বরিশাল-ঢাকা নৌপথে প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যায়ে দুটি অভ্যন্তরীন যাত্রীবাহী নৌযানের নির্মান কাজ ৫ বছরেও সম্পন্ন হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী ‘এমভি বঙ্গমাতা’ ও ‘এমভি বঙ্গতরি’ নামের এ দুটি নৌযান কুড়ি মাসে সরবারহের কথা থাকলেও রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠান-বিআইডব্লিউটিসি ৬০ মাসেও তা বুঝে পায়নি। প্রকল্পের মেয়াদ কয়েক দফা বৃদ্ধি করা হলেও এখন সে সুযোগও প্রায় নেই। নৌযান দুটির নির্মান কাজের বাস্তব অগ্রগতি গড়ে প্রায় ৮০ ভাগ হলেও ৯০ ভাগেরও বেশী অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে দাবী করা হলেও সংস্থাটির দায়িত্বশীলগন এ ব্যাপারে কিছু বলেন নি।
তবে একটি সূত্রের মতে, প্রায় ৬৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকায় নৌযান দুটি নির্মানের এ প্রকল্পখাতে সংস্থাটির তহবিলে মাত্র সাড়ে ৩ কোটি টাকা অবশিষ্ট রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, গত প্রায় বছরখানেক ধরে নৌযান দুটি নির্মানে কার্যত কোন অগ্রগতি না থাকলেও কয়েক মাস আগে নির্মান প্রতিষ্ঠানকে ৬ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে অনেকটা বিধি বহিভর্’তভাবে। বিষয়টি নিয়ে সদ্য যোগদানকারী চেয়ারম্যান যথেষ্ঠ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলেও জানা গেছে।
তবে এ ব্যাপারে সংস্থার চেয়ারম্যান আহমদ শামীম আল রাজী’র দাপ্তরিক সেল ফোনে বেশ কয়েক বার কল করা ছাড়াও ক্ষুদে বার্তা দেয়া হলেও তিনি তা কোন সাড়া দেননি। তবে পরিচালক কারিগরির সাথে আলাপ করা হলে তিনি ব্যাস্ত থাকায় বিস্তারিত কিছু বলতে রাজী না হলেও বিষয়টি নিয়ে নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ও সরাসরি খোজ খবর রাখছে বলে জানিয়ে এ ব্যাপারে সব সিদ্ধান্ত মন্ত্রনালয় ও সংস্থা মিলেই গ্রহন করবে বলে জানান। যত দ্রæত সম্ভব নৌযান দুটির নির্মান কাজ শেষ করে বানিজ্যিক পরিচালনে দেয়ার ব্যাপারেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় অর্থনৈতিক কমিটির চেয়ারম্যান শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২০১৫ সালের ৭ এপ্রিল ৭২ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যায় সাপেক্ষ সম্পূর্ণ দেশীয় তহবিলে বরিশাল-ঢাকা নৌপথে যাত্রী পরিবহন নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে দুটি যাত্রীবাহী নৌযান নির্মান প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্প ব্যায়ের ৮০ ভাগ অর্থ সরকারী কোষাগার থেকে এবং অবশিষ্ট ২০ভাগ বিআইডব্লিউটিসির নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যায় করার কথা।
কিন্তু প্রশাসনিক অনুমোদন, দরপত্র আহবান সহ দরপ্রস্তাব সমুহ মূল্যায়ন শেষে নির্মান প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি সম্পাদনেই বছরাধীক কাল চলে যায়। ২০১৬ সালের ১ জুন এক নম্বর লটে একটি নৌযান নির্মান ও সরবারহে ‘ওয়েষ্টার্ণ মেরিন শিপ বিল্ডার্স’এর সাথে ৩৩ কোটি ৯২ লাখ ৬৫ হাজার টাকার চুক্তি সম্পাদন করে বিআইডবিøউটিসি। ঐ বছরই ১৯ ডিসেম্বর দু নম্বর লটে অপর নৌযানটির জন্যও একই প্রতিষ্ঠানের সাথে ৩৩ কোটি ৮৩ লাখ ৭ হাজার টাকার চুক্তি সম্পাদন করে সংস্থাটি। চুক্তি সম্পানের তারিখ থেকে ২০ মাসে নৌযানগুলো সরবারহের কথা থাকলেও যথাক্রমে ৬৬ মাস ও ৬০ মাস সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু নৌযানের কোন দেখা নেই।
বিষয়টি নিয়ে সরেজমিনে খোজ নিতে ওয়ের্ষ্টার্ন মেরিনে গিয়ে তা বন্ধ থাকায় ভেতরে প্রবেস করা বা কারো সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। শিপ বিল্ডার্সটির বেসিনের কিনারায় নৌযান দুটি পড়ে আছে। তবে দুটি নৌযানেরই মূল অবকাঠামো সহ উপরী কাঠামোর ষ্টিল স্ট্রাকচারের কাজ শেষ হয়েছে। দুটি নৌযানেরই মূল ইঞ্জিন সহ জেনারেটর আমাদানীর পরে তা জাহাজে পৌছেছে। ব্রীজ ইকুপমেন্টও নৌযানে পৌছলেও তার বেশীরভাগই সংযোজন করা হয়নি।
এ অবস্থায় নৌযান দুটির নির্মান কাজ বন্ধ থাকলেও তা কবে শেষ হবে সে বিষয়ে বিআইডবিøউটিসি’র কাছে কোন জবাব নেই। তবে সংস্থাটিতে সদ্য যোগদানকারী চেয়ারম্যান খুব শিঘ্রই সরেজমিনে নৌযান দুটি পরিদর্শনে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
সাড়ে ৭শ যাত্রী বহনক্ষম ২৪৩ ফুট দৈর্ঘ ও ৪১ ফুট প্রস্থ নৌযান দুটিতে ১১শ অশ^ শক্তির দুটি করে মূল ইঞ্জিন ছাড়াও ৩টি মূল জেনারেটর সাথে আরো ১টি স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর থাকবে। প্রতিটি নৌযানের ডেকে সাড়ে ৬শ যাত্রী ভ্রমনের সুবিধা ছাড়াও প্রথম শ্রেণীর ৫৪টি ও ২য় শ্রেণীর ৪০টি আসন থাকবে। এছাড়াও ৮টি ভিআইপি কক্ষ থাকার কথা প্রতিটি নৌযানে।
কিন্তু কুড়ি মাসে সরবারহের লক্ষে চুক্তির পরে ৬০ মাস অতিক্রান্ত হলেও নৌযান দুটির কোন দেখা না মেলায় বিআইডবিøউটিসি’র দায়িত্বশীল মহলও বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ঠ উদ্বিগ্ন। তবে এব্যাপারে কেউ কোন কিছু বলতে চাচ্ছেন না। মূল প্রকল্প পারিচালক অবসরে চলে যাবার পরে আরো কয়েকজনের হাত ধরে সর্বশেষ সংস্থাটির মেরিন বিভাগের ডিজিএম বাপ্পি অধিকারী এর দায়িত্বে থাকলেও তিনিও এ বিষয়ে কোন কিছু বলতে রাজী হননি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন