সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

হাদিসের আলোকে সেরা দান-১

মাওলানা শিব্বীর আহমদ | প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৫ এএম

‘দানে ধন বাড়ে’, ‘দান করে কেউ দরিদ্র হয় না’- আমাদের সমাজে এসব কথা খুবই পরিচিত। ধার্মিক-অধার্মিক কিংবা মুসলিম-অমুসলিমের কোনো ফারাক এখানে নেই।

আমাদের চার পাশের দেখা বাস্তবতা হলো, স্বতঃস্ফূর্ত দানের মানসিকতা যাদের আছে, ধর্মীয় ও সামাজিক কল্যাণমূলক যে কোনো ইস্যুতে যারা বরাবর এগিয়ে আসেন, কোনো অভাবী-অসহায়-বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি কখনোই যাদের কাছ থেকে খালি হাতে ফেরে না, কখনোই তাদের কণ্ঠে এ অনুযোগও শোনা যায় না- দান করে আমি শেষ হয়ে গেছি! এ দান বরং তাদের সম্পদকে আরো সমৃদ্ধ করে তোলে। তারাও উদার হাতেই বিলিয়ে যান তাদের দান।

দান-সদকা মুমিন জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে দান-সদকার অনেক ফজিলতের কথা। দান করলে বিপদাপদ দূর হয়। দান আল্লাহ তাআলার ক্রোধকে নিভিয়ে দেয়। দানের প্রতিদানকে আল্লাহ তায়ালা সাতশ’ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন, এমনকি কাউকে আরো বেশি পরিমাণে নেকি দিয়ে থাকেন- কুরআন ও হাদিস থেকে আহরিত এসব কথা আমাদের মুখে মুখে বেশ প্রচলিত। বলার কথা হলো, এ দান-সদকা কেবল একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত- বিষয়টি এমনই নয়। বরং পবিত্র কুরআনে কারীমে খাঁটি ও যথার্থ মুমিনের পরিচয় দিতে গিয়ে মহান রাব্বুল আলামীন এ দান-সদকার কথাও বলেছেন।

ইরশাদ হয়েছে : সন্দেহ নেই, মুমিন তো তারাই, আল্লাহর নাম উচ্চারিত হলে যাদের অন্তর ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে, যখন তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হয় তখন তা তাদের ঈমানকে বাড়িয়ে দেয় এবং তারা তাদের প্রভুর ওপর ভরসা করে; যারা যথারীতি নামায আদায় করে এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। এরাই হচ্ছে প্রকৃত মুমিন। তাদের জন্য তাদের প্রভুর নিকট রয়েছে সুউচ্চ মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মানজনক রিজিক। (সূরা আনফাল : ২-৪)।

আল্লাহকে ভয় করা, পবিত্র কুরআনের তিলাওয়াত শুনে ঈমান বৃদ্ধি পাওয়া, আল্লাহ তাআলার ওপর ভরসা করা এবং নিয়ম মেনে নামায আদায় করা- একজন মুসলমানের জন্য তো এসবের কোনো বিকল্প নেই। তবে এখানে যে বিষয়টি লক্ষণীয়, এসবের পাশাপাশি আল্লাহ তাআলা প্রকৃত মুমিনের পরিচয় হিসেবে দান-সদকার কথাও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন- ‘আমি তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে।’ এ ব্যয় করার মধ্যে ফরজ দান জাকাত যেমন রয়েছে, তেমনি নফল দান-সদকাও এর অন্তর্ভুক্ত। দান-সদকা নিয়ে, তা ফরজ-নফল যাই হোক, পবিত্র কুরআনে তো কত কথাই বলা হয়েছে।

ফরজ দান তথা জাকাতের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ রয়েছে। কারও কাছে যদি জাকাত আদায়যোগ্য নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তবে শতকরা আড়াই টাকা হারে তাকে জাকাত আদায় করতে হয়। জাকাত যদি ফরজ হয়, তবে একজন মুসলমানের জন্য এ জাকাত আদায় থেকে বিরত থাকার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু নফল দানের ক্ষেত্রে এমন কোনো সীমা নির্ধারিত নেই। নেই বাধ্যবাধকতাও। ধনী-গরিব যে কেউ যখন ইচ্ছা দান করতে পারে। কম-বেশি যে কোনো পরিমাণই দান করতে পারে। দান প্রকাশ্যে হতে পারে, হতে পারে গোপনেও। প্রশ্ন হলো, কোথায় কখন কিভাবে দান করলে নেকী পাওয়া যাবে বেশি? কোন্ দানটি আল্লাহ তাআলার নিকট সেরা দান হিসেবে বিবেচিত হবে? এ প্রশ্নের উত্তর আমরা সরাসরি নবীজী (সা.)-এর মুখ-নিঃসৃত হাদিসেই খুঁজে পাই। কখনো বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে তিনি নিজেই সেরা দানের পরিচয় তুলে ধরেছেন। কখনো কোনো সাহাবীর প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন সেরা দান কোনটি।

এক. হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রা. থেকে বণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : সর্বোত্তম সদকা সেটাই, যা নিজের সচ্ছলতা বজায় রেখে করা হয়। দাতার হাত গ্রহীতার হাতের তুলনায় উত্তম। আর (যখন অর্থব্যয় করবে তখন) তোমার পোষ্য ও অধীনস্থদের দিয়ে শুরু করবে। (সহীহ মুসলিম : ১০৩৪)।

এ হাদিসের প্রথমাংশে সেরা দানের একটি পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। দ্বিতীয়াংশে বলা হয়েছে দানের শ্রেষ্ঠত্বের কথা। আর শেষ বাক্যটিতে রয়েছে অর্থব্যয় ও দান-সদকাবিষয়ক একটি বিশেষ নির্দেশনা। বলা হয়েছে- যাদের প্রতিপালনের ভার তোমার ওপর ন্যস্ত, তোমার অর্থব্যয়টা তাদের দিয়েই শুরু করো। তাদের প্রয়োজনটা আগে মেটাও। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে- নিজের প্রতিপাল্য ও অধীনস্থ পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণে যে অর্থ আমরা ব্যয় করি, তাও কি সদকা বলে বিবেচিত হবে? তাতেও কি সওয়াব পাওয়া যাবে? রাসূলুল্লাহ (সা.) এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এভাবে : তুমি যা কিছুই ব্যয় করো, সেটাই তোমার জন্যে সদকা, এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে যে নলাটি তুমি তুলে দাও সেটাও। (সহীহ বুখারী : ৫৩৫৪)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Md Rasel Khan ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:৩৮ এএম says : 0
দান করা একটি অতি মহৎ কাজ। মানুষের কল্যাণে নিজের অর্থ-সম্পদ ব্যয় বা প্রদান করাকে দান করা বলা হয়।
Total Reply(0)
সত্য উন্মোচন ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:৩৯ এএম says : 0
দান বিভিন্ন প্রকারের হয়। সরকার তার নাগরিকদের কাছে দেশ রক্ষার্থে তথা জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে অর্থ-সম্পদ সাহায্য চাইলে জনগণ স্বেচ্ছায় তা দিলে তা হচ্ছে এক প্রকার দান।
Total Reply(0)
হুসাইন আহমেদ হেলাল ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:৩৯ এএম says : 0
দান করার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমাদের আমি যা দিয়েছি তা থেকে দান করো সেই দিন আসার আগে, যেদিন কোনো রকম বেচাকেনা, বন্ধুত্ব এবং সুপারিশ থাকবে না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৫৪)
Total Reply(0)
জাকের হোসেন জাফর ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:৪০ এএম says : 0
দান প্রদানে কাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, সে ব্যাপারে হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘মিসকিনদের দান করলে তা শুধু একটি দান হিসেবে পরিগণিত হবে। কিন্তু গরিব নিকটাত্মীয়কে দান করলে তাতে দ্বিগুণ সওয়াব হয়। একটি দানের, অন্যটি আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার।’ (তিরমিজি ও নাসাঈ)
Total Reply(0)
তরিকুল ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:৪০ এএম says : 0
কোনো গরিব লোক অর্থ বা জিনিসপত্র দান হিসেবে নিলে দানকারী তাকে এ দানের ব্যাপারে খোঁটা দিয়ে কষ্ট দেওয়া উচিত নয়। দানের জন্য দান গ্রহণকারীকে কষ্ট দেওয়ার চেয়ে তাকে দান প্রদান না করে তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা এবং তাকে দান প্রদান না করার জন্য মাফ চাওয়াই হচ্ছে উত্তম।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন