূহ সুন্দর ও সুশ্রী রূপে এবং অবাধ্য ও অপরাধী বান্দাহদের আমলসমূহ কুশ্রী ও বিশ্রী রূপে পরিদৃশ্য হবে। অনন্তর তা’ ওজন করা হবে। (ফাতহুলবারী শরহে বুখারী : ১৩/৬৫৯)

(ঘ) একদল উলামায়ে কেরাম বলেন : বান্দাহর কর্ম, উক্তি, দৈহিক ও আর্থিক সকল প্রকার আমলই সে দিন আল্লাহর নির্দেশ মতো দেহ ধারণ করবে। অনন্তর তা পরিমাপ করা হবে। (উমদাতুল ক্বারী: শরহে বুখারী; ১৬/৭৩৭)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
MD Khaled Parvez ২০ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:২৭ এএম says : 0
পুনরুত্থানের প্রাথমিক স্তর জন্ম। অর্থাৎ জন্মের পর মৃত্যু আর মৃত্যুর পরে মানুষ পুনরুত্থিত হবে। মানব জাতির জন্য পুনরুত্থানে বিশ্বাস স্থাপন ঈমানের অন্যতম প্রধান অঙ্গ। যারা পুনরুত্থানে বিশ্বাস করে না তারা আল্লাহ তা‘আলার প্রতিও বিশ্বাস রাখে না।
Total Reply(0)
সত্য উন্মোচন ২০ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:২৭ এএম says : 0
আল্লাহ তা‘আলা বিপুলায়তনের নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। মানুষ তন্মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রাণী। মহান রাববুল আলামীন তাঁর প্রিয় ও শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানব জাতিকে পৃথিবীতে জীবন যাপনের জন্য সাময়িক সুব্যবস্থা করে দিয়েছেন মাত্র। অতঃপর পৃথিবীতে তার নির্ধারিত বয়স শেষ হয়ে গেলে, আল্লাহর আদেশে তার মৃত্যু হবে। অতঃপর ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে এবং সকল মানুষকে বিচারের জন্য পুনরুত্থিত করা হবে।
Total Reply(0)
কায়কোবাদ মিলন ২০ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:২৮ এএম says : 0
আসলে উত্থান ও পুনরুত্থানের মূল উপাদান ‘আত্মা’ হ’ল একটা অতি সূক্ষ্ম ও অদৃশ্য বস্ত্ত, যার হদীছ লাভ করা সমগ্র মানব জাতির পক্ষে অসম্ভব। এর মহানিয়ন্ত্রক হ’লেন আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং। পবিত্র কুরআনে পুনরুত্থানের নিশ্চয়তা প্রদানকারী বহু আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে।
Total Reply(0)
হুসাইন আহমেদ হেলাল ২০ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:২৮ এএম says : 0
‘নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সব তাঁরই। সবাই তাঁর আজ্ঞাবহ। তিনিই প্রথমবার সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনয়ন করেন, অতঃপর পুনর্বার তিনি সৃষ্টি করবেন। এটা তাঁর জন্য সহজ। আকাশ ও পৃথিবীতে সর্বোচ্চ মর্যাদা তাঁরই এবং তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ (রূম ২৬, ২৭)।
Total Reply(0)
মনির হোসেন মনির ২০ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:২৮ এএম says : 0
আল্লাহ তা‘আলা হ’লেন দৃশ্য ও অদৃশ্য জগতের সকল সৃষ্টির স্রষ্টা, পালনকর্তা, রক্ষক ও সর্বময় কর্তা। আর একমাত্র মানব জাতিই এসব কিছু অনুধাবন করার যোগ্য।
Total Reply(0)
মামুন রশিদ চৌধুরী ২০ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:২৯ এএম says : 0
মৃত্যুর পর কবর হ’তে পুনরুত্থানের বন্দোবস্ত নিঃসন্দেহে মানব জাতির চিরস্থায়ী কল্যাণের উৎস। তবে সেটা কেবলমাত্র আল্লাহর বিশ্বস্ত বান্দাদের জন্য প্রযোজ্য, অবিশ্বাসীদের জন্য মোটেও নয়।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন