বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষা সংক্রান্ত ভুলভ্রান্তি-১

মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া | প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

আজ যারা কচিকাঁচা আগামীতে তারাই হবে জাতির কর্ণধার। সন্তান মা-বাবার কাছে আল্লাহ তাআলার এক মহা আমানত। এই আমানতের যথাযথ হক আদায় করা মা-বাবা ও অভিভাবকের কর্তব্য। কিন্তু অনেক মা-বাবাই সন্তানের তালীম-তরবিয়তের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এর মূলে রয়েছে : এক. দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং সন্তান যে একটি মহা আমানতÑ এ বিষয়ে সচেতনতার অভাব। দুই. বিজাতীয় রীতি-নীতি ও ফ্যাশনপ্রীতি। তিন. বৈষয়িক উপার্জনকেই জীবনের সাফল্য হিসেবে মনে করা। এ কারণে সন্তানকে একজন ঈমানদার ও সাচ্চা মুসলমান হিসেবে গড়ে তোলার তাগিদ তারা বোধ করেন না। এ সকল মৌলিক চিন্তাগত ভ্রান্তিই সন্তানের তালীম-তারবিয়াতের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়।

সন্তান আমানত : সন্তান মা-বাবার নিকট আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আমানত। তাদের দ্বীন শিক্ষা দেয়া, শরীয়তের প্রয়োজনীয় বিষয়াদি শেখানো এবং একজন ঈমানদার মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা মা-বাবা ও অভিভাবকের কর্তব্য। আজ বৈষয়িক শিক্ষায় শিক্ষিত করা এবং চাকরি ও উপার্জনক্ষম করে গড়ে তোলাকেই শুধু দায়িত্ব মনে করা হয়। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, সন্তানকে হালাল ও বৈধ পন্থায় আয়-রোজগার শেখানোও পিতা-মাতার কর্তব্য। কিন্তু এটিই একমাত্র দায়িত্ব নয়; বরং তাদের ইসলামী সভ্যতা (তাহযীব) শেখানো, দ্বীন ও শরীয়তের মৌলিক বিষয়াদি শেখানো এবং একজন দ্বীনদার-নামাযী ও প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাও মা-বাবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। হাদিস শরীফে এসেছে- ‘জেনে রেখ, তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। পুরুষ তার পরিবারবর্গের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। তাদের ব্যাপারে তাকে জবাবদিহি করতে হবে।’ (সহীহ বুখারী ১/২২২ : ৮৯৩)।

সুসন্তান যেমন মা-বাবার জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের বড় সম্পদ এবং সদকা জারিয়া তেমনি সন্তান যদি দ্বীন ও শরীয়তের অনুগত না থাকে, দুর্নীতি ও গুনাহে লিপ্ত হয়ে যায় তাহলে সে উভয় জগতেই মা-বাবার জন্য বিপদ। দুনিয়াতে লাঞ্ছনা, বঞ্চনা ও পেরেশানির কারণ। আর কবরে থেকেও মা-বাবা তার গুনাহর ফল ভোগ করতে থাকবে। আখিরাতে এই আদরের দুলালই আল্লাহ তাআলার দরবারে মা-বাবার বিরুদ্ধে আপিল করবে যে, তারা আমাকে দ্বীন শেখায়নি। তাদের দায়িত্ব পালন করেনি। তাই এই আমানতের হক আদায়ের প্রতি খুবই যত্নবান হতে হবে।

বিজাতীয় রীতিনীতি ও ফ্যাশনপ্রীতি : কুরআন-হাদিসের একটি মৌলিক শিক্ষা হলো আচার-ব্যবহার, সাজসজ্জা, কৃষ্টি-কালচার ইত্যাদিতে ইসলামী স্বাতন্ত্র্যবোধ থাকা। এসব ক্ষেত্রে বিজাতীয় অনুকরণকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এটা দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। এ সম্পর্কে কুরআন-হাদিসে অসংখ্য হেদায়েত রয়েছে।

হাদিস শরীফের ‘কিতাবুল আদব’ অধ্যায়ে এবং অন্যান্য প্রসঙ্গে বিধর্মীদের অনুকরণ না করার এবং কৃষ্টি-কালচারে তাদের বিরোধিতা করার অনেক তাকীদ এসেছে। একটি হাদিসে এসেছে- ‘যে ব্যক্তি কোনো জাতি বা সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য গ্রহণ করল সে তাদের অন্তর্ভ্ক্তু।’

সুতরাং শিক্ষা-দীক্ষা, ফ্যাশন ও রীতিনীতিতে বিজাতীয়দের অনুকরণ করা এবং সে অনুযায়ী সন্তানদের গড়ে তোলা বড় ধরনের ভুল। এতে ইসলাম ও ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন থেকে সে ধীরে ধীরে এমনিভাবে বের হয়ে যায় যার উপলব্ধিও থাকে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Mamunur Rashid ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৮:০৭ এএম says : 0
সন্তানাদি মহান স্রষ্টা আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে আমানত। এ আমানতকে রক্ষা করতে হবে।
Total Reply(0)
Mulla Tashfin ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৮:০৮ এএম says : 0
সন্তানদের সঙ্গে এমন আচরণই করতে হবে, যা তার শারীরিক প্রবৃদ্ধির জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং সহায়ক। তাদের এমন শিক্ষাই দিতে হবে, যা তাদের মনন ও মানস গঠনে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখে।
Total Reply(0)
Kajal Motahar Alam ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৮:০৮ এএম says : 0
মানবজন্মের উদ্দেশ্যই হলো মহান স্রষ্টা আল্লাহকে পরিচয় করা। আজকে যারা শিশু, তারা একদিন বড় হবে, তাদের ওপর আল্লাহর বিধান মানার দায়িত্ব অর্পিত হবে। কোনো নিয়ম বা বিধান না জানলে মানা যায় না। তাই সন্তানদের এমন শিক্ষা দিয়ে গড়ে তুলতে হবে, যাতে সে আল্লাহর বিধান মেনে সিরাতে মুস্তাকিমের ওপর সহজে চলতে পারে। জেনে-বুঝে চলতে পারে, সহি-শুদ্ধভাবে আমল করতে পারে।
Total Reply(0)
Iqbal Hossain ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৮:০৯ এএম says : 0
তার না জানার দায় যেন তার পিতামাতা বা অন্য কারো ওপর চাপিয়ে দিতে না পারে। পিতামাতাকে দায়িত্বসচেতন থাকতে হবে। কারণ, সন্তানদের উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে গড়ে তোলার দায়িত্ব পিতামাতার বা অভিভাবকের।
Total Reply(0)
Jahidul Islam ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৮:০৯ এএম says : 0
সন্তানকে ইসলামী-শিক্ষা অবশ্যই দিতে হবে। সেই সঙ্গে সন্তানাদির উন্নত চরিত্রগঠন, ভদ্রতা, শিষ্টাচার এবং ব্যবহারিক জীবনে আমলের অভ্যাস তৈরি করতে দীক্ষাও দিতে হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন