শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) ছাত্রী হল সংলগ্ন টিলায় ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমদ। এ ঘটনার পর বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলে নেমে পড়েন শিক্ষার্থীরা। গত সোমবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে বিক্ষোভ শুরু করে প্রক্টর অফিসের সামনে সমাবেশে জড় হয়ে তিন দফা দাবি পূরণে নির্ধারিত সময় বেঁধে দিয়ে রাত ২টায় সেখান থেকে ফেরেন তারা। এদিকে এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে জালালাবাদ থানায় অজ্ঞাতনামা এক মামলা দায়ের করেন। মামলার পর সন্দেহজনক ৩ জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে জানান জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হুদা খান।
রাতে গোলচত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেইট এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সড়ক ঘুরে প্রক্টর অফিসের সামনে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। বিক্ষোভকালে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ‘ছাত্র মরে প্রশাসন কী করে, আমার ভাই মরল কেন প্রশাসন জবাব চাই, জবাব চাই দিতে হবে নইলে গদি ছাড়তে হবে, বিচার বিচার বিচার চাই বুলবুল হত্যার বিচার চাই’ সেøাগান দিতে দেখা যায়। পরে প্রক্টর ইশরাত ইবনে ইসমাঈল তাদের সাথে কথা বলতে আসলে অবিলম্বে বুলবুল আহমেদের খুনীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা, নিহত বুলবুলের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করা, সমগ্র শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসকে নিরাপদ ঘোষণা করে অতিরিক্ত গার্ড নিয়োগ দেয়ার পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে শাবিপ্রবি প্রশাসনকে বুলবুলের পরিবার ও শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাওয়া এই তিনটি দাবি তুলে ধরেন তারা। বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেয়া একাধিক শিক্ষার্থী জানান, প্রক্টর ইশরাত ইবনে ইসমাঈলের প্রশাসনের তরফ থেকে লিখিত দেয়া হবে এমন আশ্বাসে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে সমাবেশ ছেড়ে উঠে যান তারা। একই দিন রাতে বুলবুল হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শাবি শাখা ছাত্রলীগ। গতকাল মঙ্গলবারেও শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন চলমান ছিল। একই সাথে গণমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বুলবুল হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ও জাতীয় ছাত্রদল। এদিকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন মাঠে বেলা সোয়া ১টায় ১ম জানাজা শেষে তাকে লাশবাহী গাড়িতে করে নরসিংদী নিয়ে যাওয়া হয়।
ছুরিকাঘাতের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হল সংলগ্ন ‘গাজী কালু টিলা’ থেকে বুলবুলকে উদ্ধারে এগিয়ে আসা শিক্ষার্থী আহনাফ ফাইয়াজ সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় গাজী কালু টিলাতে যাওয়ার সময় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ফাহিম নামের এক শিক্ষার্থীকে বুলবুলের ছুরিকাঘাতের বিষয়ে অবগত করে সহযোগিতা চান বাংলা বিভাগের এক ছাত্রী। এ সময় বুলবুলের সাথে ওই মেয়ের সম্পর্ক জানতে চাইলে মেয়েটি তাকে চিনে না বলে জানান। এরপর ফাহিম আহনাফসহ বাকিদের ডাকলে তারা এসে তাকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে এবং সেখানে তার পালস না পেয়ে পরক্ষণে ওসমানী মেডিক্যালে নিয়ে যান এবং সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
বুলবুলের বাড়ি নরসিংদীতে শোকের মাতম : মনোহরদী (নরসিংদী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ছাত্র নিহত বুলবুল আহমেদের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীতে চলছে শোকের মাতম। বুকের নাড়িকে হারিয়ে বুলবুলের মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বুলবুলের পরিবারকে সান্তনা দিতে বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন স্বজন, এলাকাবাসী ও বন্ধুরা।
নিহত বুলবুল আহমেদ নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের নন্দীপাড়া গ্রামে মৃত ওহাব মিয়ার ছেলে। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে বুলবুল ছিল সবার ছোট। তিনি ২০১৮ সালে নরসিংদীর আবদুল কাদিও মোল্লা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। পরে বুলবুল সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি হয়। বর্তমানে তিনি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরান হলের ২১৮ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
গত সোমবার সন্ধ্যায় বুলবুলের নিহত হওয়ার খবর বাড়িতে এলে পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরিবারের সদস্যদের কান্না ও আহাজারিতে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। আদরের ছেলেকে হারিয়ে মা ইয়াসমিন বেগম বিলাপ করছিলেন। কোনোভাবেই তাকে সান্তনা দিতে পারছিলেন না পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে নরসিংদী শহরের ভেলানগর বাসস্ট্যান্ডের পাশে ঈদগাহ মাঠে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে নিহত বুলবুলের পৈত্রিক ভিটা নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদীর নোয়াকান্দা গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।
অপরদিকে বুলবুল হত্যার বিচারের দাবিতে গতকাল বিকেলে নরসিংদী শহরের চিনিশপুর নন্দীপাড়ায় তার বাড়ির সামনে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসীসহ সর্বস্তরের জনগণ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন