শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

বিধবা, বিপত্নীকের পুনর্বিবাহ-প্রসঙ্গ : নির্মম সমাজ, নিঃসঙ্গ জীবন-১

মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

বাবা বা মায়ের মৃত্যু সন্তানের পক্ষে নিদারুণ শোকের, তবে বাবা-মা যে বয়সেই মারা যান এবং সন্তানও তখন যে বয়সেই উপনীত হোক, এ এক জরামুক্ত চিরসবুজ সম্পর্ক। প্রশ্ন এ নিয়ে নয়, প্রশ্ন হচ্ছে বাবার মৃত্যুর পর মায়ের কিংবা মায়ের মৃত্যুর পর বাবার মনোভূমে যে দুঃসহ রিক্ততার সৃষ্টি হয়, সন্তান তা ঠিক ততখানি উপলব্ধি করে কি? আর উপলব্ধি করলেও সেই রিক্ততা পূরণের জন্য সে কতটুকু আন্তরিক থাকে এবং তা পূরণের জন্য বাস্তবসম্মত কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে? বিপত্নীক বা বিধবা যে নরনারী আপনার ধারে কাছে আছে তাদের ওপর বারেক নজর বুলালে এসব প্রশ্ন আপনাকে অবশ্যই নাড়া দিবে। সেই সঙ্গে এই অনুভূতিও জাগ্রত হবে যে, ক্ষেত্রবিশেষে আমরা কতই না হৃদয়হীন এবং আমাদের হৃদয়াবেগও কতই না স্থূল!

দীর্ঘ একটা জীবন বাবা-মা পরস্পর লতিয়ে-জড়িয়ে ছিলেন। তাদের পরস্পরের মধ্যে ছিল গভীর ভালোবাসা ও বিশ্বস্ততা। ছিল অকৃত্রিম সহযোগিতা ও নির্ভরতা। সুনিবিড় সাহচর্যে তারা ছিলেন একশা-একাত্মা। তারপর হঠাৎ করেই যখন একজন চলে গেলেন তখন ভাবুন দেখি, অন্যজনের অবস্থাটা।

নিঃসঙ্গতার কি জগদ্দল পাষাণে তিনি চাপা পড়ে গেলেন। কিভাবে তিনি এর থেকে মুক্তি পাবেন? যে মমতাসিক্ত আনুকূল্য এতদিন তাকে সচল রেখেছিল তা যে ছিন্ন হয়ে গেল! এখন কে তার জীবনচক্রে গতি যোগাবে? যেই নিবিড় সাহচর্য তার মাঝে প্রাণশক্তি যোগাত, তা যে হারিয়ে গেল, ততে তার কর্মব্যস্ত জীবন নিস্তরঙ্গ, নিথর হয়ে গেল না কি? এই নিস্তরঙ্গতার উপশমের জন্য দরকার এক তীব্র প্রণয়াঘাত। তা তিনি কোথায় পাবেন? ব্যক্তি জীবনে তার ছিল এক পরম নির্ভরতা।

সেই নির্ভরতায় দেহমন হয়ে উঠেছিল ঋজু-ঋদ্ধ এবং তা তাকে করেছিল বিচিত্র ভারবাহী। আজ সে নির্ভরতা অন্তর্নিহিত। ফলে মানসিকভাবে তিনি ভেঙে চুরমার। এখন কোন অবলম্বনে তিনি তার অন্তর্জীবনের ঋজুতা ফিরে পাবেন? তার রয়েছে এক বিস্তীর্ণ জগত। সেখানে আছে তার দায়বদ্ধতা। সে জন্য চাই দুর্দান্ত উদ্যম ও দুর্মর প্রাণশক্তি। অথচ জীবনের দোসর ও একান্ত সহযোগী হারিয়ে এখন তিনি বিপর্যস্ত ও ভগ্নস্পৃহ।

তার সুবিন্যস্ত ও অভ্যস্ত জীবন জেরবার। মন স্মৃতিভারাক্রান্ত, দ্বিধাদীর্ণ। স্নায়ুতে গভীর ক্লান্তি। এ অবস্থা থেকে তার উদ্ধারের উপায় কী? আত্মীয়-স্বজন ও পাড়াপ্রতিবেশী এরূপ ক্ষেত্রে এসে পাশে দাঁড়ায় বটে। তারা বিভিন্নভাবে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করে এবং প্রত্যেকে আপন আপন বুদ্ধি-বিবেচনা ও সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতাও করে। কিন্তু তা তো কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। তাতে ক্ষণিকের জন্য বেদনা লাঘব হয় কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে উপস্থিত প্রয়োজনটুকু মেটে। এখানে দরকার তো এমন কোনো ব্যবস্থা, যা দ্বারা তার বিধ্বস্ত জীবন পুনর্গঠিত হবে। এর জন্য চাই বিশ্বাস ও নির্ভরতার একটি স্থান। যেমন তার আগে ছিল।

অর্থাৎ দাম্পত্য জীবন পুনঃস্থাপনই হচ্ছে তার বর্তমান সমস্যাবলির প্রকৃত সমাধান। তিনি যা কিছু হারিয়েছেন তা লাভ তো হয়েছিল এ পথেই। সুতরাং পুনরায় তা পেতে হলে এ পথেই তার চলতে হবে। এরই মধ্যে নিহিত রয়েছে তার জন্য স্বস্তি ও শৃঙ্খলা। এরই মাধ্যমে তিনি পেতে পারেন চলার প্রেরণা ও উদ্দীপনা। ইসলাম যে বৈবাহিক ব্যবস্থা দিয়েছে এই তো তার তাৎপর্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Mohammad Sirajullah, M.D. ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:৪৮ এএম says : 0
Thank you for this article. Very often children do not like their parent's remarriage and this is more so in cases of mothers. Society does not like widows to re-marry even when they are in their twenties. This came from local hindu widow burning and later from restriction of widow marriages.
Total Reply(0)
মিফতাহুল জান্নাত ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৮:২১ এএম says : 0
ইসলামী শরিয়তে পুরুষের জন্য একসঙ্গে একাধিক স্ত্রী গ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে। কিন্তু এটি কিছুতেই শর্তহীন নয়। বরং ভরণপোষণ, আবাসন ও শয্যাযাপনের ক্ষেত্রে শতভাগ সমতাবিধান নিশ্চিত করা না গেলে একসঙ্গে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ বৈধ নয়।
Total Reply(0)
মামুন রশিদ চৌধুরী ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৮:২২ এএম says : 0
পুরুষরা এমন অনেক ঘটনার সম্মুখীন হয়, যা তাদের জীবননাশের কারণ হয়ে থাকে, কারণ তারা সাধারণত বিপজ্জনক পেশায় কাজ করে থাকে। কখনো কখনো যুদ্ধ ক্ষেত্রে লড়াই করে। এবং এতে নারীদের তুলনায় পুরুষরা বেশি সংখ্যায় নিহত হয়ে থাকে। এটি হলো স্বামীবিহীন নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। আর তার একমাত্র সমাধান হলো একাধিক বিয়ে।
Total Reply(0)
তরিকুল ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৮:২২ এএম says : 0
একজন স্ত্রী হয়তো বন্ধ্যা হতে পারে অথবা হতে পারে অসুস্থ হওয়ার কারণে তার সঙ্গে তার স্বামী দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে না। অথচ একজন স্বামীর সন্তানের আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে, আর এর একমাত্র উপায় হলো অন্য একজন স্ত্রীকে বিয়ে করা।
Total Reply(0)
গোলাম কাদের ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১১:০৩ এএম says : 0
লেখাটির জন্য লেখক ও দৈনিক ইনকিলাবকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন