শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আন্দোলনকারীদের দাবি এখনো পূরণ হয়নি

শাবি শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙার ১৬ দিন

শাবি সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৩ এএম

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি অপসারণের দাবিতে আমরণ অনশন থেকে সরে গিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ‘দাবি মেনে নেয়া হবে’ সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গের এমন আশ্বাস নিয়ে এসে ১৬৩ ঘন্টা পর প্রফেসর ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ২৮ জন শিক্ষার্থীর মরণপণ অনশন ভাঙান। তবে ১৬ দিন পেরিয়ে গেলেও ভিসির পদত্যাগসহ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার এবং আন্দোলনে অর্থ সংশ্লিষ্ট কাজে ব্যবহৃত ফোন ও একাউন্ট নম্বরগুলো পুনরায় চালু করা হয়নি। এমতাবস্থায় ধৈর্য্যরে ত্রæটি ঘটছে বলে দাবি করে প্রয়োজনে আবারো কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

ভিসির পদত্যাগের দাবিতে হাতে রং মেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনস্থ পুলিশি হামলার স্থানে দেয়ালে দেয়ালে ‘রক্তিম হস্তছাপ’ এঁকেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এক বিক্ষোভ মিছিলের পর সমস্ত অন্যায়-নিপীড়ন-জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ইশতেহার হিসেবে এ রক্তিম হস্তছাপ আঁকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক ও সাবেক প্রফেসর ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের হস্তক্ষেপে আমরণ অনশন ভেঙে গত ২৭ জানুয়ারি থেকে নানান কর্মসূচিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন তারা। তবে অনশন ভাঙার ২ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তাদের কোনো দাবিই মেনে নেওয়া হয়নি। যার প্রেক্ষিতে এ বিক্ষোভ মিছিল চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। গোলচত্বর থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিলে ভিসির বাসভবনের সামনে দিয়ে ঘুরে আইআইসিটি ভবনের সামনে ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার স্থানে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল পরবর্তী সময়ে হাতে রং মেখে দেয়ালে হস্তছাপে অংশ নেন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ২৬ জানুয়ারি আমাদের সকল দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রæতি দেওয়া হয়েছিল। এরপর ২ সপ্তাহ পেরিয়ে গিয়েছে এখনও আমাদের দাবিসমূহ মেনে নেওয়ার কোনরকম দৃশ্যমান প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। আমাদের ওপর করা ২টি মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি ও আন্দোলনে অর্থ যোগানে ব্যবহৃত নম্বর, বিকাশ, নগদ একাউন্টসহ অনলাইনে লেনদেনের মাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পর দুয়েকটি বাদে বাকিগুলো এখনো খোলা হয়নি। তারা বলেন, আমাদের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। আমাদের দাবিগুলোও এখনো পূরণ হয়নি। তাই আমরা আজকে আবার মিছিল করেছি এবং মিছিল শেষে যে জায়গায় ভিসির নির্দেশে পুলিশ আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছিল সেখানে সমস্ত অন্যায়-নিপীড়ন-জুলুমের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ের ইশতেহার হিসেবে রক্তিম হস্তছাপ এঁকে দিয়েছি।

আমরণ অনশন কর্মসূচির ভাঙার পর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের ওপর দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে আশ^াস দেন এবং সিলেটে এসে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনায় বসবেন বলে জানান। তবে সম্প্রতি পারিবারিক অসুস্থতার কারণে তার সিলেটে গমন ও শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানান বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. তুলসী কুমার দাস। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষামন্ত্রী আমাদের কথা দিয়েছিলেন ওনি আমাদের ক্যাম্পাসে এসে আমাদের সাথে আলোচনায় বসবেন। আলোচনার জন্য আমরা তার দিকে তাকিয়ে আছি। এদিকে প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবি আন্দোলনের সূত্র ধরে গত ১৬ জানুয়ারি বিশ^বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশি হামলার ঘটনা ঘটে। তার পরদিন থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা ও আবাসিক হল বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের এমন নির্দেশ অমান্য করে ভিসির পদত্যাগ দাবির আন্দোলন গড়ে তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অফিস ও একাডেমিক ভবন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজ শুরু হয়। তবে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত নিজ বাসভবনেই থেকেই দাপ্তরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন ভিসি প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানায়, ভিসির বিদায়ের পরই কেবল ক্লাসে ফিরবেন তারা। বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর তুলসী কুমার দাস বলেন, আমরাও চাই এই অচলাবস্থা দূর হোক। ক্লাসগুলো শুরু হোক।

আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র শাহরিয়ার আবেদীন বলেন, জাফর ইকবাল স্যার এসে আমাদেরকে বলেছেন সরকারের উচ্চপদস্থ কারো কাছ থেকে ওনাকে কথা দেয়া হয়েছে যে আমাদের দাবি মেনে নেয়া হবে। তাই আমরা ওনার কথায় অনশণ থেকে সরে এসেছি। কারণ স্যার নিজেও বলেছেন এ দাবি মেনে নেয়া না হলে স্যারের সাথেও অবিচার করা হবে। বর্তমানে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। তবে আমরা লক্ষ্য করছি যে আমাদেরকে যেসব কথা দেয়া হয়েছিল তা রাখা হচ্ছে না। আমাদেরকে মামলা প্রত্যাহার ও আন্দোলনে আর্থিক লেনদেনের কাজে ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর ও একাউন্টগুলো ঠিক করে দেয়া হবে বলে যেসব কথা দেয়া হয়েছিল তা এখনো সেভাবে রাখা হচ্ছে না। আমরা যদি দেখি বারবার আমাদেরকে কথা দিয়ে তা রাখা হচ্ছে না তাহলে আমরা প্রয়োজনে আবারো কঠোর হতে হলে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন