বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

জান্নাতে প্রিয়নবী (সা.)-এর সান্নিধ্য লাভ-২

মাওলানা মুহাম্মাদ ইমরান হুসাইন | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

গত আলোচনায় জান্নাতে প্রিয় নবী (সা.)-এর সান্নিধ্য লাভের সৌভাগ্য ও তা হাসিল করার ১টি আমলের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। আজ আরো কয়েকটি আমলের কথা উল্লেখ করার চেষ্টা করা হলো।

২. এতীমের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করা : সাহল ইবনে সা‘দ রা. বর্ণনা করেন, একবার নবী কারীম (সা.) মধ্যমা ও শাহাদাত অঙ্গুলীর মাঝে সামান্য ফাঁক করলেন। এরপর এ দুই আঙ্গুলের দিকে ইশারা করে বললেন : আমি এবং এতীমের দায়িত্ব গ্রহণকারী জান্নাতে এভাবে (পাশাপাশি) থাকব। (সহীহ বুখারী : ৫৩০৪)।

হাদীসের ব্যাখ্যাকারগণ বলেন : এতীমের দায়িত্ব গ্রহণের অর্থ হচ্ছে, তার অন্য-বস্ত্রের ব্যবস্থা করা। তাকে আদব-আখলাক ও ধর্মীয় বিধি-বিধান শিক্ষা দেয়া। তথা দ্বীন ও দুনিয়ার যাবতীয় বিষয়ে এতীমের প্রতিপালন করা। -(দলীলুল ফালিহীন : ২/৮০)।

যারা এতীমের ভরণ-পোষণ করবে তারা নবীজীর সঙ্গে জান্নাতে থাকবে দুই আঙ্গুলের মতো। ‘দুই আঙ্গুলের মতো’ এ কথার মর্ম কী? কুরতুবী রাহ. বলেন : এর অর্থ হলো, যারা এতীমের তত্ত্বাবধান করবে তারা জান্নাতে নবীজীর সঙ্গে থাকবে। (আলমুফহিম : ৬/৬১৪)।

৩. কন্যাসন্তানের লালনপালন করা : আনাস ইবনে মালেক রা. বর্ণনা করেন, একদিন রাসূলে কারীম (সা.) বলেন : যে ব্যক্তি দুটি কন্যাসন্তানের ভরণ-পোষণ করবে আমি এবং সে এভাবে জান্নাতে থাকব। (অর্থাৎ মধ্যমা ও শাহাদাত আঙ্গুল যেমন পাশাপাশি থাকে।) (জামে তিরমিযী : ১৯১৪)।

৪. বোনদের লালনপালনের দায়িত্ব গ্রহণ করা : আনাস ইবনে মালেক রা. বর্ণনা করেন, একবার রাসূলে কারীম (সা.) মধ্যমা ও শাহাদাত অঙ্গুলীর দিকে ইশারা করে বলেন : যে ব্যক্তি দুই কন্যা বা দুই বোনের ভরণ-পোষণ করবে কিংবা তিন কন্যা বা তিন বোনের ভরণ-পোষণ করবে, যতক্ষণ না তাদের বিয়ে হবে কিংবা সে মৃত্যুবরণ করবে, আমি এবং সে জান্নাতে এভাবে (পাশাপাশি) থাকব। (সহীহ ইবনে হিব্বান : ৪৪৭)।

৫. উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া : আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেন, একদা নবী কারীম (সা.) বললেন : আমি কি তোমাদেরকে ওই ব্যক্তি সম্পর্কে অবগত করব না, যে কিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে প্রিয় এবং সর্বাধিক নিকটবর্তী হবে?

সাহাবায়ে কেরাম চুপ রইলেন। নবী কারীম (সা.) একই প্রশ্ন করলেন দুই বা তিনবার। তখন তারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, সে হলো ঐ ব্যক্তি, যার আখলাক সবচেয়ে সুন্দর। (মুসনাদে আহমাদ : ৬৭৩৫)।

৬. বেশি বেশি দরূদ পাঠ করা : আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বর্ণনা করেন, রাসূলে কারীম (সা.) বলেছেন : শুনে রাখো, যে আমার ওপর বেশি পরিমাণে দরূদ পাঠ করবে নিশ্চয় কিয়ামতের দিন সে আমার সর্বাধিক নৈকট্যপ্রাপ্ত হবে। (জামে তিরমিযী : ৪৮৪)।

সুতরাং জান্নাতে নবীজীর নৈকট্য লাভের জন্য আমরা গোনাহমুক্ত জীবন গড়ব, ফরয-ওয়াজিব আমলগুলো গুরুত্বের সাথে আদায় করব এবং অধিক পরিমাণে দরূদ শরীফ পাঠ করতে থাকব।

৭. তাকওয়ার জীবন অবলম্বন করা : মুআয ইবনে জাবাল রা. বলেন, রাসূলে কারীম (সা.) যখন তাকে ইয়ামানে পাঠান তখন তিনি তাকে এগিয়ে দিতে বের হন। মুআয রা. সওয়ারীতে চলছেন, রাসূলে কারীম (সা.) পায়ে হাঁটছেন আর অসিয়ত করছেন। অসিয়ত করা শেষ হলে রাসূলে কারীম (সা.) বললেন : হে মুআয! সম্ভবত এ বছরের পর আমার সাথে তোমার আর দেখা হবে না। হয়ত তুমি আমার মসজিদের পাশ দিয়ে হাঁটবে, আমার কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে! (কিন্তু আমার দেখা পাবে না।)

এ কথা শুনে রাসূলে কারীম (সা.) এর আসন্ন বিচ্ছেদ-বিরহে মুআয রা. অঝোরে কাঁদতে শুরু করলেন। এরপর নবী কারীম (সা.) মদীনার দিকে ফিরে তাকালেন এবং বললেন : আমার পরিবারের এই লোকেরা মনে করে, তারা আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ। অথচ বিষয়টা এমন না; আমার সর্বাধিক নৈকট্যপ্রাপ্ত হলো ওই ব্যক্তি, যে তাকওয়ার যিন্দেগি অবলম্বন করে। সে যে কেউই হোক এবং যেখানেই অবস্থান করুক। (দ্র. মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২০৫২, ২২০৫৪)।

এ আমলগুলো ছাড়া নবী করিম (সা.)-কে মহব্বতকারী ব্যক্তিও জান্নাতে প্রিয় নবীর সান্নিধ্য লাভ করবে। এ ব্যাপারে আমরা স্বতন্ত্র কোনো নিবন্ধে আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ। আসুন, জান্নাতে নবী কারীম (সা.)-এর সান্নিধ্য লাভের আশায় উল্লিখিত আমলগুলো করতে থাকি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Md Sane Shabuj ১ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:০১ এএম says : 0
পার্থিব জীবনের ভালো কাজের জন্য থাকবে পুরস্কার এবং মন্দের জন্য থাকবে শাস্তি। আর আল্লাহর প্রতি ঈমানের প্রতিদান হিসেবে পরকালে থাকবে চিরস্থায়ী জান্নাতের জীবন কিংবা ঈমান না আনার কারণে চিরস্থায়ী জাহান্নামের জীবন।
Total Reply(0)
মামুন রশিদ চৌধুরী ১ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:০২ এএম says : 0
জান্নাতে প্রবেশে সৃষ্টজীবের মধ্যে ধারাবাহিকতা থাকবে। জান্নাতে প্রবেশ করে তাদের অবস্থা কেমন হবে তারও বর্ণনা রাসুল (সা.) আমাদের জানিয়েছেন।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ রমিজ ১ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:০২ এএম says : 0
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘সর্বপ্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল বর্ণের হবে। তার পরের দলটি হবে আকাশের সবচেয়ে বেশি আলোসম্পন্ন তারকার মতো।... তাদের মধ্যে কোনো বিরোধ ও বিদ্বেষ থাকবে না। সবার অন্তর একজন ব্যক্তির অন্তরের মতো হবে। সবাই সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৮৩৪)
Total Reply(0)
বাহার বিন মুহিব ১ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:০২ এএম says : 0
এই নয়নাভিরাম জান্নাতে সর্বপ্রথম কে প্রবেশ করবেন? এ বিষয়ে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমি সর্বপ্রথম জান্নাতের দরজায় টোকা দেব।
Total Reply(0)
মামুন আহাম্মাদ ১ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:০৩ এএম says : 0
রিদ্র মুহাজিররা ধনীদের চেয়ে ৪০ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, একদিন আমি মসজিদে বসে ছিলাম। দরিদ্র মুহাজিরদের একটি দলও মসজিদে বসা ছিল। এমন সময় রাসুল (সা.) এসে বললেন, ‘দরিদ্র মুহাজিররা! সুসংবাদ গ্রহণ করো। তাদের চেহারা উজ্জ্বল হোক। কারণ তারা ধনীদের চেয়ে ৪০ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ আমি দেখলাম, তাঁদের মুখের রং বদলে উজ্জ্বল হয়ে গেল। আমারও আশা জাগল, আমি যদি তাঁদের মাঝে হতাম! (দারেমি, হাদিস : ২৭২১)
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন