বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বুস্টার আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টিন সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্য : ওমিক্রন নিয়ে ঘাবড়াবেন না

মোবায়েদুর রহমান | প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৪ এএম

অনেক দিন পর আবার করোনা নিয়েই লিখতে হচ্ছে। বিগত ডিসেম্বরের পর বাংলাদেশের অবস্থা এমন হয়েছিল যে, মনে হয়েছিল, করোনা বুঝি চলেই গেল। কিন্তু জানুয়ারিতে পরিস্থিতি অকস্মাৎ নাটকীয়ভাবে পাল্টে যায়। যেখানে শনাক্তের সংখ্যা ১ শতাংশে নেমে আসে, অর্থাৎ দৈনিক গড় শনাক্ত ১০০ তে নেমে আসে সেখানে ১৩ জানুয়ারি এটি ৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্চ এবং এপ্রিলে এটি নাকি পিকে উঠবে। সুতরাং চারিদিকে ভীতি এবং শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এর পাশাপাশি কিছুটা স্বস্তির সংবাদও আছে। সংক্রমণের সংখ্যা চার হাজার ছাড়ালেও মৃত্যুর সংখ্যা ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ এর ওপর ওঠেনি। আমাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন এবং পরিচিত জনদের মাঝে দেখছি যে, কারও অসুখই ক্রিটিক্যাল পর্যায়ে যায়নি।

বিগত দুই বছর হলো বাংলাদেশ করোনার সাথে লড়ছে। সম্পূর্ণ অপরিচিত এই রোগটির সাথে লড়াই করতে করতে আমাদের চিকিৎসকদের মাঝেও একটি অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়েছে। অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের এই প্রক্রিয়ায় কয়েকজন চিকিৎসক করোনা স্পেশালিস্ট হিসাবেও গড়ে উঠেছেন। এমনি দুইজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (প্রফেসর) আমার আত্মীয়-স্বজনের চিকিৎসা করেছেন। তাঁরা এবারের করোনা ভাইরাসের ধরনকে ওমিক্রন বলে মনে করেছেন। চিকিৎসা হিসাবেও সদ্য আবিষ্কৃত ওরাল ট্যাবলেট (মুখে খাওয়ার বড়ি) প্রেসক্রাইব করেছেন। বড়ির নাম মলনুপিরাভির। বাংলাদেশে আমদানীকারী ঔষধ প্রতিষ্ঠান এসকেএফ এর নাম দিয়েছে মনুভির। এখন ডাক্তার সাহেবরা মনুভিরই প্রেসক্রাইব করছেন। দৈনিক ৮টা করে ট্যাবলেট। ৫ দিনে ৪০টি ট্যাবলেট। সকালে ৪টি। আর রাতে ৪টি। এই ঔষধ খেয়ে অনেক রোগীই ভালো হয়ে যাচ্ছে।

এদিকে বিশ্ব বিখ্যাত ফাইজারও ওরাল ট্যাবলেট বা মুখে খাওয়ার বড়ি আবিষ্কার করেছে। নাম প্যাক্সলোভিড। এসকেএফ এই বড়িটিও আমদানী করেছে এবং বাংলাদেশে প্রস্তুত করার লাইসেন্স পেয়েছে। বাংলাদেশে এটির নাম হবে প্যাক্সোভির।

এসকেএফ কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন যে, মনুভিরের চেয়ে প্যাক্সোভির অধিকতর কার্যকর। মনুভিরের ডোজ হলো দিনে ৪+৪ সমান ৮ গুনন ৫ সমান ৪০। আর প্যাক্সোভিরের ডোজ হলো ৩+৩ সমান ৬ গুণন ৫ সমান ৩০। বাংলাদেশের চিকিৎসকরা মনুভির প্রেসক্রাইব করছেন। কোনো ডাক্তার এখনও প্যাক্সোভির প্রেসক্রাইব করেছেন বলে আমি শুনিনি।

॥দুই॥
এবার ওমিক্রনের যে ফলাফল সেটা থেকে বলা যায় যে, করোনা ভাইরাস ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে। শুক্রবার এই কলাম লেখার এই পর্যায়ে দৈনিক ইনকিলাবে দেখলাম বিল গেটসের একটি আশাব্যাঞ্জক উক্তি। তিনি বলেছেন, ওমিক্রনের সংক্রমণ শেষ হয়ে গেলে বছরের অবশিষ্ট সময় সংক্রমণের সংখ্যা অনেক কম দেখতে পারে বিশ্ব। কতিপয় বিশেষজ্ঞ বলেছেন ওমিক্রনের বিস্তার দ্রুত হলেও এর মধ্যদিয়ে মানুষের মধ্যে প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে যাবে। বিল গেটস বলেন, ওমিক্রনের সংক্রমণ ক্ষমতা অন্তত আগামী বছরের জন্য যথেষ্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করবে। একবার মহামারী শেষ হয়ে গেলে আমাদের হয়তো কিছু সময়ের জন্য কোভিডের জন্য প্রতি বছর টিকা নিতে হতে পারে, অনেকটা বাৎসরিক ফ্লুর মত টিকা।


গত দুই বছর ধরে আমরা কোভিড এবং তদ জনিত সমস্যায় জর্জরিত। তবে এর মধ্যেও কিছুটা আশার আলো এবং স্বস্তি দায়ক সংবাদ রয়েছে। ইউরোপীয় ঔষধ সংস্থার টিকা কৌশল বিভাগের প্রধান বলেছেন, মানুষের মধ্যে ওমিক্রন সংক্রমণের কারণে প্রচুর প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠেছে। এখন আমরা করোনা মহামারীর শেষ দিকে ধাবিত হবো।

অন্যদিকে একজন ভারতীয় বিজ্ঞানী খোদ ওমিক্রনকেই অত্যন্ত হাল্কাভাবে বিবেচনা করেছেন। তিনি হলেন রোগ তত্ববিদ ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজির সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজরী কমিটির চেয়ারপার্সন জয় প্রকাশ মৌলিল। তিনি বলেছেন, করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ সাধারণ ঠান্ডা জ্বরের মতো। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ আর আগের মতো ভয়ঙ্কর নেই। কারণ, নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ অপেক্ষাকৃত মৃদু। তার মতে, ওমিক্রন যত দ্রুত গতিতে ছড়াচ্ছে সেটি বুস্টার ডোজ দিয়ে থামানো যাবে না।

করোনার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারতীয় ভাইরোলজিস্ট এবং মহামারী বিশেষজ্ঞ ডা. অমিতাভ নন্দীর একটি ভিডিও ইন্টারভিউ দেখেছি এবং সেটি আমার ডেস্কটপ কম্পিউটারে সেভ করে রেখেছি। সুদীর্ঘ ঐ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন যে, এবারের করোনা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নাই। কারণ ভারতে এবারও লক্ষ লক্ষ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু গত বারের মত খুব কম কেসই পাওয়া যাচ্ছে যেখানে রোগীর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে অথবা অক্সিজেন লেভেল নেমে যাচ্ছে।

তিনি ওমিক্রন রোগীদের জন্য অত্যন্ত সাধারণ প্রেসক্রিপশন করছেন। সেটা হলো (1) Anti-allergy cough syrup (mucolytic). (2) Anti-allergy tablet (piratic) (3) Paracetamol (জ্বর বা মৃদু ব্যাথা থাকলে)। তিনি বলেছেন, যদি অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল নেমে যায় অথবা শ্বাসকষ্ট হয় একমাত্র তখনই ডাক্তারের কাছে যাবেন। তার আগে ডাক্তারের কাছেও যাওয়ার প্রয়োজন নাই।

॥তিন॥
এবার একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করবো। সেটা হলো, করোনা হলে কত দিন Isolation বা জনবিচ্ছিন্ন থাকবেন? এসব বিষয়ে পরামর্শ বা পথ নির্দেশের জন্য জাতিসংঘ সহ পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশ যেদিকে তাকিয়ে থাকেন সেটি হলো আমেরিকার Centre for disease control and prevention (CDC) এবং Federal Drug Administration (FDA). আইসোলেশন সম্পর্কে সিডিসি গত ২৭ ডিসেম্বর যে বিবৃতি (Statement) জারী করেছে তার অংশ বিশেষ নিম্নরূপ,

CDC is shortening the recommended time for isolation for the public. People with Covid-19 should isolate for 5 days. If they are asymptomatic or their symptoms are resolving (without fever for 24 hours), follow that 5 days of wearing a mask when around others.

CDC now recommends quarantine for 5 days followed by strict mask use for an additional 5 days.

Individuals who have received their booster shot do not need quarantine following an exposure, but should wear a mask for 10 days.

সংক্ষেপে: করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের আইসোলেশন পিরিয়ড সংক্ষিপ্ত করে করা হলো ৫ দিন। তবে পরের ৫ দিন মাস্ক পরে থাকতেই হবে। যারা বুস্টার ডোজ দিয়েছেন তাদের কোয়ারেন্টাইনের দরকার নাই। কিন্তু আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার পরবর্তী ১০ দিন কঠোরভাবে মাস্ক পরে থাকতে হবে।

ওপরে যেসব তথ্য দেওয়া হলো সেগুলো সর্বশেষ। সংশ্লিষ্ট সংস্থা সমূহের ওয়েবসাইটে ভিজিট করে এসব তথ্য সংগৃহীত হয়েছে।
Email: journalist15@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন