শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

দ্বীন প্রচারে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার-১

তানভীর সাকী ভূঁইয়া | প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

মানবতার কল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য। বিজ্ঞানের উন্নতির এই যুগে দ্বীনি দাওয়াতের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে অল্প সময়ে ও কম কষ্টে বিশ্বের অসংখ্য মানুষের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া খুব সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে পৃথিবী এখন বলতে গেলে হাতের মুঠোয়। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা নিঃসন্দেহে মানুষের জীবনযাপনকে করেছে সহজ ও সাবলীল।
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃজনে ও রাত-দিনের পালাক্রমে আগমন ও প্রস্থানে বহু নিদর্শন আছে ঐসব বুদ্ধিমানের জন্য যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে (সর্বাবস্থায়) আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে (এবং তা লক্ষ্য করে বলে ওঠে) হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি এসব উদ্দেশ্যহীনভাবে সৃষ্টি করেননি। আপনি অনর্থক কাজ থেকে পবিত্র’ (সূরা আলে-ইমরান : ১৯০-১৯১)।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আর আমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন আসমান-যমীন, আগুন, পানি, মাটি, বাতাস ইত্যাদি ছাড়াও অগণিত মাখলূক। দুনিয়াতে যা কিছু আমরা মানুষের আবিষ্কার বলে মনে করি সেগুলো মূলত: আল্লাহ তাআলারই সৃষ্টি। কারণ, তিনিই একমাত্র স্রষ্টা। তিনি ছাড়া আর কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই । তিনিই কালের স্রষ্টা, হালেরও স্রষ্টা । সব যুগেই তামাম নবাবিষ্কারও তাঁরই সৃষ্টির সহায়তায় সৃষ্ট। আল্লাহ বলেন, ‘ তিনিই সেই সত্তা, যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছু ’ ( সূরা বাক্বারাহ : ২৯) ।
অণু-পরমাণু থেকে মহাজগতের যেখানে যা কিছু রয়েছে সবইতো আল্লাহরই সৃষ্টি। আল্লাহর সৃষ্ট উপাদানের গুণাগুণ, রহস্য অবগত হয়ে তা যথাযথ ব্যবহার করে মানুষ বিভিন্ন বস্তু তৈরি করে। সে স্রষ্টা নয়, আবিষ্কারক। সুতরাং এ যাবত বিশ্বে যত সব আবিষ্কার ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন যা কিছু হয়েছে এবং আরো যা কিছু হবে তা আল্লাহরই সৃষ্ট উপাদান দিয়েই হয়েছে এবং হবে।

ইসলামের সাথে বিজ্ঞানের কোনো বিরোধ নেই। তবে বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল, ইসলাম চিরন্তন ও অপরিবর্তনীয়। বর্তমানে প্রযুক্তির অপব্যবহারের কারণে সঠিক ব্যবহার ও এর সুফল আড়ালে পড়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির অপব্যবহারে অনেকের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে। প্রযুক্তির এই নেয়ামতগুলো আজ আযাবে পরিণত হচ্ছে। এখন প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তির কল্যাণে গোটা বিশ্বই এখন একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে। মুহূর্তে এক দেশের খবর চলে যায় অন্য দেশে। হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্থানরত মানুষের সাথে কথা বলা যায় অনায়াসে। পৃথিবীর এই তাবৎ আবিষ্কার, প্রযুক্তির এই সব উন্নয়ন যদি কল্যাণের কাজে ব্যবহৃত হয় তবে তা মহান আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ নেয়ামত হিসেবে গণ্য হবে। আর এজন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে বেশি বেশি করে দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তাহলে (মনে রেখ) নিশ্চয়ই আমার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর ’ ( সূরা ইব্রাহীম : ৭ ) ।

শুকরিয়ার সর্বনিম্ন স্তর হলো, আল্লাহর নেয়ামতকে সঠিক স্থানে ও সঠিকভাবে ব্যবহার করা এবং আল্লাহর নাফরমানিতে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা। এমন কোনো প্রযুক্তিপণ্য বা প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নেই, যেটা ইসলামের খেদমতে ব্যবহারযোগ্য নয়। প্রতিটি জিনিসকে ভালো কাজেও ব্যবহার করা যায়, আবার মন্দ কাজেও। দোষ কিন্তু জিনিসের বা প্রযুক্তির নয়। ব্যবহারকারীই মূলত দায়ী ।

আধুনিক বিশ্বে যোগাযোগের অন্যতম সহজলভ্য গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো মোবাইল। কিন্তু এই মোবাইলের মাধ্যমে এখন কথা বলার চেয়ে অপসংস্কৃতির প্রচার, ইসলামের অপব্যাখ্যা, নগ্নতাকে উসকে দেয়া, ব্ল্যাকমেইলিং, অশ্লীল কার্যকলাপ যেন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, টেলিগ্রামসহ আরোও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সামাজিক যোগাযোগের চেয়ে নারী-পুরুষের অবৈধ যোগাযোগ, নারী-পুরুষের অর্ধনগ্ন ছবি বা ভিডিও প্রকাশের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে, যা আমাদের সামাজিক অবক্ষয়কে ত্বরান্বিত করছে। এছাড়াও ইন্টারনেট প্রযুক্তি, রেডিও, টেলিভিশন, প্রিন্ট মিডিয়া তথা পত্রিকা, ম্যাগাজিন, ক্রোড়পত্র প্রভৃতির অপব্যবহার সমাজে ফাহেশা কার্যকলাপ ছড়ানোর পিছনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। অথচ অশ্লীলতা সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন : ‘যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, নিশ্চয়ই তাদের জন্য ইহকালে ও পরকালে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’ ( সূরা নূর : ১৯) ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Nadim Mostofa ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৪:২৫ এএম says : 0
বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আগমনের মূল উদ্দেশ্য ছিল মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কর্তৃক প্রেরিত দ্বিনের প্রচার ও প্রসার। নবী করিম (সা.)-এর যুগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যুগে যুগে ইসলামের মনীষীরা এই গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে ধর্ম প্রচারে গণমাধ্যম ও প্রযুক্তির মাধ্যমে দাওয়াত মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।
Total Reply(0)
Mulla Tashfin ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৪:২৬ এএম says : 0
আধুনিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমের একটি বিষয় হলো ফেসবুক।এর মাধ্যমে বিভিন্ন সময় প্রয়োজনীয় কথাবার্তা ও বার্তা আদান-প্রদান করা হয়। নতুন প্রজন্মের অন্যতম আকর্ষণ এই ফেসবুক। বর্তমানে এটি অত্যধিক জনপ্রিয় একটি প্রযুক্তি, যা উন্নত যোগাযোগ মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। মুসলমানরা যদি এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ভূমিকা রাখতে পারে, তাহলে এটি ইসলাম প্রচারে নতুন দিগন্তের সূচনা ঘটাবে।
Total Reply(0)
Ibrahim Khalil ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৪:২৬ এএম says : 0
নবী করিম (সা.)-এর যুগে দূরদেশে দাওয়াত প্রচারের মাধ্যম ছিল দূতের মাধ্যমে চিঠি প্রেরণ। এরপর পোস্ট অফিসের মাধ্যমে চিঠির দ্বারা বিভিন্নভাবে মুসলমানরা দূরদেশে ইসলামের দাওয়াত প্রচার করেছেন। বর্তমানে আধুনিক যুগে আমরা আরো একটি প্রযুক্তি সচরাচর ব্যবহার করে থাকি, সেটি হলো মেইল। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে একজন ব্যক্তি মুহূর্তের মধ্যে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে ইসলামের দাওয়াত সহজেই পৌঁছে দিতে পারেন।
Total Reply(0)
Habibul Nabi ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৪:২৬ এএম says : 0
আধুনিক প্রযুক্তির আরেকটি দিগন্ত হলো স্যাটেলাইট চ্যানেল। এর মাধ্যমে একজন দাঈ সারা বিশ্বের মানুষের মধ্যে ইসলামী দাওয়াত প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা রাখতে পারেন।
Total Reply(0)
Nagir Ahmed ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৪:২৭ এএম says : 0
বিভিন্ন প্রগ্রামের অডিও ও ভিডিও ধারণ করে তা বিভিন্ন গণমাধ্যমের দ্বারা সম্প্রচার করা
Total Reply(0)
Kafi Akond ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৪:২৭ এএম says : 0
ধর্ম প্রচার মহান আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত নবীদের একমাত্র মিশন। তাই বর্তমানে ইসলাম প্রচারে গণমাধ্যম ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে আরো বেশি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
Total Reply(0)
এস এম আমিনুল কবির সুমন ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:১৭ পিএম says : 0
শুকরিয়ার সর্বনিম্ন স্তর হলো, আল্লাহর নেয়ামতকে সঠিক স্থানে ও সঠিকভাবে ব্যবহার করা এবং আল্লাহর নাফরমানিতে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা। এমন কোনো প্রযুক্তিপণ্য বা প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নেই, যেটা ইসলামের খেদমতে ব্যবহারযোগ্য নয়। প্রতিটি জিনিসকে ভালো কাজেও ব্যবহার করা যায়, আবার মন্দ কাজেও। দোষ কিন্তু জিনিসের বা প্রযুক্তির নয়। ব্যবহারকারীই মূলত দায়ী । আমরা বিশ্বাস করি কিন্তু মানি না তাই আজ আমাদের এমন অবস্থা।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন