১৯৫০ সালের দিকে হার্ভার্ডে অধ্যয়নের সময় ড. কার্ট রিখটার পানির বড় একটি পাত্রে কিছু ইঁদুর রেখেছিলেন, তারা কতক্ষণ পানিতে থাকতে পারে তা পরীক্ষা করতে। (গড় হিসাবে প্রতিটি ইঁদুর ১৫ মিনিট পরে হাল ছেড়ে দেয় এবং ডুবে যায়।) ক্লান্তির কারণে তারা হাল ছেড়ে দেয়ার ঠিক আগে, গবেষকরা ইঁদুরকে বের করে ফেলতেন, শরীর শুকিয়ে ফেলতেন, কয়েক মিনিট বিশ্রামে রাখতেন। এবং তাদের দ্বিতীয় রাউন্ডের জন্য ফিরিয়ে আনতেন।
এই দ্বিতীয় চেষ্টায় ইঁদুর কতক্ষণ টিকে থাকবে বলে মনে করেন? (মনে রাখবেন, মাত্র কয়েক মিনিট আগে এরা ব্যর্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত সাঁতার কেটেছিল)। এখন কতক্ষণ থাকবে বলে মনে হয়? আরো ১৫ মিনিট? ১৯ মিনিট? ৫ মিনিট? না। ৬০ ঘন্টা। হ্যাঁ, এটি কোনো ত্রুটি নয়, এটাই ঠিক! ৬০ ঘণ্টা টিকে ছিল হাল ছেড়ে দেয়ার আগ পর্যন্ত। যেহেতু ইঁদুর বিশ্বাস করেছিল যে, তারা শেষ পর্যন্ত উদ্ধার পাবে, তাই তারা তাদের দেহকে আগে যা অসম্ভব বলে মনে করেছিল সেই পথেই ঠেলে দিতে পেরেছিল।
এই পরীক্ষার ফলস্বরূপ আমার বুঝতে হবে যে, আশা যদি ক্লান্ত ইঁদুরগুলোকে দীর্ঘ সময়ের জন্য সাঁতার কাটাতে পারে, তবে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমার ওপর বিশ্বাস রেখে কি বিপদে ধৈর্য ধারণ করা যায় না? সুতরাং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভরসা রেখে নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রাখুন, ইনশাআল্লাহ সফল আপনি হবেনই।
আত্মহত্যা মহাপাপ। জীবনের কঠিন মুহূর্তে দুঃখ-দুর্দশা ও ব্যর্থতার গ্লানি থেকে মুক্তির জন্য অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর ওপর ভরসা করে চললে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। আল্লাহ পাক এ প্রসঙ্গে বলেন; ‘তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু এবং যে কেউ সীমালঙ্ঘন করে আত্মহত্যা করবে তাকে আমি অগ্নিতে দগ্ধ করব, আর এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ। (সূরা নিসা : ২৯-৩০)।
আত্মহত্যাকারীর জন্য পরকালে কঠোর আজাবের ঘোষণা এ আয়াত থেকে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়। আল্লাহপাক আরো বলেন, ‘তোমরা নিজের হাতে নিজেদের জীবনকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না।’ (সূরা বাকারা : ১৯৫)। কোরআনের এ আয়াতেও এ ভয়াবহ পথ থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আত্মহত্যার অপরাধে জান্নাত হারাম হওয়ার পাশাপাশি হাদিসে কঠোর শাস্তির কথাও উল্লেখিত হয়েছে।
জুন্দুব বিন আবদুল্লাহ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি জখম হবার পর অধৈর্য হয়ে আত্মহত্যা করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহপাক বলেন, ‘আমার বান্দা আমার নির্ধারিত সময়ের আগেই নিজের জীবনের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমি তার ওপর জান্নাত হারাম করে দিলাম।’ (বুখারি : ১২৭৫)।
আবু হুরায়রা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে অনুরূপভাবে পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করতে থাকবে। এটা হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। যে ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করবে, বিষ তার হাতে থাকবে, জাহান্নামে সে সারাক্ষণ বিষপান করে আত্মহত্যা করতে থাকবে। আর এটা হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। আর যে ব্যক্তি লৌহাস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সেই লৌহাস্ত্রই তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সে তা নিজ পেটে ঢোকাতে থাকবে, আর সেখানে সে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে।’ (বুখারি : ৫৩৩৩)।
মূলত পারিবারিক ও সামাজিক নানা সঙ্কট থেকে মানুষ আত্মহত্যায় প্ররোচিত হয়। চরম হতাশা, বিপদে অধৈর্য হয়ে আর অনিয়ন্ত্রিত জেদ-অভিমানই আত্মহত্যার মূল কয়েকটি কারণ বলে বিজ্ঞ মহলে সুবিদিত। সব বিষয়ে আল্লাহর রহমতই একমাত্র ভরসা। মনে রাখতে হবে, ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর কোনো সঙ্কটই স্থায়ী হয় না। কোরআনে এই বিষয়ে ইরশাদ হচ্ছে, ‘কষ্টের সঙ্গেই তো স্বস্তি আছে; অবশ্যই কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি আছে।’ (সুরা ইনশিরাহ : ৫-৬)।
বিলাসিতা, উচ্চাকাক্সক্ষা ও অতিভোগকে মানুষ সফলতা মনে করে। এসব চাহিদা মুমিনের অন্তর থেকে আল্লাহভীতি দূর করে দেয়। অথচ অল্পে সন্তুষ্ট থাকার মধ্যেই রয়েছে কল্যাণ ও সফলতা। অধৈর্য মানুষকে আত্মহত্যার পথে নিয়ে যায়। মানবজীবনে ধৈর্যের চেয়ে কল্যাণকর আর কিছু নেই। ধৈর্যের মাধ্যমে অনেক কঠিন বাস্তবতাকে সহজে মেনে নেয়া যায়। সবচেয়ে বড় সান্ত্বনা হলো যারা ধৈর্যশীল তাদের সঙ্গে আল্লাহর বিশেষ সঙ্গ থাকে।
কোরআনে ইরশাদ হয়েছে ‘হে মুমিনরা! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা বাকারা : ১৫৩)। দুঃখ-দুর্দশা, গ্লানি আর যত সঙ্কটই আসুক না কেন, সব কিছুতেই আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। কোরআনে এ প্রসঙ্গে এসেছে যে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক : ৩)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন