বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সূরা মুমিনূন : সফল মুমিনের কয়েকটি গুণ-২

মাওলানা আলী হাসান | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

(তিন) যারা যাকাত সম্পাদনকারী। তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হলো, মুমিন যাকাত আদায় করে। যাকাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরয বিধান। হাদীসের ভাষায় ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি।
তাই ঈমানের অপরিহার্য দাবি, যাকাত ফরজ হলে যাকাত আদায় করা। যাকাত আদায় না করার ব্যাপারে কোরআন ও হাদীসে কঠিন হুঁশিয়ারি এসেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন : যারা সোনা-রুপা পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে যন্ত্রণাময় শাস্তির ‘সুসংবাদ’ দাও। যেদিন সে ধন-সম্পদ জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে, তারপর তা দ্বারা তাদের কপাল, পাঁজর ও পিঠে দাগ দেয়া হবে (এবং বলা হবে) এই হচ্ছে সেই সম্পদ, যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করতে। সুতরাং তোমরা যে সম্পদ পুঞ্জীভূত করতে, তা মজা করে ভোগ কর। (সূরা তাওবা : ৩৪-৩৫)।

বুখারী শরীফের এক হাদীসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন : যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন সেই সম্পদকে বিষাক্ত সাপের আকৃতি দিয়ে তার গলায় পেঁচিয়ে দেয়া হবে। সাপটি তার মুখের দু’পার্শ্ব কামড়ে ধরে বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার সঞ্চিত মাল। তারপর রাসূল (সা.) সূরা আলে ইমরানের ১৮০ নং আয়াতটি তিলাওয়াত করেন।

যার অর্থ হচ্ছে, ‘আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদে যারা কৃপণতা করে, তারা যেন কিছুতেই মনে না করে; এটা তাদের জন্য ভালো কিছু; বরং এটা তাদের পক্ষে অতি মন্দ। যে সম্পদে তারা কৃপণতা করে, কিয়ামতের দিন তা তাদের গলায় বেড়ি বানিয়ে দেয়া হবে। আকাশ ও পৃথিবীর মিরাছ কেবল আল্লাহরই জন্য। তোমরা যা-কিছুই কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবগত।’

(চার) যারা নিজ লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। চতুর্থ বৈশিষ্ট্য হলো, মুমিন তার লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। নিজের চাহিদা পূরণের জন্য সে কোনো অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে না। নিজের স্ত্রী ও শরীয়তসম্মত দাসী ছাড়া অন্য কারো সাথে তার চাহিদা পূরণ করে না। এ প্রসঙ্গে আরো ইরশাদ হয়েছে : মুমিন পুরুষদের বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এটাই তাদের জন্য শুদ্ধতর। তারা যা কিছু করে আল্লাহ সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবগত। এবং মুমিন নারীদের বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে। (সূরা নূর : ৩০-৩১)।

রাসূলে কারীম (সা.) ইরশাদ করেন : যে আমাকে তার দুই চোয়ালের মাঝের অঙ্গ অর্থাৎ, যবান এবং দুই পায়ের মাঝের অঙ্গের (সঠিক ব্যবহারের) যামানত দেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের যামিন হব। (সহীহ বুখারী : ৬৪৭৪)।

(পাঁচ ও ছয়) এবং যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে। এই আয়াতে মুমিনের দুটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে : এক. মুমিন আমানতের হেফাযত করে। আমানতের হেফাযত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। ইসলামে ‘আমানতের হেফাযত’ কথাটার মধ্যে যে ব্যাপকতা রয়েছে এবং এক্ষেত্রে মুসলমানদের যে ইতিহাস সংরক্ষিত আছে তা ইসলামের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। হিজরতের প্রসিদ্ধ ঘটনা অনেকেরই জানা আছে।

রাসূল (সা.) সেই কঠিন মুহূর্তেও নিজের কাছে গচ্ছিত আমানত আদায়ের জন্য হযরত আলী রা.-কে মক্কায় রেখে যান। (দ্র. সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৬/২৮৯)। কোরআন ও হাদীসের বিভিন্ন জায়গায় আমানত হেফাযতের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন : নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করছেন যে, তোমরা আমানতসমূহ তার হকদারকে আদায় করে দিবে। (সূরা নিসা : ৫৮)।

আমানতের খেয়ানতকে রাসূল (সা.) মুনাফিকের আলামত বলেছেন। রাসূল (সা.) বলেন : মুনাফিকের আলামত তিনটি। যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে ওয়াদা ভঙ্গ করে, তার কাছে কোনো কিছু আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে। (সহীহ মুসলিম : ৫৯)।

(সাত) যারা নিজেদের নামাজের পরিপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ করে। সপ্তম বৈশিষ্ট্য হলো, মুমিন নামাজের পরিপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ করে। ‘নামাজের রক্ষণাবেক্ষণ করে’ কথাটা ব্যাপক। এর মধ্যে অনেক বিষয় অন্তভুর্ক্ত। যেমন, পাবন্দির সাথে নামাজ আদায় করা, কখনো পড়বে কখনো পড়বে না-এমন নয়। সময়মতো নামাজ আদায় করা। জামাতের সাথে আদায় করা। নামাজের অন্য সকল শর্ত, আদাব ও নিয়ামাবলি রক্ষা করে সুন্দর ও সুচারুরূপে আদায় করা। (দ্র. তাফসীরে কাবীর ২৩/২৬৩) এর জন্য জরুরি হলো নামাজের এসকল শর্ত ও আদাব সম্পর্কে ইলম হাছিল করা।

এই সাতটি বৈশিষ্ট্য যাদের মধ্যে থাকবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁদের ব্যাপারে সফলতার ঘোষণা দিচ্ছেন এবং সুসংবাদ দিচ্ছেন যে, তাঁরা জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করবে। সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, এই সাতটি বৈশিষ্ট্যের প্রথম ও শেষ উভয়টিই নামাজের সাথে সম্পৃক্ত। এর দ্বারা বুঝা যায় মুমিনের যিন্দেগীর সফলতার জন্য নামাজের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি।

আল্লাহ আমাদের সকলকে এই সব বৈশিষ্ট্য অর্জনের তাওফীক দান করুন এবং আপন ফযল ও করমে জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরসূরি বানিয়ে দিন- আমীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
নাজিম ২২ ডিসেম্বর, ২০২১, ২:৪২ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের সকলকে এই সব বৈশিষ্ট্য অর্জনের তাওফীক দান করুন, আমীন।
Total Reply(0)
মাহমুদ ২২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩:৪২ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের এ গুরুত্বপূর্ণ সুরাগুলো বুঝে পড়ার এবং তাঁর ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
নিয়ামুল ২২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩:৪২ এএম says : 0
উপরোক্ত গুণাবলী অর্জনের মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণ সম্ভব। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন-আমীন!
Total Reply(0)
শাফায়েত ২২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩:৪৩ এএম says : 0
ইমান অর্থ বিশ্বাস। মুমিন মানে বিশ্বাসী। তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাতে বিশ্বাসীকে মুমিন বলা হয়। ইসলাম মানে আনুগত্য, মুসলিম অর্থ অনুগত ব্যক্তি, যিনি ইমানের সঙ্গে নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত এবং আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর যাবতীয় আদেশ-নিষেধ মেনে চলেন। মুমিন ও মুসলিম জন্মগত ও বংশীয় পরিচয় নয়, বিশ্বাস ও কর্মে তা অর্জন করতে হয়।
Total Reply(0)
এনায়েতুল্লাহ ২২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩:৪৫ এএম says : 0
মুমিন মুসলমানের জন্য নিয়মিত যথাযথ আমল করা আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ভালো কাজের শুকরিয়া, মন্দ কাজের গোনাহ থেকে পরিত্রাণ এবং বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন