শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

কোরআনের ভাষায় আখেরাতে অবিশ্বাসীদের স্বীকারোক্তি ও আর্তনাদ-১

মাওলানা ফযলুদ্দীন মিকদাদ | প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

আল্লাহ তাআলা আখেরাতে ইহজীবনের ভালো-মন্দ কাজের প্রতিদান দেবেন। যারা পার্থিব জীবনে আল্লাহ তাআলার বিধান মেনে জীবন কাটিয়েছে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে জান্নাতসহ আরো অনেক নিআমত দান করবেন। কোরআন কারীমের ভাষায় তারাই সফলকাম। জান্নাতে তারা নিআমত উপভোগ করতে করতে বলবে : ‘আমাদের প্রতিপালক আমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আমরা তা সত্য পেয়েছি।’ (সূরা আরাফ : ৪৪)।
অন্যদিকে যারা দুনিয়ায় আল্লাহ ও রাসূলের অবাধ্যতায় জীবন কাটিয়েছে, তারা সেদিন চরম ব্যর্থ হবে। সেদিন অনুতাপ করে তারা নিজেদেরকেই দোষারোপ করতে থাকবে। আর বলবে : ‘হায় আফসোস! যদি এমন না করতাম!’ আখেরাতে বিফল জাহান্নামীরা কীভাবে আফসোস করবে, তা বিশদভাবে আল্লাহ তাআলা কোরআন কারীমে বলে দিয়েছেন।

অপরাধীদের আমলনামা উপস্থিত করা হলে, তারা তা দেখে চমকে উঠবে এবং আফসোস করতে থাকবে। কোরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছে : ‘আমলনামা’ সামনে রেখে দেয়া হবে। তখন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে, তাতে যা (লেখা) আছে, তার কারণে তারা আতঙ্কিত এবং তারা বলছে, হায়! আমাদের দুর্ভোগ! এটা কেমন কিতাব, যা আমাদের ছোট-বড় যত কর্ম আছে, সবই পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব করে রেখেছে। তারা তাদের সমস্ত কৃতকর্ম সামনে উপস্থিত পাবে। তোমার প্রতিপালক কারো প্রতি কোনো জুলুম করবেন না। (সূরা কাহ্ফ : ৪৯)।
আমলনামা উপস্থিত করা হলে তারা দেখবে দুনিয়াতে ছোট-বড় যা কিছু করেছে, সব সেখানে লেখা রয়েছে। ইহজীবনে যে গুনাহকে তুচ্ছ ভেবে উদাসীন থেকেছে। আমলনামায় তা দেখে হতভম্ব হয়ে যাবে, হায় হায়! এ কী! কোনো কিছুই বাদ দেয়া হয়নি! আরো ইরশাদ হয়েছে : সেই ব্যক্তি, যার আমলনামা দেয়া হবে তার বাম হাতে; সে বলবে, আহা! আমাকে যদি আমলনামা দেয়াই না হতো! আর আমি জানতেই না পারতাম, আমার হিসাব কী? আহা! মৃত্যুতেই যদি আমার সব শেষ হয়ে যেত! আমার অর্থ-সম্পদ আমার কোনো কাজে আসল না! আমার সব ক্ষমতা লুপ্ত হয়ে গেল। (সূরা আলহাক্কাহ : ২৫-২৯)।

অপরাধীদের বাম হাতে আমলনামা দেয়া হবে, তারা আমলনামা গ্রহণ করতে চাইবে না। বলবে, হায়! যদি আমলনামা না দেয়া হতো! পৃথিবীতে যে মৃত্যু থেকে বাঁচতে সর্বস্ব ত্যাগ করতেও পিছপা হতো না, সেই মৃত্যুই তখন বড় কামনার বিষয় হবে। জাগতিক ধন-সম্পদ বিত্ত-বৈভব ও ক্ষমতা সেদিন কোনো কাজে আসবে না।

শয়তানের অনুসরণে যারা জীবন কাটায়। শয়তানের দোসর হয়ে নিজেও আল্লাহ-রাসূলকে ভুলে থাকে, মুমিনদেরকেও দ্বীনের পথে বাধা দান ও পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করে। কিয়ামতের দিন যখন তারা এর ভয়ঙ্কর পরিণতি দেখবে, তখন শয়তান থেকে যোজন যোজন দূরত্ব কামনা করবে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : পরিশেষে এরূপ ব্যক্তি যখন আমার কাছে আসবে তখন (সে তার সঙ্গী শয়তানকে) বলবে, আহা! আমার ও তোমার মধ্যে যদি পূর্ব ও পশ্চিমের ব্যবধান থাকত। কেননা তুমি বড় মন্দ সঙ্গী ছিলে। (সূরা যুখরুফ : ৩৮)।

অথচ আল্লাহ তাআলা কোরআনে বহুবার সতর্ক করে দিয়েছেন, শয়তান কিয়ামত পর্যন্ত মানুষকে পথভ্রষ্ট করার অঙ্গীকার করেছে। শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। শয়তান দুনিয়াতে মানুষকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিপথগামী করে রাখছে। আখেরাতে সে বলবে, আমি তো তোমাদেরকে জোর করিনি, আমি শুধু ডেকেছিলাম, তোমরা সাড়া দিয়েছ। কাজেই আমাকে দোষ না দিয়ে নিজেদেরকেই দোষারোপ কর। বস্তুত শয়তানের তখন তাদেরকে সাহায্য করার কোনো উপায়ও থাকবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
মোঃ কামরুজ্জামান ১৭ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:০০ এএম says : 0
. আর যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি কঠিন শাস্তি। (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১০)
Total Reply(0)
মিফতাহুল জান্নাত ১৭ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:০০ এএম says : 0
কোরআন সর্বাধিক সুদৃঢ় পথের নির্দেশনা দেয়। পাশাপাশি কোরআন সৎকর্মপরায়ণ ঈমানদারদের জন্য মহাপুরস্কারের সুসংবাদ দেয়।
Total Reply(0)
মামুন আহাম্মাদ ১৭ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:০১ এএম says : 0
কোরআন ঈমানদারদের জন্য সুসংবাদ দেওয়ার পাশাপাশি অবিশ্বাসীদের জন্য দুঃসংবাদ দেয়। যারা আল্লাহর ওপর ঈমান আনে না, যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, তাদের জন্য কঠিন শাস্তি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
Total Reply(0)
সত্য উন্মোচন ১৭ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:০১ এএম says : 0
পাপ করার কারণে মানুষের আত্মা আল্লাহর নূর থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে পদে পদে তারা ভুল পথে পরিচালিত হয়। পাপাচারী মনোভাব তাদের অন্তরের প্রশান্তি কেড়ে নেয়। সিদ্ধান্তহীনতা তাদের চিত্তকে অস্থির করে তোলে। অদৃশ্য ভয় তাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। সঠিক কথা বলা, সৎপথে চলার মানসিক শক্তি তারা হারিয়ে ফেলে। তাদের পাপের দরুন দুনিয়ায়ও কখনো কখনো আজাব আসে।
Total Reply(0)
জাকের হোসেন জাফর ১৭ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:০২ এএম says : 0
অনেকে সত্য ও সঠিক পথ চেনার সুযোগ পায়; কিন্তু পারিপার্শ্বিক কারণে দ্বিনের পথে চলা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। ধর্মের পথে চলতে, দ্বিনের কথা বলতে তারা অপমান বোধ করে। তারা জানে না, কিয়ামতের ময়দানের অপমানই চূড়ান্ত অপমান। পৃথিবীর আদি-অন্ত সব মানুষের সামনে সেদিন তাদের অপরাধী হিসেবে দাঁড়াতে হবে। বৈষয়িক খ্যাতি, অর্থবিত্ত, সামাজিক-রাজনৈতিক প্রভাব সেদিন কোনো কাজে আসবে না। অপমানে তাদের চেহারা মলিন হয়ে যাবে। যেন তাদের মুখমণ্ডল ঢেকে দেওয়া হয়েছে আঁধার রাতের টুকরা দিয়ে।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ রমিজ ১৭ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:০৩ এএম says : 0
যে ব্যক্তি পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সে-ই সত্যিকার ক্ষতিগ্রস্ত। সেদিন অর্থ-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, দুনিয়ার বন্ধুত্ব কোনো উপকারে আসবে না।
Total Reply(0)
আশিক ১৭ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:৫৮ এএম says : 0
এরকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার জন্যে অশেষ ধন্যবাদ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন