সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

হে দুনিয়ার মানুষ! সাবধান হও

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

মহান আল্লাহপাক মানুষের হেদায়েতের জন্য যুগে যুগে, কালে কালে, অসংখ্য নবী রাসূল এই দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। তারা যেন হেদায়েতের কাজটি সুষ্ঠুভাবে আঞ্জাম দিতে পারেন, তজ্জন্য তাদেরকে কিতাব ও সহীফা দ্বারা সুসজ্জিত করেছেন।

এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিভাত হয় যে, বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ মুস্তাফা, আহমাদ মুজতাবা (সা.) সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল। তার পরে আর কোনো নবী ও রাসূলের আগমন ঘটবে না। তার ওপর যে কিতাব আল কোরআন নাজিল করা হয়েছে, তা’সর্বশেষ আসমানী কিতাব। এরপর আর কোনো কিতাব নাজিল করা হবে না। আখেরী নবী ও আখেরী কিতাব প্রাপ্তির পর দুনিয়ার মানুষের উচিত ছিল আল কোরআন ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন দর্শন ও কর্ম প্রবাহকে একান্তভাবে অনুসরণ করা। জীবন ও জগতের সকল অঙ্গনে তার প্রতিষ্ঠিত বিধি-বিধানের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করা। আল্লাহর জমিনে ও আকাশে আল্লাহর পছন্দনীয় ও গ্রহণীয় দ্বীনকে আঁকড়ে ধরা। কিন্তু চলমান দুনিয়ার স্বল্প-সংখ্যক মানুষ ছাড়া বৃহত্তর সংখ্যা গরিষ্ঠ জনতা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণ করছে না।

এমন কি আল কোরআনের প্রতিও তাদের বিশ্বাস নেই বললেই চলে। এমতাবস্থায় জাগতিক শক্তি ও মদ মত্ত আল্লাহ ও রাসূলদ্রোহী বনী আদমকে আমরা সবিনয়ে বলব-হে দুনিয়ার মানুষ! সাবধান হও। এখনও সময় আছে। আল্লাহর পথে অগ্রসর হও। ঈমান ও এনকিয়াদের সাথে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ কর। অন্যথায় তোমাদের আমও যাবে এবং ছালাও হারাবে। চারণ কবির কথা কি একবারও স্মরণ হয় না? কবি কত সুন্দরই না গেয়েছেন : ‘দিনের দিন বইসারে দিন গুনি/ আমি বইসারে দিন গুনি/ দিনে দিনে দিন ফুরাল/ শুকনাতে তরণী/ দিনের দিন বইসারে দিন গুনি।’

সুতরাং জীবন ও জগতের দিন গুনতে গুনতে আপনার তরণীর তলায় আর পানি নেই। এই পানি শূন্যতার বেড়াজালে আটকে পড়ার পূর্বে আপনার উচিত ছিল আল্লাহ পাকের নিদর্শনাবলীর প্রতি সচেতন দৃষ্টিতে তাকানো। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : এখন আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলি প্রদর্শন করব পৃথিবীর দিগন্তে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে; ফলে, তাদের কাছে ফুটে উঠবে যে, এ কোরআন সত্য। আপনার পালনকর্তা সর্ব বিষয়ে সাক্ষ্যদাতা এটাকি যথেষ্ট নয়? (সূরা হা-মীম আস সিজদাহ : ৫৩)।

এই আয়াতে কারীমায় সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, মহান আল্লাহপাক স্বীয় কুদরত ও তাওহীদের নিদর্শনাবলি দুনিয়ার মানুষকে বিশ্বজগতে ও তাদের নিজেদের মধ্যে ও প্রত্যক্ষ করান। এর উদ্দেশ্য এই যে, বিশ্বজগতের ছোট-বড় সৃষ্টি তথা আকাশ, পৃথিবী ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী যে কোনো সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে তা’আল্লাহর অস্তিত্ব, তাঁর সর্বব্যাপী জ্ঞান ও কুদরত এবং তাঁর একত্বের সাক্ষ্য প্রদান করে। এর চাইতেও আরো নিকটবর্তী বস্তু স্বয়ং মানুষের প্রাণ ও দেহ।

এই দেহের প্রতিটি অঙ্গ এবং তাতে সংস্থাপিত সু² ও নাজুক প্রত্যঙ্গাদীর মধ্যে তার সুখ ও আরামের বিস্ময়ক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ সকল প্রতঙ্গগুলোকে এমন মজবুত ও সুদৃঢ় করা হয়েছে যে, সত্তর-আশি বছর পর্যন্তও তা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। তাছাড়া মানব দেহের গ্রন্থীসমূহে এমন বিস্ময়কর স্প্রিং লাগানো হয়েছে যে, তা’ দুনিয়ার কোনো ধাতু দ্বারা তৈরি হলে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নিঃশেষ হয়ে যেত। দেখা যায়, মানুষের হাতের চামড়া এবং তাতে অংঙ্কিত রেখাসমূহ সারা জীবনেও ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না।

এ সকল ব্যাপারে যদি স্বল্প জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তিও চিন্তা ভাবনা করে, তাহলে তার মধ্যে এই বিশ্বাস সুদৃঢ়ভাবে ফুটে উঠবে যে, এর অবশ্যই একজন স্রষ্টা, নির্মাতা ও প্রতিষ্ঠাতা আছেন। যার জ্ঞান, প্রজ্ঞা, কুদরত ও শক্তি অসীম। তাঁর সমকক্ষ কোনো কিছুই হতে পারে না। এবং হওয়া সম্ভবও নয়। যেহেতু নয়, সেহেতু আল্লাহপাক কর্তৃক প্রদশিত নিদর্শনাবলি হতে শিক্ষা গ্রহণ করাই ছিল মানুষের অপরিহার্য কর্ম। কিন্তু মানুষ এতটাই নিমকহারাম যে, আল্লাহপাকের নির্দশনাবলির প্রতি হাস্য বিদ্রুপ করতেও তারা কুণ্ঠা বোধ করে না। যেমনটি হযরত মূসা (আ.)-এর বেলায় ঘটেছিল। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : অতঃপর সে (হযরত মূসা আ.) যখন তাদের কাছে আমার নির্দশনাবলি উপস্থাপন করল, তখন তারা হাস্য বিদ্রুপ করতে লাগল। (সূরা যুখরুফ : ৪৭)। সুতরাং একথা স্বতঃসিদ্ধ যে, যে বা যারা মহান আল্লাহ পাকের নিদর্শনাবলির প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে না, তাদের জন্য মুক্তি, নিষ্কৃতি ও কামিয়াবীর কোনো পথই অবশিষ্ট থাকবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Nagir Ahmed ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:০৫ এএম says : 0
মানুষের দুটি গন্তব্য রয়েছে—এক. ব্যক্তিগত পরিণতি, যাকে মৃত্যু বলা হয়। দুই. মানুষের সমষ্টিগত পরিণতি, যাকে কিয়ামত বলা হয়।
Total Reply(0)
Iqbal Hossain ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:০৫ এএম says : 0
হাড়, মাংসও মাটিতে পরিণত হয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক এবং সহজ একটি ব্যাপার। মানুষ যদি মরে লোহা কিংবা পাথরেও পরিণত হয়, তথাপি মহান আল্লাহ মানবদেহের ওপর জীবনের পোশাক পরাতে সক্ষম।
Total Reply(0)
Najrul Shahin ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:০৫ এএম says : 0
মানুষ মরণশীল—এ নির্মম সত্যকে অদ্যাবধি কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারেনি।
Total Reply(0)
Younus Ali ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:০৫ এএম says : 0
মানুষ একসময় এ পৃথিবীতে ছিল না। পর্যায়ক্রমে বংশপরম্পরায় তারা এ দুনিয়ায় আসে। কালক্রমে তারা নশ্বর এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়।
Total Reply(0)
Ujjal Hasan ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:০৬ এএম says : 0
মুমিন মুসলমানের জন্য নিয়মিত যথাযথ আমল করা আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ভালো কাজের শুকরিয়া, মন্দ কাজের গোনাহ থেকে পরিত্রাণ এবং বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন