শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

উত্তরায় হকাররা বেপরোয়া

রাস্তার উপর অবৈধ মার্কেট উচ্ছেদ না করার দাবি তীব্র যানজটে লাখো যাত্রীর চরম ভোগান্তি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

রাস্তার ওপর মার্কেট উচ্ছেদ বন্ধ ও স্থায়ী পুনর্বাসন দাবিতে রাজধানীর উত্তরায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে হকাররা। ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের স্থায়ীয় নেতারদের ইন্দনে রাজধানীর সবচেয়ে ব্যস্ত সড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ করায় তীব্র যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। হকারদের অবৈধ দাবির বিক্ষোভ সরাতে পারেনি আইন শৃংখলা বাহিনী। ফলে আইন শৃংখলা বাহিনী উত্তরার হকারদের বিক্ষোভ সরাতে বিলম্ব করার নেপথ্যের রহস্য কি? দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকা বাসের যাত্রীরা বলছেন, রাস্তার ধারে বিরোধী দলের মানববন্ধন কর্মসূচি হলেও সড়ক বন্ধের অভিযোগ তুলে আইন শৃংখলা বাহিনী লাঠিপেটা করে। অথচ উত্তরায় মূল সড়ক ঘন্টার পর ঘন্টা বন্ধ করে রাখার পরও পুলিশ নীরব দর্শক ভুমিকায়। রহস্য কি?

গতকাল শনিবার সকালে ১০টার দিকে উত্তরার রবীন্দ্র সরণিতে জড়ো হয়ে প্রথমে হকাররা বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে দুপুরে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন। হকাররা অবস্থান নেওয়ায় সড়কের দুই দিকের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক। ফলে যাত্রীদের এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগেছে। অন্যদিকে যানজটের যন্ত্রণায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে রাজধানীবাসীকে। শুধু তাই নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় আসা যাত্রীরাও হকারদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রতিশ্রুতিতে সড়ক থেকে সরে যান হকাররা।

জানা যায়, উচ্ছেদ বন্ধ ও স্থায়ী পুনর্বাসনের দাবিতে গতকাল সকাল ১০টার দিকে উত্তরার রবীন্দ্র সরণিতে জড়ো হয়ে হকারা বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে হকাররা উত্তরার রাজলক্ষ্মী বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় ঢাকা ১৮ আসনের সংসদ সদস্য হাবিব হাসানের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় উচ্ছেদ বন্ধ ও স্থায়ী পুনর্বাসনের দাবিতে বিক্ষোভ ও সেøাগান দিতে দেখা যায় তাদের। এরপর দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেন তারা। হকাররা অবস্থান নেওয়ায় সড়কের দুই দিকের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থানের পর বেলা পৌনে দুইটার দিকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রতিশ্রুতিতে সড়ক থেকে সরে যান তারা।

তবে অবরোধের কারণে উত্তরা থেকে ফার্মগেইট ও মহাখালীমুখী সড়কে তীব্র যানজটে আটকা পড়েন হাজার হাজার মানুষ। এ সময় বিমানবন্দর, বনানী, ফার্মগেইট, ময়মনসিংহ সড়ক, বিজয় সরণি, মহাখালী, তেজগাঁও, সাত রাস্তার মোড়, সোনারগাঁও, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, মগবাজারসহ আশপাশের রাস্তায় হাজার হাজার গাড়ি রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে দেখা গেছে। লম্বা সময় অপেক্ষার পর পরিস্থিতির উন্নতি না দেখে হেঁটে গন্তব্যে রওনা হন অনেকে।

গাজীপুর থেকে বাসে আসা যাত্রী পলাশ মিয়া বলেন, বনানীর কাছ থেকে হেঁটে বাংলামটর এলাকায় গিয়েছি। দুই পাশের সড়কে কত গাড়ি আটকে ছিল তার কোনো হিসাব নাই। দুপুরে বিমানবন্দর এলাকায় একটি প্রাইভেট কারের চালক রহিম উদ্দিন বলেন, কোনো দিকেই গাড়ি ঘোরানোর পথ নেই। দুই বার চেষ্টা করেছি কিন্তু দেখলাম সব রাস্তায় গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে আছে স্টার্ট বন্ধ করে।

এদিকে, রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে রামপুরা-বনশ্রী সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। গতকাল বিকাল ও সন্ধ্যায়ও যানবাহন ধীরগতিতে চলাচল করতে দেখা যায়। তবে হকারদের নেতা ও উত্তরা পূর্ব থানা কৃষক লীগের যুগ্ম সম্পাদক রাসেল মণ্ডল বলেন, হকাররা বিক্ষোভ শুরুর পর সাংসদ হাবিব হাসান সেখানে যান। এরপর তার কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পেয়ে তারা সড়ক ছাড়েন। সাংসদ বলেন, হকারদের দাবিগুলোর সঙ্গে তিনি একমত। তিনি সাত দিন সময় চেয়েছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি এসব বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেবেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক উত্তরা জোনের ডিসি মো. সাইফুল হক ইনকিলাবকে বলেন, হকারা অযুক্তিক দাবি নিয়ে গতকাল সড়ক অবরোধ করে। প্রায় দুই ঘন্টার মত তারা সড়কে অবস্থান করে। পরে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়। অবরোধ তুলে নেয়ার পর আস্তে আস্তে যানজট স্বাভাবিক হয়ে যায় বলে জানান তিনি।

অপরদিকে, গতকাল সকালে দুই দফা দাবি নিয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে ময়মনসিংহ রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। এতে পুরো তেজগাঁও এলাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয়।

তাদের দুই দাবি হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ এবং করোনা মহামারির বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা। আন্দোলনে অংশ নেয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, আগামী ১৩ জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে পরীক্ষা শুরুর কথা রয়েছে। তবে করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে আবারও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হতে পারে। তাই আমরা দাবি জানাচ্ছি, যেকোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে যেন অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া হয়। করোনা মহামারির কারণে আমাদের সময় নষ্ট হয়েছে। আমরা আর সময় নষ্ট করতে চাই না। ফুট ওভারব্রিজের দাবি প্রসঙ্গে ওই শিক্ষার্থী বলেন, কিছুদিন আগে রাস্তা পারাপারের সময় আমাদের এক শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। তাই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের দাবি তুলেছি।

শিক্ষার্থীদের দাবি ও আন্দোলনের বিষয়ে বুটেক্স উপাচার্য অধ্যাপক আবুল কাশেম বলেন, আমি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। মৌখিকভাবে বলেছি, ১১ জানুয়ারির পরীক্ষা স্থগিত, হলগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে, যাতে তারা আতঙ্কিত না হয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পারে। আর পরবর্তীতে পরীক্ষা অফলাইনে নাকি অনলাইনে হবে সেটি নিয়ে আমরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত জানাব। সে জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সময় চেয়েছি।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল পুলিশের এডিসি হাফিজ আল ফারুক বলেন, দীর্ঘ সময় সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। এতে আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়। মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। আমরা অনুরোধ করেছি, ভিসির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে দেয়। পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
প্রবাসী-একজন ৯ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:২৫ এএম says : 0
হকারদের রাস্তা থেকে উচ্ছেদ করুন, খুব ভালো কথা; কিন্তু ওদের রুটি-রোজগারের যথাযথ বিকল্প ব্যবস্থা হয়েছে কি? ক্ষুধার্ত মানুষেরা পথ অবরোধের চাইতেও বেশি কিছু করতে পারে।
Total Reply(0)
তরিকুল ৯ জানুয়ারি, ২০২২, ১:৪৪ এএম says : 0
হকারের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে প্রায় সর্বত্র ফুটপাত ও অনেক স্থানে রাস্তার অংশও হকারদের বিকিকিনি পসরার দখলে চলে যাওয়ায় যানজট পরিস্থিতির ভয়ানক অবনতি ঘটেছে।
Total Reply(0)
মোঃ কামরুজ্জামান ৯ জানুয়ারি, ২০২২, ১:৪৪ এএম says : 0
পথচারীদের হেঁটে চলাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আইন অনুযায়ী ফুটপাতে ও রাস্তায় বসা হকারদের কোনো অধিকার নয়। বরং নির্বিঘ্নে ফুটপাতে হাঁটা পথচারীদের অধিকার। কিন্তু হঠাৎ মেরে-ধরে হকারদের উচ্ছেদ করলেই কি সমস্যাটার সমাধান হয়ে গেল?
Total Reply(0)
মোহাম্মদ রমিজ ৯ জানুয়ারি, ২০২২, ১:৪৫ এএম says : 0
অতীতে এমন অভিযান মাঝে মধ্যে হয়েছে। পরে ধীরে ধীরে আবার যে কে সে-ই
Total Reply(0)
কায়কোবাদ মিলন ৯ জানুয়ারি, ২০২২, ১:৪৫ এএম says : 0
এভাবে সমাধান হবে না। তবে সমাধান অবশ্যই প্রয়োজন, তা সে যত কঠিনই হোক।
Total Reply(0)
বাহার বিন মুহিব ৯ জানুয়ারি, ২০২২, ১:৪৬ এএম says : 0
ধনী-গরিব সব পথচারীর যেমন বাধাহীন ফুটপাত পাওয়ার অধিকার আছে, তেমনি গরিব হকারদেরও খেয়ে-পরে বাঁচার অধিকার আছে, জীবিকা পাওয়ার অধিকার আছে। তাদের সে অধিকার উপেক্ষা করে লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেওয়া করপোরেশন আইনের দৃষ্টিতে সঠিক হতে পারে; কিন্তু মানবাধিকারের লঙ্ঘন।
Total Reply(0)
সেই ডায়েরী ৯ জানুয়ারি, ২০২২, ১:৪৬ এএম says : 0
জনগণের মধ্য থেকে তো হকারদের বাদ দেওয়া যাবে না। হকাররা যা করে তা তাদের বেঁচে থাকার জন্য জীবিকা এবং দেশের অর্থনীতির অংশ।
Total Reply(0)
নাজমুল হাসান ৯ জানুয়ারি, ২০২২, ১:৪৭ এএম says : 0
রাস্তার হকার একটি বিশ্বজনীন নাগরিক চিত্র এবং হাজার বছরের অর্থনৈতিক ঐতিহ্য। অস্থায়ীভাবে এখানে-ওখানে বসে বিক্রি করা ছাড়া ঘুরে ঘুরে হাঁক দিয়ে বিক্রি করা হকারদের আমরা সমস্যা মনে করি না। দুধওয়ালা, দইওয়ালা, চা-ওয়ালা, বাদামওয়ালা এবং সিনেমার 'নিলামবালা ছয় আনা' গান গাওয়া ফেরিওয়ালারাই তো যুগ যুগের হকার।
Total Reply(0)
Md.Rashadujaman ৯ জানুয়ারি, ২০২২, ১:৪৮ এএম says : 0
জনসংখ্যা ও গ্রামীণ বেকারত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তো ঢাকায় হকারের সংখ্যা হুহু করে বেড়ে চলেছে। গত শতাব্দীর পঞ্চাশ-ষাটের দশকেই তো প্রথমে সদরঘাটের গাবতলী রোডে সিটি করপোরেশন হকার মার্কেট, তারপর ধানমণ্ডির নিউ মার্কেটের আশপাশে ধানমণ্ডি হকার্স মার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনী চক, ফুলবাড়িয়ায় বঙ্গবাজার, নীলক্ষেতের কাটাবনে এবং আরও কিছু জায়গায় হকার্স মার্কেট তৈরি করা হয়েছে।
Total Reply(0)
ইশতিয়াক ৯ জানুয়ারি, ২০২২, ১১:৩৯ এএম says : 0
এক ই নাটকের পূন: প্রচার যুগ যুগ ধরে। যখন ফুটপাথে চাঁদা দিয়ে বসানোর ব্যবস্থা হতে থাকে আস্তে আস্তে তখন সবাই কুম্ভকর্নের ঘুম দেখেও না দেখার কর্ম করেন। পরে অনেক পরে ততক্ষণে অনেক স্থায়ী হয়ে যাবার পর হকার রা অনেক খরচ করে ফেলার পর অভিযান এ নামে কর্তৃপক্ষ। তখন আর কিছুই করার থাকেনা( উদ্দেশ্য ই তাই হয়তো) হকার দের তো‌কোন দোষ নেই।‌ যারা টাকা নেন ব্যবস্থা ক্যারা প্রলোভন দেখিয়ে তাদের আইনের আওতায় এনে টাকা‌ ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করা হোক।
Total Reply(0)
মুহাম্মাদ মহাসিন ৯ জানুয়ারি, ২০২২, ৫:৩৭ পিএম says : 0
উত্তরার ফুটপাত দোকান থেকে চাঁদা যাঁরা তুলে ও চাঁদাবাজ নামক লাইনম্যানের নিকট থেকে যে যে সাংবাদিক টাকা নেই! ( চাঁদা নেই) তাঁদের নামগুলো প্রকাশ করেন?।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন